এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৮ অক্টোবর : প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশের প্রবাহ অব্যাহত আছে । ঠিক কি পরিমান মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ভারতে ঢুকে পড়ছে তা অজানা । তবে অনুপ্রবেশকারীদের ধরা পড়ার দু’একটা ঘটনায় যে সংখ্যা সামনে আসছে তা খুবই উদ্বেগের । গত মে মাসে দিল্লি পুলিশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ হয়ে ভারতের বিভিন্ন অংশে পাচারের একটি চক্রের ফাঁস করে । পুলিশ নূরে আলম ও আব্দুল গাফ্ফার নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল । গ্রেফতার করা হয় এক রোহিঙ্গা দম্পতিকেও । তারা হিন্দু পরিচয় ব্যবহার করছিল । স্ত্রী রাবিয়া নিজেকে ববিতা বলে পরিচয় দেয় এবং স্বামী তোহা নিজেকে পরিচয় দেয় শুভজিৎ দাস নামে । এরপর গত জুন মাসে এনআইএ একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারের র্যাকেট ফাঁস করে । যার মাস্টারমাইন্ড হল জলিল মিয়া । আসামের ঘটনা । জলিল মিয়া প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ২০০-এর অধিক রোহিঙ্গাকে আসামে নিয়ে এসে ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতিতে পারদর্শী করতে রীতিমতো প্রশিক্ষণও দিচ্ছিল। শুধু তাইই নয়, সে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের ভুয়া পরিচয়পত্রও তৈরি করে দিত এবং বিভিন্ন রাজ্যে পাঠিয়ে দিত বসতি স্থাপনের জন্য ৷ এছাড়া অন্য একটা পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত,বিগত ৯ মাসে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের (এনএফআর) রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) বিভিন্ন রেলস্টেশন জুড়ে চেকিংয়ের সময় বাংলাদেশ থেকে ২৫৬ জন মুসলিম অনুপ্রবেশকারী এবং ১৮ জন ভারতীয় এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে ৷
মূলত ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত কাঁটাতার সুরক্ষা না থাকার ফলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই বিএসএফের নজর এড়িয়ে ভারতে ঢুকে পড়তে সক্ষম হচ্ছে । এক্ষেত্রে তারা করিডর হিসাবে ব্যবহার করছে পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা ও ওড়িশাসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে । আর সেই মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা বিভিন্ন রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ ভুয়ো পরিচয়পত্র বানাচ্ছে এবং বাকিরা রাজনৈতিক দলের মদতে সহজেই ভারতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ । পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের একজন বিধায়ক এবং হাওড়ার একজন তৃণমূলের নেত্রীকে প্রকাশ্যে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটারকার্ড করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে । যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত মারাত্মক প্রবণতা।
গত ২১ শে সেপ্টেম্বর, জিআরপি নিয়মিত চেকিংয়ের সময়, আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনে বাংলাদেশ থেকে ১১ জন মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনো নথি দেখাতে পারেনি। তারা এজেন্টদের সহায়তায় দেশে প্রবেশ করেছে বলেও জানিয়েছিল । তারা আরও জানিয়েছে যে তারা মুম্বাই এবং আহমেদাবাদে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল ।
আরপিএফ রেলওয়ে স্টেশন এবং ট্রেনে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিরীক্ষণ ও প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছে। রেলের নিরাপত্তা কর্মীরা যে কোনও অবৈধ কার্যকলাপ সনাক্ত করতে এবং রিপোর্ট করার জন্য সতর্কতা বজায় রাখে, যা নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য রেলওয়ের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে।
অন্য একটি অভিযানে, আসাম পুলিশ ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর নজরদারি জোরদার করেছে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে চার বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে। মোহম্মদ জাহাঙ্গীর, নুকাদিয়া বিবি, রুমানা এবং মোহম্মদ হুসেন হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের অবিলম্বে সীমান্তের ওপারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এত কড়াকড়ির পরেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা থেমে নেই । বিজেপি শাসিত আসাম ও ত্রিপুরায় পুলিশ সক্রিয় থাকায় প্রায় দিনই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায় । তবে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের মধ্যে তেমন সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায় না বলে অভিযোগ । যেকারণে গোটা দেশে অবিলম্বে এনআরসি লাগু করার দাবি উঠছে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলির বাধার কারনে এনআরসি লাগু করার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ।।