ছোট্টবেলায় টিভিতে রামায়ণের সীতার পাতাল-প্রবেশ দৃশ্যটা দেখে খুব খুব কেঁদেছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিল লব ও কুশের কথা,ওরা ওদের মাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে?– মনের মধ্যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। আমি মামারবাড়িতে থাকলেও, ইচ্ছে করলেই মা’র সাথে দেখা করতে পারতাম, মা আসতো আমি যেতাম; কিন্তু ওরা তো আর কোনদিনও ওদের মাকে দেখতে পাবে না—
এটা ভাবতে ভাবতে দাদুর ঘরে বিছানার উপর চুপচাপ বসেছিলাম। দাদু এসে জিজ্ঞেস করলো,”এখানে একা এভাবে বসে আছিস কেনো”?
আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলাম;
দাদু জিজ্ঞেস করেছিলো,”কি হয়েছে”?–
আমি বলেছিলাম,”খুব কষ্ট হচ্ছে লব-কুশের জন্য। ওরা আর ওদের মাকে কোনদিনও দেখতে পাবেনা। দাদু সীতা এমন কেন করলো? কেমন মা কোন দয়ামায়া নেই?”—
দাদু বলেছিল,”এই সংসার জীবন বড়ই জটিল, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের এই গোলকধাঁধা, মানুষের এই যন্ত্রণা এখন বললেও তুই বুঝতে পারবিনা। তুই মেয়ে,যেদিন মা-মাসি-দিদাদের মতো বড় হবি সেদিন বুঝতে পারবি নারী হবার কত যন্ত্রণা।
বারবার কত অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে–নাহ্ তুই কোনদিন কোন অগ্নিপরীক্ষা দিবিনা। নিজের ভুল না থাকলে কখনো ক্ষমা চাইবি না। যদি কখনও কেউ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে কষ্ট দেয়, তখন ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হবি,দেখবি তোর পাশে কেউ না থাকলেও ঈশ্বর থাকবেন।
এখন প্রতিদিন মনে হয়,সীতার পাতালপ্রবেশের কথা– যদি ধরিত্রী দুভাগে ভাগ হয়ে যেত!!তার কোলে একটু ঠাঁই দিত– আমিও চাইতাম সেই দূরত্ব, চিরন্তন বিচ্ছিন্ন হওয়ার।
তবে একটাই শান্তি, আমার চলে যাওয়া হারিয়ে যাওয়ায় থাকবেনা কোথাও কোনো আক্ষেপ--থাকবেনা ফিরে আসার প্রতীক্ষা !!
এভাবে মুক্তির কথা ভাবতে ভাবতে মায়ের মুখটা মনে পড়ে। তখনই মনেমনে ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হই–যে ক’দিন মা রয়েছে, সে’কদিন ঠাকুর আমাকে শক্তি দিও যুদ্ধটা হাসিমুখে চালিয়ে যাওয়ার। তারপর—
সবাই বলে বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে !!
কে জানে ভবিতব্য কি কেউ বলতে পারে তবে ??
নিজেই চলে যাবে সময় হবে যবে,
আমরণ সাথে পাশে কে কার রবে ??
সব ক্ষণস্থায়ী, জীবনটাই যে বড্ড অনিশ্চিত,
যাপনের দালানকোঠা কাঠামোর নড়বড়ে ভীত।
মরণের হাতছানি শূন্য-পূর্ণ বোঝেনা–
বিশ্বাস-ভরসা, ভালোবাসা–কিছুর ধার ধারে না।
কারোর পরোয়া করে না স্বার্থপরের মত এক ঝটকায়,
মায়ার বাঁধন সব কেমন মুহূর্তেই অবলীলায় ছিঁড়ে যায়।
এই আছি অনায়াসে এই নেই–
খেরোখাতা ধারবাকি মেলাতেই !!
এত রাগ পুষে রেখে মানুষ বাঁচে কিভাবে ??
নেতিবাচক অন্ধকারের গ্রাস সকলের স্বভাবে–
সবটাই কি নিখুঁত নিপুণ অভিনয় তবে ??
সত্যি বলে সত্যিই কোথাও কিছু তো থাকবে !!
মন্দ যাকিছু দূরে সরিয়ে ভালোটুকু নিয়ে–
থাকব যে’কদিন !! বাঁচব ভালোবাসায় মনপ্রাণ ভরিয়ে।।