প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ জানুয়ারী : লোকসভা ভোটের আগে ’ধর্মই“ যেন ভারতীয় রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। সেই মতই মোদীর গড়ে ’রাম মন্দির’ তো দিদির গড়ে ’জগন্নাথ মন্দির’ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।আর এমন আবহে সাধারণ মানুষ আবার যেন সবছেড়ে বেশীকরে ধর্মগ্রন্থ ’গীতায়’ আস্থাশীল হয়ে পড়ছেন।সেই আস্থার প্রকাশও ঘটেছে বই মেলাতেও।রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়া এবছরের পূর্ব বর্ধমান জেলা বইমেলায় দেদার বিক্রী হল ’ভগবদগীতা’।বই মেলায় অন্য বইয়ের চাইতে ’গীতা’ বেশী বিক্রী হওয়ার কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন মেলায় স্টল খুলে বসা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার লোকজন।তবে ’গীতা’ যাঁরা কিনলেন তাঁরা গীতার সারকথা বুঝে মোদী না দিদি,কার পক্ষে লোকসভা ভোটের বাক্সে আত্ম চেতনার প্রকাশ ঘটাবেন তা অবশ্য স্পষ্ট করেন নি। তাই এ নিয়ে দিদি ও মোদী, দুই শিবিরই একটু যেন চিন্তায় রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা বিভাগের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । সপ্তম বর্ষের সেই বইমেলা এবছর অনুষ্ঠিত হয় জেলার জামালপুর ব্লকে।রাজ্যের গ্রান্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ১১ জানুয়ারি সাত দিনের ওই বইমেলার উদ্বোধন করেন।মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ৪৭ টি বইয়ের স্টল ছাড়াও থাকে ১৭ টি খাবারের স্টল এবং কুটির শিল্পের ৪ টি স্টল । বইমেলার উদ্বোধনে করে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বইয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছিলেন । বলেছিলেন,’বই বিবেককে খুলে দেয়। তাই বই আমাদের সম্পদ।’ তা বলে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বই হিসাবে যে ’ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদভগবদগীতা’ চাহিদা বইমেলায় বেড়ে যাবে ,এটা বোধহও সবার কল্পনারও অতীত ছিল। আর সেটাই হয়েছে সপ্তম পূর্ব বর্ধমান জেলা বই মেলায় ।
নামি দামি বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার লোকজন নানা ধরণের বই নিয়ে বইমেলায় স্টলে বসেছিলেন।
মেলার সপ্তম অর্থৎ শেষ দিনে তাদের কাছে বই কেমন বিক্রী হল ,কি ধরণের বই বেশী বিক্রী হল ,
এই কথা জানতে চাওয়া হলে তারা যে অস্বস্তিতে পড়ে যান।পরে এক প্রকাশনা সংস্থার স্টলে থাকা কর্মী বিজয় সাহা বলেন,’পুরুলিয়ার বই মেলার চাইতেও পূর্ব বর্ধমান জেলা বই মেলায় বই কম বিক্রী হয় ।তবে এবারের পূর্ব বর্ধমান জেলা বই মেলায় তুলনামূলক ভাবে আমাদের স্টল থেকে ‘শ্রীমদভগবদগীতা’ বেশ ভালোই বিক্রী হয়েছে।পাশের গীতা প্রকাশনী থেকে আরও বেশী শ্রীমদভগবদগীতা বিক্রী হয়েছে। বাকি অন্যান বইয়ের বিক্রী তেমন হয় নি বললেই চলে ।
বই মেলায় ’ইসকন’ পাবলিকেশনও বইয়ের স্টল বসিয়েছিল।সেই স্টলে ইসকন সংস্থার পক্ষে থাকা বিনো তারন বলেন,’এই বই মেলায় এসে বুঝলাম এখন মানুষের ’শ্রীমদভগবদগীতা’ পাঠের আগ্রহ বেশ বেড়ে গিয়েছে। আমাদের স্টল থেকে সাত দিনে আড়াইশোর বেশী ’শ্রীমদভগবদগীতা’ বিক্রী হয়েছে ।’ একই ভাবে অশোক বুক এজেন্সির স্টলে থাকা লোকজন জানান ,তাঁদের স্টল থেকেও দু’শোর
বেশী শ্রীমদভগবদগীতা বিক্রী হয়েছে। অপর আরো একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে থাকা তরুণ দাস
জানান,তাঁদের স্টল থেকেও শ্রীমদভগবদগীতা, রামায়ন ও মহাভারত ভালোই বিক্রী হয়েছে। বাকি অন্যান বই কেনার ব্যাপারে মেলা প্রাঙ্গনে ভিড় জমানো সাধারণ মানুষজন তেমন আগ্রহ দেখাননি । তবে লাইব্রেরি গুলিই যা বই কেনেছে সেটা ঠিকই আছে । বইমেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমানো সাধারণ মানুষজন যে বই তেমন কেনেননি ,সেটা বই বিক্রীর হিসাব যাঁরা রেখেছিলেন তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে ,লাইব্রেরি গুলির বই কেনা বাদদিয়ে মেলার সব স্টল মিলিয়ে সাড়ে ছয় লক্ষের কিছু বেশী টাকার বই বিক্রী হয়েছে।
এদিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরনায় হওয়া পূর্ব বর্ধমান জেলা বই মেলায় ’শ্রীমদভগবদগীতা’ বিক্রীর বহর বেড়েছে জেনে যার পরনাই খুশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কার্যকর্তারা। সংঘের জেলা কার্যকর্তা শান্তি মাল বলেন,’বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ।চুরি,রাহাজানি,মারপিট, খুনোখুনি,বোমাবাজি, এ সব বাংলায় লেগেই বয়েছে।এই প্রেক্ষাপটে শান্তি পেতে ’গীতা’ পাঠ যে খুবই জরুরী, সেটা বাংলার মানুষ ভালভাবেই উপলব্ধি করেছেন।তাই ধর্মগ্রন্থ ’গীতা’ কেনা এবং ‘গীতা’পাঠ নিয়ে এখন বাংলায় উন্মাদনা বাড়ছে।দিন যত এগুবে ’গীতা’ কেনা ও ’গীতা’ পাঠ নিয়ে উন্মাদনা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে শান্তিবাবু দাবি করেছেন।
যদিও জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক আলোক মাঝি বলেন,’বই মেলা প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টল গুলি থেকে বই বিক্রী কম হয়েছে ,একথা ঠিক নয়। অলোক মাঝির মতে ,এটা বিরোধীদের মিথ্যাচার।’আর বইমেলায় ’গীতার’ বিক্রী বেশী হওয়া প্রসঙ্গে অলোক মাঝির সাফাই,’গীতা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ।সকল হিন্দু পরিবারেই গীতা ,রামায়ন,মহাভারত থাকে ।আমার বাড়িতেও আছে। যাঁদের নেই, তাঁরা তা বইমেলা বা অন্য কোন বইয়ের দোকান থেকে কিনে নেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক আগেও ছিলনা, এখনো নেই । শুধুমাত্র কিছু মেকি হিন্দুত্ববাদীরা বই মেলায় ’গীতা’ ’বিক্রী নিয়ে অবান্তর ধারণা পোষন করছে।।