এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৪ জুন : রাজ্যের বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি অভিযোগ তুলেছেন যে মমতা ব্যানার্জির লেখা বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে স্কুলগুলিতে । তিনি এটাকে ‘ভোটের আগে কালো টাকা সাদা করার নয়া ফর্মুলা’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন । আজ মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে লকেট চ্যাটার্জি এই বিষয়ে লিখেছেন,’আর এক তৃণমূল কেলেঙ্কারি ! মমতা ব্যানার্জির বাংলায় এবার স্কুল পড়ুয়াদের ওপরেও চলছে দুর্নীতির খেলা। একটি অদ্ভুত এবং লজ্জাজনক সিদ্ধান্তে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারী স্কুলগুলিকে জোর করে মমতা ব্যানার্জির লেখা ১৯টি বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে, তবেই মিলবে ১ লক্ষ টাকার অনুদান।’
তিনি লিখেছেন,’হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন — শিক্ষা ও পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য বরাদ্দ পাবলিক ফান্ড এখন ব্যবহার করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মপ্রচারমূলক বই বিক্রির জন্য। কোনো ছাত্র-ছাত্রীকেই মমতা ব্যানার্জির অসংলগ্ন “সাহিত্য” কিংবা তার অপেশাদার আঁকাআঁকির শাস্তি পেতে হবে না। এ এক কৌশল — করদাতাদের টাকা তৃণমূলের নির্বাচনী ভাণ্ডারে পাঠানোর জন্য ভুয়ো বই বিক্রি আর গোপন রয়্যালটির মাধ্যমে টাকা সাদা করার প্রকল্প। নির্বাচন আসতেই কি আবার কালো টাকা সাদা করার নতুন ফর্মুলা ?’
জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে গত ১৯ জুন পাঠানো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা অধিদপ্তরের কমিশনারের একটা মেমোর (735-6cA) কপিও শেয়ার করেছেন লকেট চ্যাটার্জি । ওই মেমোর বিষয়বস্তু হল : ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের গ্রন্থাগারের বই সংগ্রহের জন্য মুক্তিপ্রাপ্ত তহবিল’ । তাতে বলা হয়েছে,
১. ২৮.০২.২০২৫ তারিখের মেমো নং-৫৩৩(Sanc)-SED-১৮০৯৯/৪১/২০২০-PB SEC-Dept. of SE, অনুসারে ২০২৬টি সরকারি স্পন্সরকৃত/সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলের জন্য মোট ২০২৬০০০০০/- টাকা প্রতি স্কুলের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে ।
২. ২০২৪-২৫ অর্থবছরে, প্রতিটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত/সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুল ১ লক্ষ টাকা লাইব্রেরি অনুদান পেয়েছে। SED-এর যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জেলার জন্য ৫টি সেট সুপারিশ করেছে যার প্রতিটি সেটের মূল্যায়ন প্রায় এক লক্ষ টাকা এবং নিম্নলিখিত বিভাজন (সেট অনুসারে তালিকা সংযুক্ত) ।
তার মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর সেট দুটি শেয়ার করেছেন বিজেপি নেত্রী । সেটগুলিতে মমতা ব্যানার্জির লেখা এবং দেজ পাবলিকেশন দ্বারা প্রকাশিত বইয়ের তালিকা রয়েছে । তিন নম্বর সেটে ৪৫৪ থেকে ৪৭২ সিরিয়াল পর্যন্ত ১৮ টি বই রয়েছে । আর চার নম্বর সেটে ৪২৪ থেকে ৪৪২ সিরিয়ালে রয়েছে ২৮ টি বই ।
প্রসঙ্গত,সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলের গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির লেখা ১৯টি বই রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর । প্রথমে মমতার লেখা বই পৌঁছবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। বইয়ের প্রথম সেট পৌঁছবে আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, মালদহ, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে। এরপর দ্বিতীয় সেট পৌঁছবে, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার স্কুলগুলিতে। তৃতীয় সেট পৌঁছবে, হুগলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে। এরপর চতুর্থ সেট পৌঁছবে, ব্যারাকপুর, হাওড়া, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সব শেষে বই পৌঁছবে, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ওই সমস্ত বইগুলির মধ্যে যেমন মমতা ব্যানার্জির লেখা ‘মা’ ও ‘কথাঞ্জলী’র মত বই রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে ‘কন্যার চোখে কন্যাশ্রী’-এর মত সরকারি প্রকল্পের প্রচারমূলক বইও ।
লকেট চ্যাটার্জির কথায়,’বাংলার যুবসমাজের ভবিষ্যৎকে সহিংসতা, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়ার পরে, এবার সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে নগদীকরণ করছে মমতা ব্যানার্জি।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমরা চুপ করে থাকব না। আমরা শিক্ষা লুঠ হতে দেব না। আমরা বাংলার ভবিষ্যৎকে প্রচারপত্রে বিকিয়ে যেতে দেব না।’।

