এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৮ ডিসেম্বর : ব্রিটিশ -ভারতীয় ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির প্রখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ (The Satanic Verses )ভারতে ফিরে এসেছে। নিষিদ্ধ হওয়ার ৩৬ বছর পর, বইটি এখন ভারতেও বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধী সরকার এই বইটিকে নিষিদ্ধ করেছিল । এখন এই বইটি সীমিতভাবে পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে দিল্লিতে বিক্রি হচ্ছে এই বই। এর স্টক বাহারিসন বুকসেলারের( Bahrisons Booksellers) নামে একটি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে । পিটিআই রিপোর্ট অনুসারে, বাহারিসন বুকসেলারের মালিক রজনী মালহোত্রা বলেছেন,’বইটি হাতে পাওয়ার কয়েকদিন হয়ে গেছে এবং এখন পর্যন্ত দারুণ সাড়া পাওয়া গেছে। বিক্রি ভালো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর কিছুটা ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহম্মদের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত। নিজের পূর্বের উপন্যাসের মত এতেও রুশদি জাদু বাস্তবতাবাদ ব্যবহার করেছেন এবং সমসাময়িক ঘটনা ও মানুষের সাহায্যে তার চরিত্রগুলো তৈরি করেছেন। বইয়ের নামটি তথাকথিত স্যাটানিক ভার্স বা শয়তানের বাণী-কে নির্দেশ করে। কারও কারও দাবী মতে কোরানের কিছু আয়াত শয়তান কর্তৃক অনুপ্রাণিত হওয়ায় দৈনিক প্রার্থনার সময় তৎকালীন মক্কার পেগান দেবতা, লাত, উজ্জা এবং মানাতের পূজা হয়ে গিয়েছিল। এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের বাণী বলা হয় । উপন্যাসটির যে অংশে শয়তানের বাণী সম্পর্কিত বিষয় আছে সে অংশটুকু প্রথম সহস্রাব্দের ইসলামী পণ্ডিত আল-ওয়াকিদি এবং আল-তাবরিরি-র সূত্র অনুসরণ করে লেখা হয়েছে।
বইটি প্রকাশের কিছু সময় পরে এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। এ কারণে রুশদি প্রায় ১০ বছর ব্রিটেন ও আমেরিকায় আত্মগোপনে কাটিয়েছেন । ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে, বইটি পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয় । ১৯৮৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে, সালমান রুশদি ও বইটির বিরুদ্ধে ১০,০০০ লোকের সমাগমে তীব্র প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে এক হামলায় ছয়জন বিক্ষোভকারী নিহত হয় এবং আমেরিকান এক্সপ্রেসের একটি অফিস লন্ডভন্ড হয়ে যায়।১৯৯১ সালের জুলাই মাসে এই বইটির জাপানি অনুবাদক হিতোশি ইগারাশিকে তার অফিসে খুন করা হয় । ২০২২ সালের ১২ আগস্ট, লেবানিজ -আমেরিকান নাগরিক হাদি মাতার একটি বক্তৃতার সময় মঞ্চে রুশদিকে ছুরিকাঘাত করেন। এ হামলায় তিনি এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
ভারতে, এই বইটির ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধী সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের জাতীয় সভাপতি মাওলানা মুফতি শাহাবুদ্দিন রাজভির মতে,’এই বইটি ইসলাম, নবী মুহাম্মদ এবং অনেক ইসলামিক ব্যক্তিত্বকে অবমাননা করেছে। এর বিষয়বস্তু এতটাই আপত্তিকর যে এটির পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। এই বইটিকে বাজারে আসতে দিলে দেশের পরিবেশ নষ্ট হবে। কোনো মুসলমানের এই জঘন্য বইটি কারো কাছে পড়া উচিত নয়।’ দোকানের দিকে তাকানোও উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি ।
নভেম্বরে, দিল্লি হাইকোর্ট বই আমদানিতে রাজীব গান্ধী সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি পিটিশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। আদালত বলেছিল,’যেহেতু কর্তৃপক্ষ প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞপ্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, এটি বিদ্যমান নেই বলে মনে করা হবে।’ সরকারী কর্মকর্তারা ১৯৮৮ সালের ৫ অক্টোবর, প্রজ্ঞাপন উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে আদালতের আদেশ আসে। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই বই আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুনানিকালে আদালত বলেন,’উপরের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি বিদ্যমান নেই তা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অতএব, আমরা এর বৈধতা পরীক্ষা করতে পারি না। রিট পিটিশন খারিজ হয়ে যায়।’ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে রুশদির প্রখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাস প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৯৮৮ সালে এটি বুকার পুরস্কার এর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল যদিও পিটার ক্যারির অস্কার অ্যান্ড লুসিন্ডার কাছে হেরে যায়।।