আমি হাউস ওয়াইফ
একটা নাক সিটকানো ট্যাগ নিয়ে চলি।
আমার কোন কাজ নেই
কথায় কথায় অকর্মার ঢেঁকি।
কিন্তু সূর্য ওঠার আগেই
আমি চোখ খুলি ভোর পাঁচটায়।
আর গভীর রাত্রে চোখের পাতা
আপনাআপনি বন্ধ হয় ক্লান্তিতে।
কী কী কাজ করি হিসাবে থাকে না
তবে ছেলের মা,গৃহশিক্ষক,খেলার সাথি
প্রয়োজনে ডাক্তার, বন্ধু,গল্পকার
আর ধৈর্যশীল প্রধান শ্রোতা।
মেয়ের চুল বান্ধি,গানের ক্লাসে
নাচের ক্লাসে,ক্যারাটে ক্লাসে
সময় মতো পৌঁছা আনা করি।
শাশুড়ি শ্বশুরের এক্সট্রা দেখভাল
সময় মতো ঘুমের ওষুধ, কানে ড্রপ
পূজা সংখ্যা থেকে বেশ কিছু গল্প শোনানো।
পাড়ার কাকিমাদের ঘর ডাকা
চা জলপান আপ্যায়নের সব ব্যবস্থাই করি।
মাসকাবারি বাজার ,জামাকাপড় কেনা
কম ভিড়ে দুপুর বেলাই করি।
স্বামীর ফোন আসলে ইউপিআই করে
টেলিফোনের বিল,ইলেকট্রিক বিল,
এল আই সির প্রিমিয়ামটাও দি।
ছুটির দিন বাইরে সবাই ঘুরতে গেলে
ড্রাইভারের সিটেও মাঝেমাঝে বসি।
কাজের মেয়ের ছুটির দিন রবিবার
ওর কাজটা আমিই করি।
জামাকাপড় কাঁচা ধোঁয়া, পাঠ করা
ইস্ত্রি করে গুছানো আমারই কাজ।
ছুটির দিনগুলোতে কম তেল মশলায়
হোটেলের স্বাদ অনুসারে খাবার আমিই বানাই।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট মেচের সময়
ঘন ঘন চায়ের জোগানদার ছিলাম আমিই।
এছাড়া পূজাপার্বন,মন্ত্র পাঠ,ভোগ
ফুল তুলসি আল্পনা আমারই কাজ।
পরবে পিঠাপানা কয়েকবারেই হয়
সেটাও না করলে সবাই স্বাদেই ভুলে যাবে
তাই গুড়পিঠা থেকে পুরপিঠা
কিছুই বাদ দেওয়া চলবে না।
ওদিকে পিজ্জা থেকে বারগার
স্বয়ারমা থেকে পনির রোল..
ওটা তো ছেলে মেয়ের আবদার
মা হতেই শিখে ফেলেছি।
ওই দুপুরটা আমার নিজস্ব..একটু সোশ্যাল সাইট।
কলেজের বন্ধুদের সাথে দুটো চ্যাটে কথা
কোথায় ভালো মিঠাই,রঙ্গোলী বা দিয়া পাবো?
কোথায় ভালো ভুটিয়া এসেছে
কমদামে এ সময়ই তো কিনে রাখতে হয়।
ফেসবুকে দুটো লাইক বা কমেন্টস
না দিলে আমার পোস্টের দাম দেবে কে?
বারান্দার ফুলগাছগুলো আমার ভালো বন্ধু
নির্ভেজাল সম্পর্কে শুধুই আনন্দ ।
আমার হাতে চায়ের কাপ থাকে
আর ওরা মাথা নেড়ে গল্প শুনে
আমার ছোট্ট প্রকৃতি বড়ই আপন।
চারবেলা খাবার বানানো ওটা আর কি?
গা শোয়া হয়ে গেছে আজকাল
মুখ খুললে বলে করছি কার জন্য?
সত্যিই তো কি বোকা মেয়ে আমি
বিনা ছুটি বিনা বিশ্রাম
নিজের না হলে করি।
লোক যে যাই বলুক বলতে দাও
আমার সংসার আমিই রাণী
তাই কষ্টের মাঝে শুধুই শান্তি খুঁজি।।