প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ জানুয়ারী : সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয়ের ইতিহাস তৈরি করে এখন ’বিশ্ববন্দিতা’ বঙ্গ কন্যা সায়নী দাস। বঙ্গের এই ’জলকন্যা’ এবার পেতে চলেছেন ভারতের সর্বোচ্চ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সন্মান।আগামী ১৭ জানুয়ারী ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মর্মুর হাত থেকে ‘তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহন করবেন সায়নী। ভারত সরকারের যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক এই সন্মাননার জন্য সায়নী দাসকে কে নির্বাচিত করেছে।সেই সংক্রান্ত পত্র ইতিমধ্যেই সায়নী দাসের বাড়িতে এসে পৌছেচে।বুলা চৌধুরীর পর বাংলার একমাত্র সাঁতুরু কন্যা সায়নী দাস’ই জাতীয় এই সন্মাননা লাভের জন্য বিবেচিত হলেন।সায়নীর এই সাফল্যে তাই গর্বিত বাংলা ও বাঙালি।
সায়নী দাসের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা পুরসভার অন্তর্গত বারুইপাড়ায়।রটনেষ্ট,ক্যাটালিনা ,ইংলিশ চ্যানেল, মালোকাই চ্যানেল ও কুক স্ট্রেইট চ্যানেল জয়ের পর সায়নী দাস সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জর করে ফেলেছেন।গত বছরের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করে সায়নী গোটা বিশ্বের সাঁতারু মহলে তাক লাগিয়ে দেন।তার পর থেকেই বঙ্গতনয়া সায়নী দাস কার্যত ’বিশ্ববন্দিতা’ বনে যান ।
সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক।মা রুপালীদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয়।তার পরথেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত ’জলকন্যা’ বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতীবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন।সেই যোগ্যতা কে কাজে লাগিয়ে বঙ্গতনয়া সায়নী রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন।এরপর ২০২২ সালে তিনি মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।শুধু ভারত নয়,এশিয়া মহাদেশের মহিলা সাঁতারু হিসাবেও সায়নী প্রথম মালোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করেন।আর গত বছরের এপ্রিল মাসে সপ্তসিন্ধুর এক সিন্ধু নিউজিল্যাণ্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল তিনি জয় করেন।এরপর ওই বছরেই সায়নী নর্থ চ্যানেল জয় করে ফেললেন। বাকি আর রয়েছে সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী জয়। তাহলেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলবেন বঙ্গ তনয়া সায়নী । তাঁর মাথায় উঠবে ’ওশেন সেভেন’ চ্যালেঞ্জের মুকুট।
আয়ারল্যান্ডে গিয়ে সায়নীর সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করাট কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না।সায়নীর কথা অনুযায়ী ,“আগের চারটি চ্যানেল জয়ের থেকেও নর্থ চ্যানেল জয়ের জন্যে তাঁকে কঠিন লড়াই চালাতে হয়েছিল।পরিস্থিতির প্রতিকুলতার কারনে ছয় মাইলের ক্ষেত্রে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় থাকতে হয়েছে।কখনও তিন ঘণ্টায় মাত্র ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পেরেছেন।আবার জলের টান ও জেলিফিসের জন্যেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে ।জলে এই ভাবে লড়াই চালিয়ে ১৩ ঘন্টা ২২মিনিটে ৪৮কিলোমিটার পথ সাঁতারে তবেই তিনি পঞ্চম সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়তে পারেন। এর আগে সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিটে ২৯,৫ কিলোমিটার দুর্গম জলপথ অতিক্রম করে কুক প্রণালী জয় করেন।“ বাকি আর রয়েছে সপ্ত সিন্ধুর ষষ্ঠ ও সপ্তম সিন্ধু সুগারু ও জিব্রালটার প্রণালী বলে সায়নী দাস জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ’খেলশ্রী’ সন্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে। এছাড়াও “মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড“ সায়নী পেয়ে গিয়েছেন।এবার সায়নী দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুর কাছ থেকে গ্রহন করবে ভারতের সর্বোচ্চ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সন্মান ’তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড’। সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাস বুধবার বলেন,“ভারত সরকারের যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ডের ২০২৩ এর জন্য আমার মেয়েকে নির্বাচিত করেছে।এই নির্বাচন সংক্রান্ত চিঠি ইতিমধ্যেই আমাদের কালানার বাড়িতে এসে পৌছেচে।সেই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে ’আগামী ১৭ জানুয়ারি বেলা ১১ টার মধ্যে দিল্লীর রাষ্ট্রপতির ভবনের ’গণতন্ত্র ভবনে’ সায়নীকে উপস্থিত হতে হবে । সেখানেই দেশের রাষ্ট্রপতি এই সন্মাননা পুরস্কার সায়নীর হাতে তুলে দেবেন। তার সাথে পুরস্কার বাবাদ ১৫ লক্ষ টাকা সায়নীকে দেওয়া হবে বলে ভারত সরকারের যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক কর্তৃক জানানো হয়েছে।
রাধেশ্যাম বাবু বলেন, বাংলার বুলা চৌধুরী ২০০২ সালে তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তার পর থেকে প্রায় ২৩ বছর বাদে বাংলা থেকে একমাত্র সায়নী দাস এই সন্মাননা পাচ্ছেন।সায়নীর বাবা হিসাবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের । আমার মতই গর্বিত কালনার সকল বাসিন্দারা”। সায়নীর মা রুপালীদেবী বলেন,“দেশের রাষ্ট্রপতি মহোদয়া আমার মেয়েকে সন্মানিত করবেন। আমি আর আমার স্বামী ,মা ও বাবা হিসাবে তার সাক্ষী থাকবো । এর থেকে গর্বের আর কি বা হতে পারে“। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান)আয়েষা রাণী এ জানিয়েছেন,“আমাদের জেলার কন্যা সায়নী দাস গোটা বাংলাকে গর্বিত করেছেন। সায়নী পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্ব । সায়নীর পাশে থাকবে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।।