প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ ফেব্রুয়ারী : হিন্দু সমাজ ও ভারতবর্ষ একই রুপ।ভারতকে শক্তিশালী করতে হিন্দু সমাজকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।রবিবার বর্ধমানের তালিতের সাই কমপ্লেক্স মাঠে অনুষ্ঠিত সংগঠনের প্রকাশ্য সমাবেশে থেকে এই বার্তাই দিলেন আর এস এস প্রধান মোহন ভাগবত।তিনি স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও দর্শনের কথা সভায় তুলেধরার পাশাপাশি দেশের উন্নতির জন্য সংঘে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
মোহন ভগবত তাঁর ভাষণে ভারত বর্ষের ভিত্তি ও ও বৈশিষ্ঠের কথা তুলে ধরেন । তিনি বলেন,’ভারত বর্ষ প্রাচীন দেশ। বিবিধতার মধ্যে একতা ভারতের বৈশিষ্ট্য। একতাই দেশের বৈশিষ্ট।হিন্দু সমাজ এবং ভারতবর্ষ এক রূপ।হিন্দু সমাজ ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সারাদেশে বিবিধতাকে এক সূত্রের মধ্যে নিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে।প্রাচীন কাল থেকেই ভারত সেরা দেশ।বার বার আমাদের দেশ ভারত বর্ষে বিদেশি আক্রমণ হয়েছে।এখন দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সমাজকে তৈরি হতে হবে। নানান সমস্যা আছে। সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। একতা বজায় রাখতে দেশ মাতার জন্য কাজ করতে হবে। ভোগ নয়, এর জন্য প্রয়োজন সংযম। শতবর্ষ পূর্ণ করল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ। সমাজের স্থিতি বজায় রাখতে সংঘ কাজ করে চলছে। দেশের উন্নতিতে সংঘের সংঘে যুক্ত হওয়ার তিনি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, ভারতবর্ষ কেবল এক ভুগোল নয়। ভুগোল ছোট বড় হয়। ভারত তখনই বলা যায়, যখন এক স্বভাব, চরিত্র বলা হয়। ভারতের এক স্বভাব আছে। ওই স্বভাব চরিত্রের সঙ্গে যারা পারবে না মনে করেছিল, তারা আলাদা দেশ তৈরী করেছে। স্বাভাবিকভাবেই যারা ছাড়তে পারেনি, তাদের ভারত নামের চরিত্র চাই। ভারত নামের স্বভাব আজকের নয়। ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালের নয়। তার থেকে বহু প্রাচীন। যখন সারা বিশ্বের ইতিহাসের চোখ খোলে, তখন এই ভুভাগে যাকে ইন্দো-ইরানি প্লেট বলা হয়। এই ভুভাগের বসবাস কারি এই চরিত্র পেয়েছে।
ভারতের স্বভাব বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিশ্বের বিবিধতাকে স্বীকার করে হিন্দু সমাজ চলে। সকলের নিজেদের বিশেষত্ব আছে। হিন্দুরা জানে যে বিশেষত্ব সেই সত্যের আবিস্কার, সেই সত্য একই।সৃষ্টির চরাচর জগতের জড় চেতনা, যা আগেও ছিল, আজও আছে, কালও থাকবে। যা বদলাবে না। বাকি সব বদলায়। ওই বদলানো এক অভিব্যাক্তি। তার মধ্যে বিবিধতায় একতা। হিন্দুরা এটা জানে,এইজন্য নিজেদের বিশেষত্তা শ্রদ্ধাপূর্বক চলে। সকলের বিশেষত্বাকে সম্মান করে। মানুষ্য ব্যক্তির জন্য বাঁচে। ব্যক্তি পরিবারে জন্য, আর পরিবার সমাজের জন্য, সমাজ মানবতার জন্য। ব্যক্তি বড় না সমাজ বড় এই বিবাদ এখানে নেই। সকলের নিজের স্বত্বা আছে। নিজের স্বত্তা অন্যজনের স্বত্তাকে বড় করার কাজে আসে। আমি বড় তো, অন্যকে বড় করবো। এটাই বাস্তবিক বড়াপন্ন।
