প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুন : এক আধ দিন নয় ,টানা এক মরসুম দামোদর থেকে অবাধে বালি লুট হয়ে যাবার পর হুঁশ ফিরলো ভূমি দফতরের কর্তাদের।বালি তোলার মরসুমের শেষ লগ্নে পৌছে একগুচ্ছ অবৈধ খাদান চিহ্নিত করে এফ আই আর দায়ের করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারীক। যে এফ আই আরে আবার লুটেরাদের কারুর নাম নেই।লুটেরারা অঞ্জাতপরিচয় বলে এফ আই আরে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই এফ আই আর লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু নয় বলে জামালপুরের বাসিন্দারা মন্তব্য করেছেন।
কাগজে কলমে জেলায় আগে ২৪৪ টি বৈধ বালির খাদান ছিল। এ বছর সেটা কমে ৮৬ টি হয়েছে। তবে যে সব খাদান চালু নেই, সেই সব খাদানের একাংশ থেকেই যে দেদার বালি লুঠ হচ্ছে সেটা ভুমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের এফ আই আর দায়ের থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে। চালু না থাকা খাদান থেকে বালি লুট হচ্ছে এমনটাই শুধু নয়,অন্য জেলার বৈধ খাদানের ই-চালান ব্যবহার করে অবৈধ খাদান থেকে তোলা বালি ট্রাকে বা ডাম্পারে বোঝাই করে সড়ক পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়াও জন্য পথে পথে পাসিং পার্টি ফিট করে রাখছে অসাধু বালি কারবারিরা।ছাড়াও জাল ই- চালান ব্যবহার করে বালি পাচার তো রয়েইছে।
এমনকি গ্রীন ট্রাইবুনালের রায় অমান্য করে সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত ঢরে নদ নদীর মাঝে ভারি যন্ত্র নামিয়ে বালি তোলাও অব্যহত রয়েছে।
মঙ্গলকোটের বাসিন্দাদের অভিযোগ আরো চমকে দেওয়ার মতো ।নদীর ভিতর পাম্প বসিয়ে ১০০ ফুট গভীর থেকে বালি তুলে নিয়ে এলাকার ভৌগলিক ভারসাম্য নষ্ট করা ও গ্রামগুলি বিপন্ন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে বলে মঙ্গলকোটের নবগ্রাম, পালিগ্রাম, মাঝিখাঁড়া ও পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা রাজ্যের মুখ্য সচিব, কেন্দ্রীয় দূষণ পরিষদকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক ইউসিন রিসিন ইসমাইল এর সাফাই
,নদ নদী থেকে আইনি ভাবে বালি তোলার খবর আসলেই অভিযান চালানো হয় । জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এফআইআরও করেছেন । জেলার ভূমি দফতর সূত্রে খবর ,বে আইনি ভাবে নদ নদী থেকে বালি তোলার বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মেমারি ব্লক ভূমি দফতর দুটি,মঙ্গলকোট আটটি, খণ্ডঘোষ দু’টি,গলসি দু’টি এবং বর্ধমান-১ ও ২ ছাড়াও জামালপুর ব্লক একটি করে এফআইআর দায়ের করেছে।জামালপুর ব্লকের তিনটে খাদান থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে এই বছরের মে মাসের ২৯ তারিখ ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক এফ আই আর দায়েয় করেছে ।
জামালপুরের বিএলএলআরও প্রত্যুষ বাগ পুলিশকে জানিয়েছে,ব্লকের তিনটি জায়গায় বেআইনিভাবে দামোদর থেকে বালি লুট হচ্ছে।
বিএএলআরও-র এফআইআর মোতাবেক ওই তিনটি জায়গা হল জামালপুরের জামুদহ,সারাংপুর ও শাহ-হোশেনপুর। বিএলআরও-র দাবি, সারাংপুরের খাদানের লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর । জামুদহর খাদানের লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি। আর বালি কারবারী জয়দেব গরাং শাহ-হোশেনপুরে যে বালি খাদানের লিজ পেয়ে ছিলেন তার মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল । নতুন করে এই সব খাদাের ইজারা দেওয়া হয় নি।বিএলএলআরও এও জানিয়েছেন,“২৫ মে তিনি এই তিনটি খাদান পরিদর্শন করার সময় দেখতে পান বেআইনি ভাবে খাদান গুলি থেকে বালি তোলা হচ্ছে। এমনটা দেখার পরেই তনি থানায় এফ আই আর দারের করেছেন ।
যদিও এইসব অভিযোগ দায়ের লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন জামালপুরের বসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য ,একটা খাদান থেকে টানা একটা মরসুম ধরে বালি লুট হয়ে চললো আর ভূমি দফতরের কর্তারা তার কিছুই জানতো না, এইকথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। বালি তোলার মরসুম শেষ হবার অন্তিম লগ্নে পৌছে বালি লুট নিয়ে জামালপুরের বিএলএলআরও-র থানায় এফ আই আর দায়েরের বিষয়টি গাফিলতির চুড়ান্ত নিদর্শন। এই বিলন্বিত দোধদয়ের পিছনে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে কি না,তার তদন্ত হওয়াও জরুরি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সারাংপুর ও দামুদহ গ্রামের বাসিন্দারা মন্তব্য করেছেন ।।