প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ ডিসেম্বর :পড়ুয়াদের কাছে তিন রিংকু ম্যাডাম বলে পরিচিত।তিনি ইতিহাস পড়াতেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে।কিন্তু সহপাঠীরা তাঁর নাম বললেই হাসাহসি শুরু করে দিত অনেক পড়ুয়াই।কারণ তাঁরা মনে করতো ইতিহাসে রিংকু ম্যাডামের জ্ঞান একেবারেই কম।তাই তিন ঠিকমতো নাকি পড়াতে পারতেন না ।ইতিহাসের কোন বিষয়ে পড়ুয়ারা রিংকু ম্যাডামের কাছে জানতে চাইলে তিন সঙ্গে সঙ্গে কিছু জানাতে পারতেন না।পরে জানাবেন বলে পাস কাটাতেন।এহেন শিক্ষিকা রিংকু দেবনাথের নাম সদ্য প্রকাশিত ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় রয়েছে শুনে পড়ুয়ারা জানায় ,তাঁদের সন্দেহই সত্যি প্রমানিত হল। তালিকায় নাম ওঠার পর থেকে রিংকু ম্যাডামও স্কুলে আসা বন্ধ কর দিয়েছেন। কিন্তু রিংকু ম্যাডাম যে আসলে ভুয়ো শিক্ষিকা এটা যেন কল্পনাও করতে পারছেন না বিদ্যালয়ের অন্য সকল শিক্ষকরা।তাঁদের বক্তব্য রিংকু দেবনাথের কীর্তি আমাদের সবাইকেই অবাক করে দিয়েছে।
স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে এখনও উত্তাল হয়ে রয়েছে গোটা বাংলা।নিয়ম ভেঙে অনেকের অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া নিয়ে এখনও পথে বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বহু যোগ্য এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা।এই আন্দোলন ২০১৯ সাল থেকে দানা বাঁধে। এর পর ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আন্দোলন জোরদার রুপ পায় দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও রুজু হয় মামলা।আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নেমেই দুর্নীতির একের পর এক পর্দা ফাঁস করা শুরু করে।তার পর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে অবৈধ উপায়ে শিক্ষকের চাকরি বাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করা ব্যক্তিদের নামের তালিকা ।
কিছুদিন আগে স্কুল সার্ভিস কমিশন নবম- দশমে ভুয়ো সুপারিশপত্র পাওয়া ১৮৩ জন অবৈধ শিক্ষকের নামের তালিকা আদালতে জমা দেয়।সেই তালিকায় নাম থাকে জেলার জামালপুর থানার বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহল্লা বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক শেখ ইনসান আলির নাম।তালিকা প্রকাশ হবার পর থেকেই মেমারি পৌরসভা এলাকা নিবাসী এই শিক্ষক কার্যতই আত্মগোপন করেছেন।এমন অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশমের আরও ৪০ জন ভুয়ো শিক্ষক শিক্ষিকার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে।তাতে পাঁচ নম্বেরে নাম রয়েছে পূর্বস্থলীর রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের শিক্ষকা রিংকু দেবনাথের নাম। অথচ ২০১৯ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে,ভুয়ো শিক্ষকদের নামের দ্বিতীয় তালাকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই পূর্বস্থলীর পারুলিয়া নিবাসী রিংকু দেবনাথ আর ষ্কুলমুখী হন নি। তাঁর ফোনও সুইচ অফ থাকছে।বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও শিক্ষিকা রিংকু বা তার পরিবারের কেউ সাড়া দেননি।
শিক্ষিকা রিংকুর এমন কীর্তি ফাঁস হতেই রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও পড়ুয়া সবাইকেই অবাক করে দিয়েছে। রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষিকা শুভ্রা দত্ত এদিন বলেন,’রিংকুর কীর্তি আমাকে সত্যি অবাক করে দিয়েছে। ওর ওএমআর শিট ব্ল্যাঙ্ক, অথচ ও স্কুলে শিক্ষকতা করছিল। এটা এখনও কল্পনাও করতে পারছি না।এমন অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এই প্রথম হল।শুভ্র আরো বলেন, রিংকু আমার সহকর্মী ছিল। একসঙ্গে টিচার্স রুমে বসতাম ,টিফিন খেতাম । কিন্তু রিংকু কোন দিনও কাউকে বুঝতে দেয় নি, যে ও অবৈধ উপায়ে শিক্ষিকার চাকরি বাগিয়েছে। আমরা স্কুলের সব শিক্ষকরা জানতাম ও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছে। আমাদের সেই ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত ভুয়ো শিক্ষকের নামের তালিকা”। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র গৌরব রায় জানিয়েছে,রিংকু ম্যাডাম ক্লাস নাইনে ইতিহাসের ক্লাস নিতেন। ক্লাসে উনাকে ইতিহাসের বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে উনি কিছু জানাতে পারতেন না । পরে জানাবেন বলে পাস কাটাতেন । সেই জন্য রিংকু ম্যাডামের শিক্ষকতা করার যোগ্যতা কতটা রয়েছে তা নিয়ে সকল পড়ুয়াদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল বলে ছাত্র গৌরব জানিয়েছে “ । বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল নন্দী অবশ্য রিংকু দেবনাথের নাম ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় থাকা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চান নি । তিনি শুধু দলেন ,ভুয়ো শিক্ষকের তালিকায় আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার নাম রয়েছে জেনে খুবই খারাপ লাগছে । বিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষক কম হয়েগেল।রিংকু ম্যাডামের বিষয়ে আমাকে সরকারী ভাবে যা জানানো হবে সেটাই করবেন বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন ।।