পুরুষ মানুষকে নিয়ে
যতই তুমি মন্দ বাঁকের উপকথা শোনাও না কেন,
যতই বলো পুরুষ দেহ লোভী, ধোঁকাবাজ
আদতে কি তাই?
পুরুষ মানুষ শুধুই দেহ চায়,
তুমি দেহ চাও না?
পুরুষ মানুষ ধোঁকা দেয়,
তুমি ধোঁকা দাও না–
বুকে হাত দিয়ে বলতে পারো?
পুরুষ যদি শুধু শরীর চাইতো
তাহলে পিতারে স্নেহ
ভাইয়ের ভালোবাসা
স্বামীর দায়িত্ববোধ
বন্ধুর ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে
বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া–
এগুলোকে কি বলবে?
কোন্ মূল্যায়নে পুরুষকে বিশেষিত করবে?
একদিকে প্রেমিক-পুরুষ যেমন
নারীকে কামনা করে,
তেমনি নারীর বিপদে কিছুর তোয়াক্কা না করে
সে মানুষটি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে,
নিজের বসন খুলে
তোমাকে সম্ভ্রমের চাদরে মুড়ে রাখে
তাকে তুমি কি বলবে
ধর্ষক, দেহ লোভী, শট না ধোঁকাবাজ?
নারীর ভালো থাকা নিয়েই
যেখানে পুরুষের যত সংগ্রাম– বাকবিতণ্ডা,
রক্ত ঘাম করার প্রয়াস,
কঠিন মৃত্যুকে পাথেয় করে
সেখানে পুরুষ চিরকালই নারী ভক্ষক কিংবা ধর্ষক
নাম নিয়েই বেঁচে থাকলো,
পথ হারালো!
তার ভালো দিকগুলোকে অকৃতজ্ঞতা দিয়ে
চাপা দিয়ে
অপরাধীর তকমা দেওয়াটা
একটা রুচিহীন প্রয়াস নয় কি?
পুরুষ মানুষ কাঁদে না
পুরুষ কাঁদতে জানেনা
ওদের বুকে পাথরের একটা হৃদয় আছে–
কে বলেছে– পুরুষ কাঁদে না?
–পুরুষও কাঁদে,
চাপা কান্নায় ভেঙে যায় তার বুক পাঁজর,
প্রতিনিয়ত শিকারী জীবন নিয়ে
সব কান্না মুছে ফেলতে হয়,
কান্না মুছে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে হয়,
তোমার অভিমান, অভিযোগ, অসন্তোষ, আবদার
সব মেটানোর দায় তাকে নিতে হয়
নিজের সব অভিমান, বেদনা ভুলে;
তোমাকে আড়াল করে শার্টের হাতায়
ঘাম আর অশ্রু মুছতে হয়।
মুছে ফেলতে হয় হাসির আড়ালে থাকা
শরীরের ক্লান্তি আর ঘামের দুর্গন্ধ,
তুমি কষ্ট পাবে বলেই
হাজারো কষ্ট বুকে চেপে রেখে!
তুমি কি পারবে পুরুষের মতো করে
দরাজ বুকে এমনি করে ভালবাসতে?
এমনি করে তোমার কষ্টগুলো বুকে চেপে রাখতে?
যদি পারতে–হয়তো
পুরুষ মানুষের ভেতরে থাকা কুকুরটাকে,
ভেতরে থাকা শিশুটাকে,
লালন করা প্রকৃতি টাকে
তুমি সহজে দেখতে পেতে!
তোমার এতটুকু ভালোবাসা পেতে
একটা পুরুষ মানুষ কতটা
নিজেকে বিপন্ন করতে পারে,
মাথা ঝোঁকাতে পারে,
কতটা বাধ্য হতে পারে,
কতটা শিশু হয়ে উঠতে পারে,
আবার কতটা অবাধ্যও হতে পারে।
যদি তুমি বুঝতে
হয়তো তাকে অকৃতজ্ঞ বা ধোঁকাবাজ
বলার দুঃসাহস তোমার হতো না।
দোষ দিতে নিজের ব্যর্থতাকে,
আর নিজেকে একবার বদলে নিতে।
সব পুরুষ মানুষকে শ্লোক আওরানোর মতো করে
খারাপ বলা যায় কি–
কতিপয় অমানুষের জন্য?
নারী ও পুরুষ কখনো
একে অন্যের শত্রু নয়,
বরং পরিপূরক।
উভয়ের মেলবন্ধন ছাড়া সৃষ্টি অচল,
পঙ্গু জীবন, অপরিণত চাওয়া পাওয়া।
তাই পুরুষকে অপরাধী তকমা দেওয়ার আগে,
দেহ লোভী বা ধর্ষক বলার আগে
তোমার ভিতরে থাকা বিশেষ পুরুষ সত্তাকে
একবার জিজ্ঞেস করে দেখো
নারী হয়ে তুমি– কতটা নির্দোষ?
কতটা নিঃস্বার্থ?
তোমার দ্বারাও কিভাবে, কতোবার নিপীড়িত হয় পুরুষ মানুষ?
সেটা বুঝতে। সত্যিই বুঝতে!!