এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৪ জানুয়ারী : মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের বৃহৎ অংশের আশ্রয়স্থল ইসলামি রাষ্ট্র বাংলাদেশ । বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্প করে রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে । কিন্তু ওই কাম্পের রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে । তবে বিভিন্ন ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ায় শেখ হাসিনা সরকারের উদ্বেগ বেড়েছে । এদিকে এলাকা দখলের জন্য ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে । সেই সংঘর্ষে প্রায় দিনই মৃত্যু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ।
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরও একজন রোহিঙ্গা যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল পৌনে ৫ টা নাগাদ উপজেলার তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) সি-৬ ব্লকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে । সন্ত্রাসীরা তাঁকে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়, এরপর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। নিহত রোহিঙ্গা যুবকের নাম মোহম্মদ হুজিত উল্লাহ (৩৫) । সে ওই ব্লকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ফয়েজুল করিমের ছেলে এবং একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল বলে জানা গেছে ।
এর আগে শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে উখিয়ার হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-২০) গলা কেটে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা করিম উল্লাহকে (৩২)। করিম ওই আশ্রয় শিবিরের এম-২৭ ব্লকে থাকছিল। করিম উল্লাহ ওই ব্লকের সাব মাঝি (নেতা) ছিলেন। দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিয়ানমারের ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিহত এই দুই রোহিঙ্গা যুবক ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে তাঁরা আরসা ত্যাগ করে মিয়ানমারের আরেকটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনে (আরএসও) যোগ দেয় । এই কারণেই তাঁদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে মৃতদের পরিবার ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ শামীম হোসেন বলেন, আজ বিকেলে ক্যাম্প-১৯-এর সি-৬ ব্লকের একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন হুজিত উল্লাহ। এ সময় অস্ত্রধারী ও মুখোশ পরা ৭-৮ জন সন্ত্রাসী হুজিতকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই সন্ত্রাসীরা হুজিতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকেন। পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
ঘটনাস্থলে হুজিতের মৃত্যু হয় । মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয় শিবিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর দুর্গম পাহাড়ের আশ্রয় শিবিরে ঢুকে চাঁদাবাজি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও মাদক চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে। আরসা ছেড়ে যাঁরা আরএসও অথবা নবী হোসেন গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন, সেই রোহিঙ্গাদের তুলে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে । চলতি মাসে আরসার সন্ত্রাসীরা তিনজন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করেছে। এতে আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে । উল্লেখ্য,আরএসও এবং নবী হোসেন গ্রুপ হল রোহিঙ্গাদের নতুন সন্ত্রাসী সংগঠন ।
বাংলাদেশ সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী,বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরুর পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি । প্রতিবছর ৩০,০০০-৪০,০০০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে । ফলে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খোরাক জোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে । এখন রোহিঙ্গাদের বিদায় করতে ছুড়ে বেড়াচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার ।।