এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,১০ ফেব্রুয়ারী : উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সন্দেশখালীর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাজাহানের একের পর এক কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসছে । সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । এটি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক বিবাহিত হিন্দু মহিলাকে বলতে শোনা গেছে, ‘পার্টির লোকেরা দেখে যায় কোন বাড়ির বউটা সুন্দর । বউ সুন্দরী ও বয়স কম হলে বউকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে হুমকি চলে আসবে । তুমি স্বামী হতে পারো কিন্তু বউয়ের উপর তোমার কোন অধিকার নেই । নিয়ে চলে যাবে, একদিনের জন্য নয়, রাতের পর রাত । যতক্ষণ না তাদের মন ভরবে রেহাই দেবেনা ।’অন্য এক হিন্দু বিবাহিত মহিলাকে বলতে শোনা গেছে, বাড়ির বউদের তুলে নিয়ে গিয়ে পার্টি অফিসে রাখতো এবং পরের দিন সকালে ছেড়ে দিত ।’
ভিডিওটি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে শেয়ার করে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ লিখেছেন,’শেখ শাজাহান আর তার সঙ্গীদের বহু ধর্ষণ, অত্যাচারের ঘটনা রয়েছে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মত ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের বহু কার্যকর্তারাও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। আমরা বারবার বলার পরেও মিডিয়া বিষয়গুলি সামনে আনেনি। বর্তমানে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছেন, মিডিয়া দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে অভিনন্দন জানাই।’ পাশাপাশি তিনি পলিটিক্যাল টেরোরিজম অফ টিএমসি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন ।
একই ভিডিও শেয়ার করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’ঘটনাগুলো শুনছি আর শিউরে উঠছি। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্বে মহিলারা রোজ অত্যাচারিত হচ্ছেন এই রাজ্যে। ধিক্কার ।’
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত উত্তপ্ত ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি এলাকা । এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্দেশখালি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় জমি রক্ষা কমিটি এবং আদিবাসীদের সংগঠন । বিক্ষোভের নেতৃত্বে মূলত মহিলাদেরই দেখা যায় । তাদের অভিযোগ যে শেখ শাহজাহান সহ এলাকার তৃণমূল নেতারা অত্যাচার চালায় । বেশ কয়েক বছর ধরে চাষের জমি ও খাল দখল করে একের পর এক ভেড়ি তৈরি করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা এবং সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি উত্তম সর্দার। তারা জমির মালিকদের প্রাপ্য দাম পর্যন্ত দেয়নি ।
এর আগে শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। আগুন ধরানো হয় তার বাড়ি এবং বাগানবাড়িতও । প্রচুর পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় । বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় ১৪৪ ধারা লাগু করা হয়েছে ।
গত ৫ তারিখে ইডির উপর শেখ শাহজাহানের রোহিঙ্গা বাহিনীর হামলার পর থেকে খবরের শিরোনাম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি এলাকা । তারপর থেকে শাজাহান বেপাত্তা হতেই গ্রামবাসীরা সাহস সঞ্চয় করে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে । শুক্রবার সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা । এদিকে সন্দেশখালির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবিস্তারে জানিয়ে এবং কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবী জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ।
ভাঙ্গড়ের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আরাবুল ইসলাম কে গ্রেফতারি প্রসঙ্গে এর আগে দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন, ‘শাহজাহান শেখ থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই পুলিশ আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। যদি রাজ্য সরকার সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিত তাহলে আজ এই ১৮ জন নেতা আজ ঘুরে বেড়াতো না। আমরা কেস করতে পারিনি, আমাদের কেস করতে দেওয়া হয়নি বলে সিবিআই কেস করেছে। কিন্তু তাতেও এই লোকগুলোর গায়ে হাত পড়েনি।’।