এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১১ ফেব্রুয়ারী : বছর ছয়েক আগে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে পালিয়ে গিয়েছিল । তখন বাংলাদেশ বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সাদরে নিজের দেশে বসবাসের জায়গা করে দেয় । ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল শেখ হাসিনা সরকার । কিন্তু প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্মের কারনে সেই সংখ্যা আজ প্রায় ১৩ লাখে পৌঁছে গেছে । ফলে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতদের খাবার জোটানোর চাপ আর সামলাতে পারছে না বাংলাদেশ । তার উপর রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদ,মানব পাচার,অস্ত্র ও মাদক পাচারের মত কারবারে জড়িয়ে পড়ায় দেশের আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যত হিমসিম খেতে হচ্ছে ৷ যে কারনে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে বাংলাদেশ ।
শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার এডিলেইডে অনুষ্ঠিত বালি প্রসেস ফোরামের মানব পাচার ও চোরা চালান এবং এ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আপরাধ বিষয়ক অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় রোহিঙ্গাদের ‘আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড: এ কে আব্দুল মোমেন । তিনি বলেছেন,’রোহিঙ্গা সমস্যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সকল দেশকে সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত ।’ অনিয়মিত অভিবাসনের মূল কারণগুলোর মূলোৎপাটনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বালি প্রসেস যেন সমস্যার সাময়িক উপশমের উপলক্ষ না হয়। বালি প্রসেসকে কার্যকর করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনিয়মিত অভিবাসনের মূল কারণ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে হবে ।’ তিনি বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে আহ্বান জানান । এছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়াকে আরও বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,’অস্ট্রেলিয়ার সামর্থ্য আছে, সম্পদ আছে — শুধু একটা রাজনৈতিক মানসিকতা দরকার। আর যদি তাদের সেই মানসিকতা থাকে তাহলে তারা আমাদের সাহায্য করতে পারে ।’
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী পেনি ওং জানান, অস্ট্রেলিয়া স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কাছে একটি “ভারী বোঝা” । কিন্তু তার সরকার ইতিমধ্যেই সাহায্যের জন্য যথেষ্ট অবদান রেখেছে ।তিনি বলেন,’আমরা ২০১৭ সাল থেকে মায়ানমার এবং বাংলাদেশকে যথেষ্ট অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি – আমি মনে করি এটি সেই সময় থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারেও বেশি । এছাড়া চলতি অর্থ বছরের জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য ১৩৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছিলাম । সিনেটর ওং শরণার্থী পুনর্বাসনের বিষয়ে নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি কিন্তু বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার কর্মসূচি বৈশ্বিক মানদণ্ডে “উদার”। তিনি বলেছেন,’আমাদের জন্য যত জায়গা আছে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আছে । আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি তার এটিই হল বাস্তবতা ।’।