এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ আগস্ট : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়াকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । সংবাদমাধ্যমের সামনে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও উত্তেজিত হয়ে দাবি করেছিলেন যে কোনো তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়নি এবং ঘটনার মূল অভিযুক্তকে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে । কিন্তু নিহতের পরিবার থেকে শুরু করে আমজনতা মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের কথায় ভরসা রাখতে পারেনি । তাদের অভিযোগ যে মূল অপরাধীদের আড়াল করতে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ । বর্তমানে সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে এই মামলার তদন্তভার এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তেও পুলিশের দ্বারাও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের প্রমান পাওয়া গেছে বলে খবর৷ শুধু তাইই নয়,কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও তুলছে সিবিআই । উচ্চ আদালতে আগামী শুনানিতে তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও কলকাতা পুলিশের অসহযোগিতার বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে বলে দাবি করেছেন সিবিআইয়ের এক কর্তা । সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিবিআইয়ের ওই কর্তা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহে ধোঁয়াশা রয়েছে। আবার, তথ্য-প্রমাণ লোপাট করে মামলা দুর্বল করে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’
সিবিআই সূত্রে খবর, তদন্তে সিবিআই জানতে পেরেছে ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার কথা যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ছিল,কোনো এক অজ্ঞাত কারনে তাদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি । পরিবর্তে সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা । চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত যে ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা দেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা মূলত চিকিৎসক। আর ঘটনাস্থল থেকে যারা নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা চিকিৎসক নন কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। দেহ থেকে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিশেষ ঘটনায় বিশেষ পারদর্শিতার প্রয়োজন থাকে। যেমন, বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দিক থাকে। আবার, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু বিশেষ দিক থাকে ।
সেই কারনে আরজি করের নিহত তরুনী চিকিৎসকের ক্ষেত্রে দেহ উদ্ধারের দিন যে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন,তারা এখন সিবিআইয়ের র্যাডারে রয়েছেন । কখন, কোন কর্তার নির্দেশে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন সেটা জানতে ইতিমধ্যেই দু’জনকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । বেলগাছিয়ায় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদেরও চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআই। এমনকি ওই ফরেন্সিক পরীক্ষাগারের কর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ফরেন্সিক পরীক্ষাগারের তরফে কোনও রিপোর্ট সিবিআইকে দেওয়া হয়নি। বরঞ্চ তারা রিপোর্ট দিতে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ উঠছে । সিবিআইয়ের এই দাবি অনুযায়ী, রাজ্য সরকার- কলকাতা পুলিশ এবং আরজি কর কর্তৃপক্ষের অদৃশ্য অশুভ যোগসূত্রকে প্রমাণিত করছে ।
তদন্তকারীরা দাবি করেছেন,ঘটনাস্থলের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আরও তথ্য হাতে এসেছে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন সকাল ৯টার পরে দেহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব তেমন নয়। বরং দেহ উদ্ধারের দিন সাতসকালেই ওই সেমিনার রুমে ভিড় করার সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে । সন্দেহ করা হচ্ছে যে এই কারনেই নিহত তরুনী চিকিৎসকের পরিবারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে ময়নাতদন্ত করার দাবি ওঠার আগেই শাসকদল ও কলকাতা পুলিশ তড়িঘড়ি মৃতদেহ দাহ করে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হয় !