সঙ্কট মোচন হনুমান্ অষ্টকম্ হল মহর্ষি তুলসীদাস রচিত একটি স্তোত্র, যা ভগবান হনুমানের ঐশ্বরিক গুণাবলীর প্রশংসা করে এবং সমস্ত বাধা দূর করার ক্ষমতা বর্ণনা করে। এই স্তোত্রটি হনুমানের বিভিন্ন কিংবদন্তি ঘটনার উল্লেখ করে, যেমন বাল্যকালে সূর্যকে গ্রাস করা এবং পরে দেবতাদের দ্বারা বিনতি করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া প্রভৃতি ।
॥ সঙ্কটমোচন হনুমানাষ্টকম্ ॥
ততঃ স তুলসীদাসঃ সস্মার রঘুনন্দনম্ ।
হনূমন্তং তত্পুরস্তাত্ তুষ্টাব ভক্তরক্ষণম্ ॥ ১ ॥
ধনুর্বাণ ধরোবীরঃ সীতা লক্ষ্মণ সয়ুতঃ ।
রামচন্দ্রস্সহায়ো মাং কিং করিষ্যত্যুয়ং মম ॥ ২ ॥
ওঁ হনুমানঞ্জনী সূনো বায়ুপুত্রো মহাবলঃ ।
মহালাঙ্গূল নিক্ষেপৈর্নিহতাখিল রাক্ষসাঃ ॥ ৩ ॥
শ্রীরাম হৃদয়ানন্দ বিপত্তৌশরণং তব ।
লক্ষ্মণে নিহিতে ভূমৌ নীত্বা দ্রোণাচলং য়ুতম্ ॥ ৪ ॥
য়য়া জীবিত বা নাদ্য তা শক্তিং প্রকটীং কুরু ।
য়েন লঙ্কেশ্বরো বীরো নিঃশঙ্কঃ বিজিতস্ত্বয়া ॥ ৫ ॥
দুর্নিরীক্ষ্যোঽপিদেবানী তদ্বলং দর্শয়াধুনা ॥ ৬ ॥
য়য়া লঙ্কাং প্রবিশ্য ত্বং জ্ঞাতবান্ জানকী স্বয়ং ।
রাবণাংতঃ পুরেঽত্যুগ্রেতাং বুদ্ধিং প্রকটী কুরু ॥ ৭ ॥
রুদ্রাবতার ভক্তার্তি বিমোচন মহাভুজ ।
কপিরাজ প্রসন্নস্ত্বং শরণং তব রক্ষ মাম্ ॥ ৮ ॥
ইত্যষ্টকং হনুমতঃ য়ঃ পঠেত্ শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ ।
সর্বকষ্ট বিনির্মুক্তো লভতে বাঞ্চ্ছিতফলম্ ॥
গ্রহভূতার্দিতেঘোরে রণে রাজভয়েঽথবা ।
ত্রিবারং পঠেনাচ্ছ্রীঘ্রং নরো মুচ্যেত্ সঙ্কটাত্ ॥
॥ ইতি শ্রীগোস্বামিতুলসীদাস বিরচিতং শ্রীহনুমান্নাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ॥
হনুমান অষ্টকম বাংলায়:
জয় জয় মহাবীর হনুমান জয়।
ভক্তি শিক্ষা করি প্রভু তোমার কৃপায়।
বাল্যকালে দিবাকরে করিলে ভক্ষণ।
তাহে অন্ধকার হৈল এই ত্রিভূবন।।
ত্রাসেতে ত্রিলোক সব কাঁপে থর থরে।
কেন বা এমন হৈল সবে চিন্তা করে।
দেবগণ আসি তোমার মিনতি করিল।
রবি ছাড়ি জগতের কষ্ট নিবারিল।
কেহ জানিত না কপি নামটি তোমার।
সঙ্কট মোচন নাম হয় যে তোমার ॥ ১৷৷
কলির ত্রাস যে তুমি গিরি বাসকারী।
জন্মাবধি প্রভু তোমা সন্ন্যাসী নেহারি ॥
সহসা মহামুনি তোমা শাপ দিলে।
কি জানি কি বিচার তুমি করেছিলে।
পরম দয়াল তুমি জানে সর্বজন।
এ দাসের দুঃখ তুমি কর নিবারণ।।২।।
অঙ্গদেরে সঙ্গে লয়ে সীতা অন্বেষণে।
সন্ধান করিলে তুমি ফিরি বনে বনে।
পাহাড় পর্বতে তুমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া।
মহাসাগরের তীরে রহিলে বসিয়া।
বানরগণের তুমি দিলে আশ্বাসন।
কৃপা করি কর মোর সঙ্কট মোচন ॥৩॥
জয় রাম বলি তুমি এক লম্ফ দিলে।
আকাশ পথেতে তুমি লঙ্কায় চলিলে।
শেষে লঙ্কা রাজ্যে গিয়া দিলে দরশন।
করিতে লাগিলে তুমি সীতা অন্বেষণ।।
অশোক কাননে সীতা পাইলে দেখিতে।
আমারে রক্ষহ তুমি এই সঙ্কটেতে॥৪॥
রামের অঙ্গুরী দিয়া জানকীর করে।
প্রণাম করিয়া দাঁড়াইলে এক ধারে।
চেড়ীগণ মুখে রাবণ পাইল শুনিতে।
দূতগণে পাঠাইল বাঁধিয়া আনিতে ॥
সূক্ষ্ম দেহে মহাবীর তুমি দিলে ধরা।
আমার সঙ্কট প্রভু দূর কর ত্বরা ॥৫॥
অতঃপর বিরাট রূপ করিলে ধাকরণ।
যত বস্ত্র ছিল ল্যাজে বাঁধে দূতগণ।
তাহে অগ্নি জ্বালাইল রাবণ আদেশে।
তুমি জয় রাম বলি উঠিলে আকাশে।
সে আগুনে সারা লঙ্কা করিলে দাহন।
এ দাসের কর প্রভু সঙ্কট মোচন ॥৬॥
অশোক কাননে তুমি এলে পুনরায়।
লঙ্কা দগ্ধ এ সংবাদ জানালে সীতায়।
শুনিয়া জনকসুতা আনন্দিত হৈল।
বর দিয়া তোমার অগ্নি নিবারিল।
আম্রকুঞ্জে ঢুকি সব কৈলে খান খান।
মোরে তুমি এ সঙ্কটে কর পরিত্রাণ ॥৭॥
সীতার সন্ধান লয়ে ফিরিয়া আসিলে।
শ্রীরামের শ্রীচরণে সকলি জানালে।
অতঃপর করা হলো সাগর বন্ধন।
লঙ্কাপুরী প্রবেশিলে লয়ে সৈন্যগণ।।
মৃত সঞ্জীবনী আনি লক্ষ্মণে বাঁচাও।
কৃপা করি এ দাসের সঙ্কট ঘুচাও॥৮॥
জয় জয় মহাবীর হনুমান জয়।
ভক্তিরূপ শিক্ষা দিলে জগতে সবায়।
জয় জয় বজরঙ্গী চির ধন্য তুমি।
তোমার চরণে সদা প্রণত যে আমি।।
তুমি হও শ্রেষ্ঠ ভক্ত বিশ্ব চরাচরে।
রামরূপ দেখাইলে হৃদয় মাঝারে।
নিজ বক্ষ নিজে তুমি করি বিদারণ।
তার মাঝে রামরূপ করালে দর্শন।
হনুমানাষ্টক হেথা সমাপ্ত হইল।
জয় রাম জয় হনুমান ভক্তগণ বল।।

