প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ ফেব্রুয়ারি :রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধ রয়েছে ঠিকই । তাবলে পুরভোটের যুদ্ধে নেমে শিক্ষাগুরু ও তাঁর ছাত্রের কেউই পারস্পরিক স্নেহ ভালবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দিতে চান না । আর সেই কারণেই এবার বর্ধমান পৌরসভার ভোটে সবার নজর কেড়েছে গুরু শিষ্যের লড়াই।যে লড়াইয়ের শেষ ফল দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন বর্ধমান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ।
রাজ্যের যে কটি পৌরসভার নির্বাচন ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে তার সবকটাতেই তৃণমূলেরই জয়জয়কার ।এমন ঘাসফুল ঝড়ের মধ্যেই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি হবে বর্ধমান পৌরসভা ৩৫ টি ওয়ার্ডের নির্বাচন। তার মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন নুরুল আলম ওরফে সাহেব। আর তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএম প্রার্থী লুৎফর রহমান মুন্সী।যুজুধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর বাড়ি একই ওয়ার্ডে।সেই ওয়ার্ডেরই দুবরাজদিঘী এলাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান মল্লিক দুবরাজদিঘী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক।আর সেই বিদ্যালয়েই পড়াশুনা করে বড়হয়ে ওঠা ছাত্র নুরুল আলম আজ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী । একজন বয়সে প্রবীন হলেও আপাদমস্তক কমিউনিষ্ট । অপর জন তৃণমূলের তরুণ তুর্কী নেতা ।
সে যাই হোক । ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়ে দু’জনের কেউ এই বিষয়টিকেই বেশী গুরুত্ব দিতে চান না।বরং দু’জনেই চান ভোট যুদ্ধের ময়দানেও অটুট থাকুক গুরু ও শিষ্যের পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধার বন্ধন ।তাই প্রথদিন ভেটের প্রাচার নেমেই সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে শিষ্য নুরুল পৌছে গেলেন শিক্ষা গুরু লুৎফর রহমান মুন্সীর বাড়িতে। শিক্ষা গুরুর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে গুরুর কাছেও ভোট ভিক্ষা চাইলেন ছাত্র।পাল্টা শিক্ষা গুরুও তাঁর শিষ্যকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আশীর্বাদ ও শুভকামনা জানালেন।একই সঙ্গে শিক্ষক লৎফর রহমান সবাইকে শুনিয়ে বললেন, ‘আজকের দিনে রাজনীতিতে আমার ছাত্র নুরুলের মত যুবশক্তির উঠে আসা প্রয়োজন রয়েছে । ভোটের দিন লুৎফর রহমান মুন্সী কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ হয়তো নুরুল আলমকে ভোট দেবেন না ।’ তবুও রাজনৈতিক সৌজন্যতার এই দৃশ্য চাক্ষুষ করে কার্যতই অবিভূত দুবরাজদিঘীর বাসিন্দারা । শিক্ষা গুরুর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে সোমবার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অলি গলি ঘুরে নুরুল সারলেন ভোটের প্রচার ।
নুরুল আলম এদিন বলেন ,’আমার দলনেত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়েই দলের সবাইকে রাজনৈতিক সৌজন্যতা বজায় রেখে চলার বার্তা দেন।নিজেকে বিনয়ী রেখে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হবার কথা বলেন।সেই আদর্শেই আমি দীক্ষিত।শিক্ষা গুরু আমার প্রতিদ্বন্দি হলেও তিনি আমার গুরুই । তাই ভোট যুদ্ধে শিক্ষা গুরুর আশীর্বাদ মাথায় থাকাটাও বড় প্রাপ্তি ।বাকিটা বিচার করবেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনতা জনার্দন“। অন্যদিকে সিপিআইএম প্রার্থী লুৎফর রহমান মুন্সী বলেন,আমার ছাত্র নুরুল আলমের সৌজন্যতা
বোধ আমায় মুগ্ধ করেছে।ওর ভবিষ্যৎ জীবন ভালো হোক এই শুভ কামনাই করছি ।’ বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস জানিয়েছেন,বর্ধমান পুরসভায় লড়াইটা মূলতই তাঁদের সঙ্গে সিপিএমেরই । তবে তিনি আশাবাদী বর্ধমান পৌরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরাই জয়ী হবেন ।।