আরএসএস আসলে কি তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংঘ প্রধান মোহন ভগবত বলেন,’আমাদের এখানে রাজা মহারাজার কথা চলে না।তবে সেই রাজাকে মনে রাখে, যে রাজা পিতৃস্বত্ব পালনের জন্য ১৪ বছর বনবাস স্বীকার করেছিলেন। আর তার ভাই রাজার কথা মেনে চলে তার দাদার পাদুকা নিয়ে রাজত্ব করেছে। ১৪ বছর পর দাদা ফিরে আসার পর সেই রাজত্ব সঠিকভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে।,ভগবতের কথায়,আমাদের এখানে ধনী প্রচুর। কিন্তু ধনীর কথা চলে না। সেই ধনীর কথা চলে, যে গাড়ী, সম্পত্তি সতন্ত্রতার জন্য অর্পন করেছে। কে কত রোজগার করে তার মহত্ব নেই। গোটা ভারতবর্ষে এক ব্যক্তির নাম চলে, যে এক পয়সা রোজগার করেনি। যে তার মা’র চিন্তার জন্য খেতড়ির রাজার মানি অডার করবে এরকম চিন্তা করেনি। সেই স্বামী বিবেকানন্দের নাম সারা ভারতবর্ষে চলে। এই চরিত্র আছে তো ভারতবর্ষ আছে। এই চরিত্র নেই তো ভারতবর্ষ নেই। এই চরিত্র পরম্পরা যার কাছে এসেছে, এই চরিত্র প্রথা দিক্ষিত হয়েছে, নির্বাহ করে, ওই সভ্যতা প্রাচীন সময় থেকে আজও পর্যন্ত আছে। এরকম চরিত্রকে আজ ভারতবর্ষে হিন্দু সমাজ বলা হয়।
হিন্দু সমাজ ও ভারতবর্ষ একই রূপ বলে সংঘ প্রধান দাবি করেন।। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ’এই হিন্দু সমাজ সারা দেশের বিবিধতাকে একই সুত্রে চালানোর জন্য ভারতীয় সংস্কৃতির আচরন প্রয়াস করে।’ ভগবতের কথা অনুযায়ী,পড়া লেখা বিদ্বান তাকেই বলে, যারা মহিলাকে মা’য়ের চোখে দেখে। পরের ধনসম্পত্তির লোভ নেই। বিনা রোজগারে খায় না। যে কথায় অন্যজন দুঃখ পায়, সেরকম কথা বলে না। এরকম আচরন কেউ করার চেষ্টা করে। কেউ পারে কেউ পারে না। এটাই মানত্যা। এটাই ভারতবর্ষের পরিচিতি।
কোন দেশের সমাজের গুণস্বত্তা, সেরকম দেশ গঠন করে বলে মোহন ভগবত এদিন জানান। সাথে সাথে তিনি এও বলেন,“শাসক হয়, মহাপুরুষ হয়, নেতা হয়। যদি তারা নিজের নিজের কাজ করে তাহলে সহায়ক হতে পারে।দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সমাজ তৈরী হতে হয়। সঙ্ঘ নির্মাতা ডঃ হেডগাওয়ার নিঃস্বার্থ বুদ্ধিতে সব কাজ করে দেখেছেন৷ সুভাষবাবু, গান্ধীজি, সাভারকর, আম্বেদকর সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিদেশীরা বার বার আমাদের দেশ আক্রমণ করেছে। বার বার বিশ্বাসঘতকতা হয়। তাই তার জন্য সমাজকে শুধরানো দরকার।ইংরেজরা আসার বহু আগে আমাদের এক দেশ। বিবিধতা আমাদের এখানে অনেক পুরোনো। তারপর সংস্কৃতি সভ্যতা এক চিরন্তন। এখানের রক্তে রন্ধে হিন্দু আছে। এই সংস্কৃতির কারনের হিন্দু বলা হয়। এটাই আমাদের পরিচিতি। এই হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। এর জন্য তিনি সংঘের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।।

