এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাদাউন,২০ মার্চ : উত্তরপ্রদেশের বাদাউনে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সাজিদ শেখ ও মোহাম্মদ জাবেদ নামে দুই মুসলিম ব্যক্তি । প্রতিবেশী ব্যক্তির ১২ ও ৬ বছরের দুই কিশোর পুত্রের শিরোচ্ছেদের পর সাজিদ শেখ নামে এক নরপশু তাদের রক্তপান করেছে বলে অভিযোগ । দুই ঘাতকের মধ্যে মূল অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাজিদ শেখকে এনকাউন্টারে খতম করেছে ইউপি পুলিশ । অন্যজন পলাতক । পুলিশ তার সন্ধান চালাচ্ছে । নিহত দুই শিশুর নাম আয়ূ্ষ ঠাকুর (১২) ও আহান (৬) । নিহতদের অপর ভাই পীযূষ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে ।
বেরেলির আইজি রাকেশ কুমার বলেছেন, বাদাউনের সিভিল লাইন কোতোয়ালি এলাকার বাবা কলোনিতে দুই শিশুকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ঘাতকরা পুলিশের উপর হামলা চালায় । আত্মরক্ষার জন্য পালটা গুলি চালায় পুলিশ । তখনই গুলি লেগে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয় । অন্যজনের সন্ধান চলছে । তিনি জানিয়েছেন এই প্রকার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারন জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ ।
জানা গেছে,মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ঘটনাটি ঘটেছে । বাদাউনের সিভিল লাইন কোতোয়ালি এলাকার বাবা কলোনিতে বসবাসকারী পেশায় ঠিকাদার বিনোদ ঠাকুরের তিন সন্তান আয়ূ্ষ,আহান ও পীযূষ তাদের বাড়িতে ছিল।সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ির পাশে হেয়ার সেলুনের মালিক সাজিদ ও জাভেদ বিনোদ ঠাকুরের বাড়িতে আসে । বিনোদ ঠাকুরের স্ত্রী সঙ্গীতা গেট খুললে সাজিদ জানায় যে তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা । পাঁচটি বাচ্চা ইতিমধ্যে মারা গেছে, তার অর্থের খুব প্রয়োজন। এরপর সঙ্গীতা তার স্বামী বিনোদ ঠাকুরকে ডেকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি স্বামীকে বলেছিলেন যে তার সাজিদকে টাকা দেওয়া উচিত কারণ যখন কঠিন সময় আসে তখন সবার সাহায্য করা উচিত। এরপর সাজিদকে ৫ হাজার টাকা দেন সঙ্গীতা ।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে সঙ্গীতা দেবী বলেছেন, ‘টাকা নিয়ে সাজিদ আমাকে চা করতে বলে । সে বলে, ‘ভাবি, বানাও, আমি উপরতলা থেকে আসছি’ । আমি বভেবেছিল যে সম্ভবত তার স্ত্রী হাসপাতালে রয়েছে এবং তাই সে অস্বস্তিতে থাকবে। তাই আমি বিষয়টি অতটা গুরুত্ব দিইনি । এরপর সাজিদ আমার বাচ্চাদের ছাদে ডাকে। বড় ছেলেকে কাছে রেখে ছোটকে জল আনতে বললেন আর মেজো ছেলে গুটকা আনতে বলে ।
সঙ্গীতাদেবীর বিবরণ অনুযায়ী,’সবার উপস্থিতিতে সঙ্গে করে আনা একটা ভোজালি দিয়ে আয়ুষ ও আহানের গলা কেটে ফেলে সাজিদ । পীযূষ বারান্দায় গেলে ছুরি নিয়ে তার পেছনেও ধাওয়া করে, কিন্তু পীযূষ কোনোমতে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার করে নিচে নেমে আসে। তার আওয়াজ শুনে সঙ্গীতা দেবী ও তার শাশুড়ি উপরে ছুটে গিয়ে দেখেন আয়ুষ ও আহানের শিরচ্ছেদ করা দেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে । সাজিদ রক্তাক্ত হাত নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল আর জাভেদ নিচে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। শিশুদের লাশ দেখে মা ও ঠাকুমা চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। এরপর প্রতিবেশীরা কোনওরকমে সঙ্গীতা ও পীযূষকে টেনে বের করে নিয়ে ভিড় জড়ো করে মান্ডি কমিটি পুলিশ চৌকিতে যান ।
জানা গেছে,হত্যাকাণ্ডের সময় সাজিদকে এতটাই নৃশংস ছিল যে হত্যার পর শুধু সাজিদের হাতই রক্তে রঞ্জিত ছিল না, তার মুখেও রক্ত ছিল, অনেকে দাবি করছেন সে শিশুদের গলা কেটে পান করেছিল। এদিকে এও ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সাজিদের হেয়ার সেলুনের দোকানে রাখা মালপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় । গোটা ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এসএসপি ও ডিএম। তারা আয়ুষ ও অহনের মৃতদেহ বের করে। লোকজন তাদের জানায়, অভিযুক্তরা রক্তাক্ত হাত নিয়ে পালিয়েছে। এই তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে, পুলিশ এলাকাটি ঘেরাও করে এবং ঘটনার মাত্র তিন ঘন্টা পরে, খবর আসে যে পুলিশ এনকাউন্টারে প্রধান অভিযুক্ত সাজিদকে হত্যা করেছে। শেকুপুর বনের কাছে এই এনকাউন্টার হয় ।সাজিদ পুলিশের ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করেছিল। এরপর পুলিশ পাল্টা গুলি করে তাকে হত্যা করে। এনকাউন্টারে ইন্সপেক্টর গৌরব বিষ্ণোইও আহত হয়েছেন। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে ।
এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা থাকায় আজ বুধবার ভোর থেকেই পুলিশ টহলদারি শুরু করেছে । এদিকে একাংশের মানুষ এই ঘটনাকে তন্ত্রবিদ্যার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে । পুলিশ জানিয়েছে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পিছনে তন্ত্রবিদ্যার কোন বিষয় ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।।