অদিতি গায়েন,দক্ষিণ ২৪ পরগণা,০৮ এপ্রিল :
শীতকালে শীতল রক্তের প্রাণী সাপ শীতঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘুম ভাঙতে শুরু করেছে। গর্ত থেকে তাদের আবির্ভাব শুরু হয়ে গেছে। এবার পাড়ায় পাড়ায় সাপ নিয়ে হাজির হবে সাপুড়েরা। সাপ খেলা দ্যাখানোর সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি কথার আড়ালে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বর্ষিত হবে অসংখ্য বুজরুকি। মাদুলি দিয়ে বলা হবে যার হাতে এটা থাকবে তার ধারে কাছে সাপ ঘেঁষতে পারবেনা। মানুষ সেটাই বিশ্বাস করবে। অথচ তার কয়েক ফুট দূরেই সাপুড়ের সাপগুলো ঘোরাফেরা করছে। ওগুলো নাকি পোষা। অন্ধবিশ্বাসে আক্রান্ত মানুষ সেটাই বিশ্বাস করবে। যুক্তি সেখানে মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে। এরকমই এক অন্ধবিশ্বাস হলো সাপের শঙ্খলাগা।
মানুষ বা মনুষ্যেতর – যেকোনো জীবের ক্ষেত্রে জৈব বা যৌন চাহিদা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই দেখা যাবে নিজের কাঙ্ক্ষিত নারীর জন্য পুরুষের মরণ বাঁচন লড়াইয়ের কাহিনী। মেটিং সিজনে মনুষ্যেতর প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এলাকায় ‘এক ফুল দো মালি’ হলে নারীর হৃদয় জয় করার জন্য পুরুষ শুরু করে লড়াই। এলাকার একটি স্ত্রী সাপের হৃদয় জয় করার জন্য দুই পুরুষ সাপের লড়াইকে আমরা শঙ্খলাগা বলি।
সাপের শঙ্খলাগা মানে কিন্তু স্ত্রী আর পুরুষ সাপের যৌনমিলন নয়। আসলে এটি হলো দুটি পুরুষ সাপের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই। হ্যাঁ, শঙ্খলাগা দুটি সাপই আদপে পুরুষ সাপ। মেটিং সিজনে এলাকা দখল এবং ওই এলাকার স্ত্রী সাপকে পাওয়ার জন্য দুটি পুরুষ সাপ নিজেদের মধ্যে লড়াই করে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই লড়াইয়ে কেউ আহত হয় না। দুটি পুরুষ সাপ একে অপরকে পেঁচিয়ে ধাক্কা দিয়ে উপরের দিকে উঠতে চেষ্টা করে। অনেকক্ষন চলতে থাকে এই লড়াই। দীর্ঘ লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটি সাপ ক্লান্ত হয়ে হার মেনে নেয় এবং সেই স্থান পরিত্যাগ করে। অপরজন বিজয়ী হয়ে জিতে নেয় সেই এলাকা এবং এলাকার স্ত্রী সাপটির হৃদয়। এটাই হলো শঙ্খলাগার প্রকৃত কাহিনী।
কিন্তু সাপুড়েদের বক্তব্য হলো দুটি সাপে শঙ্খ লাগলে সেটা দ্যাখা নাকি শুভ। অনেক সময় তারা বলে, শুধু তাই নয় শঙ্খলাগা সাপের স্পর্শ করা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করলে বা ঘরে রাখলে নাকি উন্নতি হয়। আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে যাই তাহলে তার উন্নতি হয়নি কেন? কেন সে নিষিদ্ধ সাপ খেলা দেখিয়ে জীবন ধারণ করে? উল্টে তাদের কথা বিশ্বাস করে অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়ে শঙ্খলাগার সময় সাপ দুটির ওপর কাপড় ফেলে দেয় এবং সেই কাপড় ঘরে রাখে।
সবাইকে অনুরোধ করব -যে সাপুড়ে শঙ্খলাগা সাপের স্পর্শ জনিত কাপড় চড়া দামে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছে তাকে জিজ্ঞাসা করুন- এই কাপড় থাকা সত্ত্বেও কেন তার উন্নতি হচ্ছেনা? কোথাও যদি আপনারা শঙ্খলাগা দৃশ্য দেখতে পান তাহলে দয়া করে তাদের ওপর কাপড় ফেলবেন না। এতে তাদের স্বাভাবিক কাজে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দিন। বরং নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাদের লড়াই উপভোগ করুন। বিজ্ঞানে থাকুন, যুক্তিতে থাকুন ।।
★দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের অদিতি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি অবলা প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, মানুষের মনে বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই তার কাজ মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছেন★