প্রদীপ চট্টেপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ মার্চ : কলেজ ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগে অভিযুক্ত বর্ধমানের তৃণমূল কাউন্সিলরকে পুলিশ নাকি খুঁজেই পাচ্ছে না। অথচ সেই ফেরার কাউন্সিলার বসির আহমেদ গত ১৭ মার্চ সশরীরে এসডিও অফিসে গিয়ে শপথ নেওয়ায় কাজ সেরে ফেলেছেন। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন বর্ধমান উত্তরের মহকুমাশাসক তীর্থাঙ্কর বিশ্বাস।এই খবর শনিবার চাউর হতেই ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।পাশাপাশি ছাত্রী তুহিনা খাতুনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনে কর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ।
বর্ধমান পুরসভার ভেটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করেন বসির আহমেদ ওরফে বাদশা । ওই ওয়ার্ডের বাবুরবাগ নতুনপল্লী এলাকায় বাড়ি কলেজ ছাত্রী তুহিনা খাতুনের ।২ মার্চ পুরসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়ে যাবার পর জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বসির আহমেদ ও তাঁর অনুগামীরা তুহিনা খাতুনের বাড়িতে চড়াও হয়ে। তারা তুহিনাকে মারধোরের পাশাপাশি তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ ওঠে । এই ঘটনার পরেই বিকালে পুলিশবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তুহিনা খাতুনের ঝুলন্ত মৃতদেহ ।তুহিনার মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার নব নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলার বসির আহমেদ ও তার বেশ কয়েকজন অনুগামীকে দায়ী করেন ।তাঁদের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় তুহিনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগ দায়ের করেন তুহিনার দিদি কুহেলি । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে পুর ভোটের সময়ে তুহিনাদের বাড়ির কাছের একটি দেওয়ালে অাঁকা হয় গাছে তিন মহিলার ঝুলন্ত দেহের ছবি ।ভোটে বসির আহমেদ জিতলে তুহিনাদের তিন বোনের ওই ছবির মত দশা হবে বলে এলাকায় প্রচার করা হয় ।
এই ঘটনা সামনে আসার পরেই দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে স্বোচ্চার হয় বাম ছাত্র,যুব ও মহিলা সংগঠন।তারা পথে নেমে বিক্ষোভও দোখায় ।পাশাপাশি তুহিনার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাডে বিক্ষোভ আন্দোলনে নামে কংগ্রেস । খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ অধীর চৌধুরী বর্ধমানে এসে তুহিনার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।শেষ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত পুলিশ ৪ মহিলা সহ ছয় জনকে গ্রেফতার করলেও গ্রেফতার হয়নি মূল অভিযুক্ত বসির আহমেদ। তিনি আদালতেও আত্মসমর্পণ করেননি, পুলিশও নাকি তাঁকে খুঁজেই পাচ্ছে না ।
এমন আবহের মধ্যেই গত ১৬ মার্চ বর্ধমান পুরসভার নবনির্বাচিত ৩৩ জন তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার শপথ নেন বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের কাছে। ফৌজদারি মানলায় অভিযুক্ত থাকায় ওইদিন বসির আহমেদ শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে হাজির হননি।কিন্তুু পুলিশ যে বসির আহমেদ কে খুঁজে পাচ্ছে না সেই বসির আহমেদ পরদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ সশরীরে দ্বিতীয়ার্ধে মহকুমা শাসকের চেম্বারে পৌছে যান।তিনি সেখানেই শপথ নেওয়ার পর্ব সেরে ফেলেন ।
ওইদিন বসির আহমেদের শপথ নেবার খবর
কেউ জানতে না পারলেও শনিবার তা জানাজানি হয়ে যায় । তার পরেই পুলিশ ও মহকুমা শাসকের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চরমে চরমে উঠে গিয়েছে ।
এই বিষয়ে বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, ’পুর আইন অনুসারে নোটিফিকেশনের ৩ মাসের মধ্যে শপথ নিতে হয় ।বসির আহমেদ ১৭ তারিখ তাঁর অফিসে এসেছিলেন । তাঁকে তিনি শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন কাউন্সিলর হিসাবে । কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে ।’ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানান । জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন জানান,ঘটনা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে ।
ফেরার কাউন্সিলারের শপথ গ্রহন নিয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র অভিযোগে বলেন,পুলিশ যাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না সেই কাউন্সিলর মহকুমা শাসকের কাছে গিয়ে শপথ নিয়ে ফেললেন। অথচ পুলিশ বলছে কিছুই নাকি তারা জানেন না।এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তদন্ত আশলে কেমন হচ্ছে । এইসবের মধ্যদিয়ে ছাত্রীর পরিবারের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে’। এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন,’বর্ধমান শহরের আইন শৃঙ্খলার রক্ষকের কাছে গিয়ে শপথ গ্রহন করে নিলেন ফৌজদারি মামলায় ফেরার অবিযুক্ত ।এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ’। যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাফ জবাব ,কারুর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলেও সে শপথ গ্রহন করতে পারে । এমন নজির আগে থেকেই রয়েছে ।কেস থাকা সত্ত্বেও বাম আমলে নিখিলানন্দ সর বিধায়ক হিসাবে রাজ্য বিধানসভায় শপথ নিয়েছিলেন ।।