এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাবনা(বাংলাদেশ),৩১ মার্চ : আট বছরের ভাইকে অপহরণ করে খুন করেছিল প্রতিবেশী এক বন্ধু । সেই সময় খুনে অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় মাত্র কয়েক বছরের সাজা দেয় আদালত । জেলের সাজা কাটিয়ে সম্প্রতি সে বাড়ি ফেরে । তবে জেলের ভিতরেই কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হয় খুনি । এদিকে সে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই ভাইকে খুনের বদলা নিতে তক্কে তক্কে ছিল নিহত শিশুর বড় দাদা ।
অভিযুক্তের ফোন নম্বর যোগাড় করে মেয়ে সেজে দীর্ঘ ৩ মাস ধরে সে প্রেমের অভিনয় করে যায় । বিশ্বাস তৈরি হতেই দিন ছয়েক আগে রাতে তাকে নির্জন জায়গায় আসার জন্য বলে । আর ভাইয়ের খুনিকে কাছে পেতেই ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাকে নৃসংসভাবে কুপিয়ে খুন করে । অবশ্য এই কাজে আরও এক বন্ধুর সাহায্য পায় নিহত শিশুর দাদা । খুনের বদলা খুনের এমনই এক রোমহর্ষক ঘটনা সামনে এল প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে ।
অবশ্য তারা দু’জনেই এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন । ধৃতদের নাম আজাদুর রহমান ওরফে নবীন (২৪) এবং তার বন্ধু আলাউদ্দিন (২০)। তাঁদের বাড়ি পাবনা জেলার বেড়া সান্যালপাড়ার । ধৃতদের বিরুদ্ধে একই এলাকার বাসিন্দা পেশায় ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন (২২)কে খুনের অভিযোগে মামলা রজু করেছে পুলিশ । বেড়া মডেল থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘ইমরান হত্যা মামলায় আসামি আজাদুর ও আলাউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভাই হত্যার বদলা নিতে গিয়ে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে ।’
পুলিশ সুত্রে খবর,গত ২৬ মার্চ রাতে বাড়ি থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায় আবদুল কুদ্দুসের ছেলে ইমরান হোসেন । পরদিন ২৭ মার্চ সকালে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি জমি থেকে তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । এই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা রজু করেন নিহতের বাবা । ঘটনার তদন্তে নেমে আব্দুল মাজেদ এর ছেলে আজাদুর রহমান ওরফে নবীন এবং মালপক মোল্লার ছেলে আলাউদ্দিনের যোগসুত্র খুঁজে পায় পুলিশ । তাঁদের আটক করে চলে ম্যারাথন জেরা । শেষে তাঁরা খুনের কথা কবুল করে ।
পাবনার পুলিশ সুপার বুধবার জানান, বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নবীনের ভাই আরাফাত (৮)কে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল । ওই ঘটনায় দোষী সব্যস্ত হয়েছিল কিশোর ইমরান । প্রায় সাড়ে ৫ বছর যশোর কিশোর সংশোধনাগারে কারাভোগের পর কয়েক মাস আগে তিনি মুক্তি পান । তিনি বলেন, ‘ধৃত নবীন স্বীকার করেছেন ভাইয়ের হত্যার বদলা নিতেই বন্ধু আলাউদ্দিনের সহায়তায় সে ইমরানকে খুন করেছে । এ জন্য নবীন তিন মাস ধরে মেয়ে সেজে মোবাইল ফোনে ইমরানের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেন । এরপর ২৬ মার্চ রাতে মেয়ে কণ্ঠে ইমরানকে বাড়ির বাইরে ডেকে এনে খুন করেন ।’ ধৃতরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পাবনার পুলিশ সুপার ।
জানা গেছে, ধৃত আজাদুর ও আলাউদ্দিন আদালতে জানিয়েছেন, ইমরান সাড়ে ৫ বছর জেলবন্দি থাকার পর বেরিয়ে এসে নবীনকে ‘কী করতে পারলি’ বলে তির্যক মন্তব্য করেছিল । আর এতেই নবীনের মধ্যে ভাই হত্যার বদলা নেওয়ার ইচ্ছা জাগে । তিনি ইমরানের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মেয়ে সেজে তিন মাস প্রেমের অভিনয় করেন । পরে বন্ধু আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ইমরানকে খুনের পরিকল্পনা করেন । এ জন্য দুজনে দুটি ছুরিও কেনেন ।’ তাঁরা জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেয়ে কণ্ঠে ইমরানকে বেড়া পৌর এলাকার আলহেরানগর মহল্লার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলেন নবীন । সেখানে পৌঁছানোর পর নবীন ও আলাউদ্দিন মিলে ইমরানকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায় ।।