দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৮ মার্চ : মাত্র পাঁচটা বছর পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন তিনি । জেতার পর থেকেই ‘অনুন্নত ভাতার’-কে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন । গ্রামের যে রাস্তাগুলি বর্ষা হলে এক হাঁটু কাদা হত,মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই প্রথম মোড়ামের মুখ দেখে । শুধু তাইই নয়, তাঁর অর্ধ দশকের কার্যকালে ভাতারে হাসপাতালের উন্নীতকরণ, দমকল অফিস, পশু হাসপাতাল, থানার ভবন, স্টেডিয়াম এবং পানীয়জল প্রকল্পসহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন তিনি । করেছিলেন প্রচুর কর্মসংস্থানও । যে কারনে আজও তাঁকে ‘ভাতারের রূপকার’ হিসাবে মানেন এলাকাবাসী । কিন্তু সেই ভোলানাথ সেনের ইচ্ছা থাকলেও দলীয় অন্তর্ঘাতের কারনে আর ভাতারের বিধায়ক হওয়া সম্ভব হয়নি । আমৃত্যু সেই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন অ্যাডভোকেট ভোলানাথবাবুকে । আজ ফের চুড়ান্ত অবমাননার শিকার হলেন তিনি । ভাতার বাজারে চায়ের দোকানের পাশে গড়াগড়ি খেলো তাঁর ছবি । কেউ গুটখার পিক, কেউ উচ্ছিষ্ট চায়ের ভাঁড় ছুড়ে দিল তাঁর ছবির দিকে । ফলে ফের একবার ভাতারবাসীর মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এককালে যে দলের নেতা ও বিধায়ক ছিলেন ভোলানাথবাবু সেই কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ ।
১৯৭২ সালে ভাতার বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বর্গীয় ভোলানাথ সেন । তখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস । রাজ্যের পূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ভোলানাথবাবুকে । আর সেই সূযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকা ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়ে পড়েন তিনি । তাঁর জমানায় ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্য উন্নয়মূলক কাজ প্রত্যক্ষ করেছে ভাতারবাসী । তাঁর অবদানকে স্মরণ করে ভাতারের কিছু মানুষ ‘ভোলানাথ সেন মেমোরিয়াল সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন । গত বছর নভেম্বর মাসে ধূমধাম সহকারে ভোলানাথ সেনের জন্মশতবার্ষিকী পালন করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি । আর তখনই ভাতার বাজার জুড়ে টাঙানো হয়েছিল ভোলানাথ সেনের ছবি দেওয়া বেশ কিছু ফ্লেক্স । কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের পর প্রায় চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত ভাতার থানার সামনে একটি চায়ের দোকানের গায়ে অনাদরে পড়ে থাকতে দেখা গেল “ভাতারের রূপকার”-এর একটি ছবিকে । যদিও এনিয়ে কানাঘুষো হতেই জাতীয় কংগ্রেসের ভাতার বিধানসভার আহ্বায়ক টুটু মুন্সি ভোলানাথ সেনের ওই ফ্লেক্সটি তুলে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখেন । তা সত্ত্বেও বহু মানুষ এই বিষয়ে কংগ্রেসের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ।
তবে এই ঘটনার দায় ভোলানাথ সেনের জন্মশতবার্ষিকী পালনকারী কমিটির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন টুটু মুন্সি । তিনি বলেন,’যারা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন তাদের এটা দেখা উচিত ছিল । ভোলানাথ সেনের এই অবমাননা কখনই মেনে নেওয়া যায় না ।’ অন্যদিকে ভোলানাথ সেন মেমোরিয়াল সোসাইটির অন্যতম কর্মকর্তা মধূসুদন কোঁয়ার বলেন,’ফ্লেক্সটি ওই চায়ের দোকানে যাওয়ার কথা নয় । কিন্তু কিভাবে ওখানে গেল সেটাই বুঝতে পারছি না । আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি ।’ পাশাপাশি ভোলানাথ সেনের ছবির অবমাননা হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন ।।