এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২২ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’র ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা চলছে । আর এই মামলায় ২৩ জন বিশিষ্ট আইনজীবী নিয়োগ করেছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার । কপিল সিব্বাল ছাড়াও আরও যে ২২ জন আইনজীবী আদালতে রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনি লড়াই লড়ছেন তারা হলেন,মেনকা গুরুস্বামী, সঞ্জয় বসু, সুশ্রী আস্থা শর্মা, শ্রীসত্য মোহান্তি, নিপুণ সাক্সেনা, অঞ্জু থমাস,অপরাজিতা জামওয়াল, সঞ্জীব কৌশিক, মন্তিকা হরিয়ানি, শ্রেয়াস অবস্থি,উৎকর্ষ প্রতাপ,প্রতিভা যাদব,লিহজু শাইনি কোন্যাক,রিপুল স্বাতী কুমারী, লাভকেশ ভাম্বানি, অরুণিমা দাস,দেবদীপ্ত দাস, অর্চিত আদলাখা,আদিত্য রাজ পান্ডে এবং মেহরীন গর্গ । যেখানে আবেদনকারীর পক্ষে রয়েছেন মাত্র ৫ জন আইনজীবী । তারা হলেন, তুষার মেহতা,মাধব সিংহল, অর্কজ কুমার, স্বাতী ঘিলদিয়াল এবং এম.কে. মারোরিয়া । কিন্তু প্রতিদিন শুনানিতে বিপুল ব্যয় করে ২৩ জন আইনজীবী নিয়োগ করেও ল্যাজেগোবরে হতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে ।
আজ বৃহস্পতিবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়েরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন । যার কিছু কিছু জবাব বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বালের কাছেও ছিল না ৷ আরজি কর কাণ্ডে টালা থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজুর আগেই কেন ময়নাতদন্ত হয়ে গেল? শুধু তাই নয়, ঘটনার টাইমলাইন নিয়েও প্রশ্ন তুলল প্রধান বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ।
বিচারপরি রাজ্যের কাছে ময়নাতদন্ত কখন হয়েছে তা জানতে চান। রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানায়, সন্ধ্যা ৬টা ১০ থেকে ৭টা ১০-এর মধ্যে করা হয়েছে। তার আগে সকালে জেনারেল ডায়েরি হয়। এরপরেই রাজ্যের কাছে বিচারপতি পারদিওয়ালা জানতে চান, এটা কি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তাহলে ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ। এদিন রাজ্যের তরফে বেশ কিছু নথি আদালতে জমা দেওয়া হয়।আর সেই নথি দেখে আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, রাত সাড়ে ১১ টায় দেখা যাচ্ছে জেনারেল ডায়েরি হয়েছে। এর ঠিক ১৫ মিনিটের মাথাতেই দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হল?বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি জেপি পারদিওয়াল মন্তব্য করেছেন, কলকাতা পুলিশ যা করেছে তা দীর্ঘ ৩০ বছরের কেরিয়ারে আমি দেখিনি ।
গোটা টাইম লাইন নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও এই বিষয়ে রাজ্যের তরফে কপিল সিব্বল যে সাফাই দেন, তা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ । বিচারপতি আরও বলেন,’যখন আপনি ময়নাতদন্ত করছেন, তার মানে এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা। যখন সন্ধ্যা ৬টা১০ মিনিট থেকে ৭টা ১০ মিনিটের মধ্যে ময়নাতদন্ত করা হয়ে যায়, তাহলে রাত সাড়ে ১১টার সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করার কী প্রয়োজন ছিল?’এখানেও চাপে পড়ে রাজ্য। রাজ্যের তরফে আইনজীবী সিব্বল উত্তর দেন,’এটা এফআইআর, কেবল অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস নয়।
আইনজীবী সিব্বল বলেন,’আমাদের কাছে গোটা টাইমলাইন রয়েছে। ইউডি কেস দায়ের হয় দুপুর ১.৪৫ মিনিটে। সলিসেটর জেনারেল তখন বলেন,না,এই তথ্য একেবারেই ঠিক নয়। বিচারপতি তখন পুলিশের কোনও আধিকারিক আদালতে উপস্থিত রয়েছেন কিনা তা জানতে চান, তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চান। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ আধিকারিককে সুপ্রিম কোর্টে পরের শুনানিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন তিনি, যাতে ময়নাতদন্তের পর কেন ইউডি কেস, তার ব্যাখ্যা তিনি আদালতে দিতে পারেন। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন,পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট কে? তদন্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমন ভাবে তদন্ত হল? আরজি কর কাণ্ডে ভাঙচুর নিয়েও রাজ্যের তরফে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার শুনানিতে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে কলকাতা পুলিশের পদক্ষেপ এবং তদন্ত নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।।