এইদিন ওয়েবডেস্ক,সাসারাম ও হাওড়া,০১ এপ্রিল : রামনবমী উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক হিংসার ঘটনা ঘটেছে । সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিহারের সাসারাম (Sasaram) এবং পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার কাশীপুর এলাকা । রাম নবমীর উৎসব পেরিয়ে গেলেও হিংসা থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না সাসারামে । এদিকে বৃহস্পতিবার রামনবমীর শোভাযাত্রায় পাথরবাজির পর শুক্রবার হাওড়ায় বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে । দুই রাজ্যের দু’জায়গাতেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে,শুক্রবার সাসারামে রাম নবমীর শোভাযাত্রা এবং জুমা একই দিনে ছিল । আর দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের সময় ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে । প্রাক্তন জেপি বিধায়ক জওহর প্রসাদ বলেছেন যে খিরকি ঘাটের হনুমান মন্দিরে হামলা হয়েছে । সাসারামের সহজলাল, বস্তি মোড়, চৌখান্দি, আদমখানি এবং সোনা পট্টির মতো এলাকাগুলি সর্বাধিক হিংসার খবর পাওয়া গেছে । বহু বাড়ি ও দোকানে আগুনও দেওয়া হয়েছে । সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্য-শহরের ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। এমনকি গোলাগুলিও চলে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । আহত হয়েছে বেশ কিছু মানুষ ।আহতদের মধ্যে স্থানীয়রা ছাড়াও পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকরাও রয়েছেন । সাসারামের এসডিও-র দেহরক্ষীর মাথা ফেটে যায়। হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনার কারণে সমগ্র সাসারাম জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকরের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । সাসারামের পার্শ্ববর্তী ঔরঙ্গাবাদ জেলা থেকেও পুলিশ বাহিনীকে আনা হয়েছে। এদিকে রবিবার(২ এপ্রিল ২০২৩) সাসারামে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জেলা সফর রয়েছে । তিনি সম্রাট অশোকের ছোট শিলালিপি দেখতে যাবেন । বলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ওই এলাকার কিছুটা অংশ দখল করে রেখেছে মুসলমানরা ।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার কাশীপুরে স্থানীয় ‘অঞ্জনী পুত্র সেনা’র উদ্যোগে রামনবমীর শোভাযাত্রা বের করা হলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে বিশেষ সম্প্রদায়ের একদল মানুষ আশপাশের বাড়ির ছাদ ও রাস্তা থেকে শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে ব্যাপক ইঁটপাটকেল ছুড়ছে । এমনকি দোকানপাট, বাইকে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে । শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন আহতও হয় বলে খবর । আক্রান্ত হয় সাংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও ।
অর্গানাইজ উইকলির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার পুলিশের উপস্থিতিতেই হাওড়ার সন্ধ্যাবাজার এবং শিবপুর এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলিকে নিশানা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ । ভিডিও শেয়ার করে ওই সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে,স্কালক্যাপ পরা বিপুল সংখ্যক লোককে সন্ধ্যাবাজার এলাকার একটি আবাসিক কলোনির দিকে ছুটে যেতে দেখা যায়। তারা ‘আল্লাহ হু আকবর’ স্লোগান দিতে থাকে এবং কলোনিতে বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালায় । আর সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও নীরব দর্শকের মতো নির্বিকারভাবে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । হামলাকারীরা লাঠি-পাথর দিয়ে সুসজ্জিত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে । রিপোর্টে বলা হয়েছে,বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং হাওড়ার এই সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ কর্মী সহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে । এদিকে হাওড়ার এই ঘটনায় বিজেপির ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ।
শুক্রবার রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন,’হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, হাওড়ার শিবপুরে রাম নবমীর শোভাযাত্রায় দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত রাম ভক্তদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে কথা বলে শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নিলাম এবং গুরুতর আহতদের কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে হাওড়ার সিপি অফিসে সিপি সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু নবান্নের নির্দেশে সিপি সাহেব আমাদের সাথে দেখা করতে চাননি। গতকালকের ঘটনার ভিডিওর সিডি কপি সিপি অফিসে জমা করে ঘটনায় দোষী দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি ।।