এইদিন ওয়েবডেস্ক,রিয়াধ,১০ জুলাই : ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের অনান্য শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায় ও মুসলিমদের মধ্যে একটা প্রাচীর খাড়া করে দিচ্ছে । আর এই সন্ত্রাসবাদের পিছনে রয়েছে ইসলামের ধর্মগ্রন্থ “হাদিশ”-এর অপব্যবহার । তাই বিগত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে “হাদিশ”-এর ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চালছে বলে মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেছেন,সহি হাদিসগুলো খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তিনি ‘কিং সালমান কমপ্লেক্স’ নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন । সেই কমিটি মূল হাদিশের সঙ্গে পরবর্তীকালে সংযোজিত অংশগুলি চিহ্নিত করে বাতিল করা হচ্ছে । এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাদিস ডকুমেন্টেশন প্রজেক্ট’। যেগুলি জিহাদের নামে সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন দিতে হজরত মুহাম্মদের বাণী বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, বলে তিনি জানান ।
প্রসঙ্গত,হাদিস মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মগ্রন্থ। গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে হাদিসের অবস্থান কোরানের ঠিক পরেই । হাদিস হলো ইসলামের নবীর বাণী ও জীবনাচরণ। অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করে যে, কোরানের মতো হাদিসের প্রতিটি কথা নির্ভুল ও সত্য । কোরানে এমন বহু অস্পষ্ট, অসংলগ্ন ও দ্ব্যর্থবোধক আয়াত আছে যার ব্যাখ্যা হাদিসে লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে মনে করা হয় । তাছাড়া রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা ও প্রশ্নের উত্তর কোরানে পাওয়া যায় না, হাদিসে পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয় । সে কারণেই বলা হয় যে, কোরান ও হাদিসকে ইসলামের দুটি স্তম্ভ । সৌদি আরবে যে সংবিধান চালু রয়েছে তারও প্রধান ভিত্তি হল এই দুটি ধর্মগ্রন্থ ।
কিন্তু ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও ধর্মান্ধ মৌলবীরা নিজেদের স্বার্থে মূল হাদিসের সঙ্গে বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ জুড়ে রেখেছে বলে অভিযোগ । সেগুলি যাচাই- বাছাই করে মূল হাদিস পুনরুদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান । এর আগে গত বছর সৌদির সংবাদপত্র আল আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘ভিশন ২০৩০’ সম্পর্কিত আলোচনায় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন তিনি । তখন তিনি মন্তব্য করেন, কোরান ও হাদিসের স্পষ্ট বর্ণনা ছাড়া শরীয়া আইন বাস্তবায়ন করতে পারেবেন না ।
তিনি বলেছিলেন, অধিকাংশ হাদিস লেখকেরা নিজস্ব পদ্ধতিতে হাদিসের পরিবর্তন ঘটিয়ে সংরক্ষণ করেছেন যেমন বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্যরা । তবে হাদিসের শ্রেণিকরণের জন্য সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল হাদিসটি কি অনেকের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে নাকি বর্ণনাকারী কেবল একজন? শরীয়া ভিত্তিক আইন হিসেবে গ্রহণের জন্য এটাই মূল বিষয় । যখন আমরা মুতাওয়াতির হাদিস নিয়ে কথা বলি, এ ধরনের হাদিসগুলো সংখ্যায় কম তবে এগুলো বিশুদ্ধ । এই ধরনের হাদীসগুলো রাসূল সা. থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে । আবার আমরা যখন আহাদ হাদীস নিয়ে আলোচনা করি, এটিকেও নানাভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, দুর্বল, সঠিক ও প্রসিদ্ধ হাদীস। তবে এই হাদীসগুলো মুতাওয়াতির হাদীসের মতো প্রভাবশালী নয় ।
তিনি বলেছিলেন,খবর (Khabar)হাদিস হল এমন হাদীস, যা একজন একক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির কাছে এসেছে,নবীর কাছ থেকে অথবা একটি দল থেকে একটি দলে, তারপর একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে । ফলে এই প্রকার হদিসের থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে। ফলে এখানে হাদীসের বর্ণনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে। এই ধরনের হাদিসগুলোর সংখ্যা অনেক হলেও এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়, এই অর্থে যে এর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এটি বাধ্যতামূলকও নয় ।’
বিশেষজ্ঞদের মতে,সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এই উদ্যোগের ফলে আব্বাসীয় ও উমাইয়া যুগের রাজনৈতিক রঙ মাখা অনেক হাদিস বাতিল হয়ে যাবে। এতে অবশ্য ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বে একটি গঠনমূলক ও ইতিবাচক ধারণার বিস্তার ঘটবে এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে বলেও মনে করেন অনেকে । তবে সৌদি আরবের হাদিস সংস্কারের বিষয়ে পাকিস্তান,তুর্কির মত কট্টরপন্থী ইসলামি দেশগুলির তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷।