এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,১০ নভেম্বর : সুদানে গণহত্যার প্রমাণ লুকাতে লাশ কবরস্থ না করে পুড়িয়ে ফেলছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। সুদানের দারফুরে গণহত্যার পর এই অমানবিক চিত্র তুলে ধরেছে দেশটির একটি চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস নেটওয়ার্ক । রবিবার সংস্থাটি জানায়,গত ২৬ অক্টোবর রক্তাক্ত হামলার পর শহর দখলের পর আধাসামরিক বাহিনী সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশেরের রাস্তা থেকে ‘শত শত মৃতদেহ’ তুলে নিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কৃষ্ণাঙ্গদের নিজেদের কবর খোঁড়া করিয়ে সেখানে জীবন্ত কবর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এই মর্মান্তিক দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । সংস্থাটি বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর অপরাধ গোপন বা পুড়িয়ে প্রমান মুছে ফেলা যাবে না।
এল-ফাশেরে যা ঘটেছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং আরএসএফের একটি পূর্ণাঙ্গ গণহত্যার আরেকটি অধ্যায়। মৃতদেহ বিকৃত করা, পুড়িয়ে ফেলা বা গণকবর দেওয়া আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অনুমান, আরএসএফ এই অঞ্চলের শেষ সুদানি সামরিক ঘাঁটিটি দখল করার পর, এল-ফাশেরে আড়াই লাখের বেশি জনসংখ্যার মধ্যে ৮২ হাজার মানুষই পালিয়ে গেছে। সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। অনেক বাসিন্দা এখনও আটকা পড়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার হিবা মরগান জানান, আল-ফাশের থেকে উত্তরে আল দাব্বার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসা অনেক লোক রাস্তায় মারা গেছে। কারণ, তাদের কাছে খাবার বা জল ছিল না, অথবা গুলিবর্ষণের কারণে তারা আহত হয়েছিল।মরগান বলেন, পালিয়ে আসা লোকজন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তারা আরএসএফ যোদ্ধাদের পোস্ট করা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও থেকে তাদের স্বজনদের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছেন। এই গোষ্ঠীটি শহর দখল করার পর থেকে চরম সহিংসতার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ।
আরএসএফ, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে, এর উৎপত্তি মূলত আরব, সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়া জানজাউইদ থেকে, যাদের বিরুদ্ধে দুই দশক আগে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০০৩ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে জাতিগত হিংসার প্রচারণায় আনুমানিক তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের সিলভাইন পেনিকাড এল-ফাশের থেকে পালিয়ে তাওইলা শহরে আসা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পালিয়ে আসা অনেকেই বলেছেন যে, তাদের গায়ের রঙের কারণে হামলা চালানো হয়েছে। পেনিকাড বলে, আমার কাছে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশ ছিল লোকজন যখন তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিলেন তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। কেবল কালো হওয়ার কারণে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এল-ফাশেরের প্রভাবশালী জাতিগত গোষ্ঠী জাঘাওয়া ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে।
এল-ফাশেরের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান ওসমান বলেন, কালো ত্বকের বাসিন্দারা, বিশেষ করে জাঘাওয়ার বেসামরিক নাগরিকরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘জাতিগত অবমাননা এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, যদি আপনার ত্বক ফর্সা হয়, তাহলে তারা আপনাকে ছেড়ে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণরূপে জাতিগত।।

