এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৮ ফেব্রুয়ারী : কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির পর এবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আমেরিকান ধনকুবের জর্জ সোরোসকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন । নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনার জবাবে শনিবার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী ক্রিস ব্রাউনের সাথে আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় ৯২ বছর বয়সী সোরোসকে ‘বুড়ো, ধনী, জেদী এবং বিপজ্জনক’ বলে কটাক্ষ করেছেন জয়শঙ্কর । তিনি বলেছেন,ওই প্রকৃতির মানুষরা এখনও মনে করেন যে, তাদের ভাবনাই ঠিক এবং পুরো বিশ্ব সেই ভাবনা অনুযায়ীই চলবে । এই ধরনের লোকজন আসলে নিজেদের পছন্দের দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে বিনিয়োগ করেন ।’
জয়শঙ্কর বলেন,’তাদের পছন্দের প্রার্থী যদি জিতে চায়, তাহলে তার মতো লোকজন মনে করেন নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের ফল যদি তাদের মনের মতো না হয়, তাহলে তারা বলবে, সংশ্লিষ্ট দেশের গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ ।’ তিনি বলেন, ‘তবে মজার বিষয় হচ্ছে খোলামেলা সমাজের জন্য এসব করা হচ্ছে বলে তারা বোঝানোর চেষ্টা করলেও আদপে এটা তাদের ছলনা ।’
প্রসঙ্গত,বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ (টিইউএম) এ একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময়, সোরোস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্রনি ক্যাপিটালিজম প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সোরোস প্রধানমন্ত্রীকে আদানি গোষ্ঠীর কথিত কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগও করেছেন ।
এর প্রত্তুতরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি শুক্রবার বলেছিলেন, মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোসের বক্তব্য ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা । সোরোস প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অন্যান্য ভারতীয় নেতাদের টার্গেট করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন ।স্মৃতি ইরানি বলেছিলেন যে জর্জ সোরোস সেই একই ব্যক্তি যিনি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড ভেঙেছিলেন । তাকে অর্থনৈতিক যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সেই জর্জ এখন ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আক্রমণ করার ঘোষণা করেছেন । প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও টার্গেট করার ঘোষণা করেছেন তারা। জর্জ সোরোস ভারতে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন, যা ভারতের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে না, বিদেশি স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে । পাশাপাশি তিনি তিনি বলেছিলেন যে প্রতিটি ভারতীয়কে একত্রিত হওয়া উচিত এবং এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া উচিত ।
এরপর এদিন সিডনিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘সোরোস বলেছেন ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন না। তিনি এর আগে আমাদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মুসলমানের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনেছিলেন। যা অবশ্য ঘটেনি। এটা ছিল হাস্যকর এক মন্তব্য ।’
সোরেসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,’আপনি যদি এই ধরনের ভীতিকর কাজ করেন… লাখ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন। এটা আসলে সামাজিক কাঠামোর প্রকৃত ক্ষতি করে। কারণ সমাজের কেউ কেউ আপনাকে বিশ্বাসও করে । আর আপনি এই ধরনের কথা বলে সমাজে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন ।’ সোরোসের মন্তব্যকে ‘ইউরো আটলান্টিক প্রেক্ষাপটের আদর্শ’ বলে অভিহিত করেছেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের অবশ্যই বিতর্ক এবং কথোপকথনের সুযোগ রাখতে হবে। এসব মূল্যবোধ গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করে। কারণ বিশ্ব পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ এবং ইউরো-আটলান্টিক নির্ভরতামুক্ত হয়ে উঠেছে ।।