এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৪ অক্টোবর : ফের আক্রান্ত হল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ । এবার ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দূর্গাপূজো পূজো চলাকালীন প্যান্ডেলে হামলা চালালো কিছু কট্টরপন্থী লোকজন । প্যান্ডেল ও মূর্তি ভাঙচুর চালাতে শুরু করলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রুখে দাঁড়ায় । তখন গোলাগুলি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতিদল । গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ জন হিন্দু যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে । ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার অষ্টমীর দিন বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় । ঘটনার পর বাংলাদেশ হিন্দু ইউনিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি ট্যুইট বার্তা জানানো হয়, ‘২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্ককজনক দিন । অষ্টমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক পূজো মন্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে । হিন্দুরা এখন পূজোমন্ডপ পাহাড়া দিচ্ছেন । এই বিষয়ে আজ গোটা বিশ্ব নীরব । মা দূর্গা বিশ্বের সমস্ত হিন্দুদের রক্ষা করুন । কখনো ক্ষমা করো না ।’
জানা গেছে,বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি উসকানিমূলক পোস্ট করা হয় । ছবিসহ ওই পোস্টে দাবি করা হয় হিন্দুরা নাকি কোরানের অপমান করেছে । আর তার পরে কট্টরপন্থীরা বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংখ্যায় জমায়েত হয়ে দূর্গাপূজো মন্ডপে ভ্যাঙচুর চালাতে শুরু করে । চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় পূজো মন্ডপে হামলা করা হয় । ব্যাপক মারধর করা হয় পূজো উদ্যোক্তাদের । প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায় । গুলি লেগে ৩ পূজো উদ্যোক্তার মৃত্যু হয় । যদিও মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি স্থানীয় পুলিশ ।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় কি পোস্ট করা হয়েছিল যার জেরে এই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে ? এই বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর পূজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবুপ্রসাদ দত্ত বলেন, ‘বুধবার ভোর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নানুয়া দীঘির পাড়ের একটি পূজো মন্ডপে । মন্ডপ পাহাড়ার যারা ছিলেন তাঁরা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন । সেই সময় কেউ বা কারা কোরানের একটি কপি চুপি চুপি মন্ডপের মধ্যে রেখে দিয়ে পালিয়ে যায় ।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন জেলার এক পুলিশ আধিকারিকও । ওই পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘কট্টরপন্থীরা প্যান্ডেলে কোরান রেখে পালানোর আগে মোবাইলে কিছু ছবিও তুলে নেয় । তারপর ছবিসহ ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট করে । যার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে ।’ এই ঘটনার পিছনে বাংলাদেশ ন্যাশানাল পার্টি(বিএনপি) ও জামাত-এ- ইসলামির ক্যাডারদের হাত আছে বলে আশঙ্কা পুলিশের । তবে আশঙ্কা নয়,এই ঘটনায় বিএনপি ও জামাতকে কাঠগড়ায় তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ । এনিয়ে ছাত্রলীগের তরফ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারিও করা হয়েছে ।
এদিন বাংলাদেশ হিন্দু ইউনিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,যদি বাংলাদেশের মুসলিমরা না চায় তাহলে হিন্দুরা আর পূজো করবে না । কিন্তু হিন্দুদের প্রাণ অন্তত বাঁচান । এখনও সমানে আক্রমন চলে যাচ্ছে । অনুগ্রহ করে সেনাবাহিনীকে পাঠান । আমরা বাংলাদেশের পূজো মন্ডপগুলিতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি ।’ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ।।
ছবি : ট্যুইটার ।