• Blog
  • Home
  • Privacy Policy
Eidin-Bengali News Portal
  • প্রচ্ছদ
  • রাজ্যের খবর
    • কলকাতা
    • জেলার খবর
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলার খবর
  • বিনোদন
  • রকমারি খবর
  • ব্লগ
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • রাজ্যের খবর
    • কলকাতা
    • জেলার খবর
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলার খবর
  • বিনোদন
  • রকমারি খবর
  • ব্লগ
No Result
View All Result
Eidin-Bengali News Portal
No Result
View All Result

ভারত বিভাজনের অন্যতম নায়ক  ও হিন্দুদের সর্বনাশ করা ‘সেকুলার’ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছিল এই ভারতেই, পড়ুন তার পদত্যাগপত্র (প্রথম কিস্তি),

Eidin by Eidin
September 13, 2025
in রকমারি খবর
ভারত বিভাজনের অন্যতম নায়ক  ও হিন্দুদের সর্বনাশ করা ‘সেকুলার’  যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছিল এই ভারতেই, পড়ুন তার পদত্যাগপত্র (প্রথম কিস্তি),
4
SHARES
53
VIEWS
Share on FacebookShare on TwitterShare on Whatsapp

ভারত দু’টুকরো হওয়ার পর পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী হয়েছিলেন পূর্ব বাংলার ‘নমঃশূদ্র নেতা’ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল। ভারত বিভাজনের কয়েক বছর পর তিনি পাকিস্তানে অবস্থান করেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বন্দর নগরী ও পাকিস্তানের প্রাক্তন রাজধানী করাচীতে বসবাস করতেন । কিন্তু ইসলামের প্রতি তার মোহ ভাঙতে সময় লাগেনি বেশিদিন। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই নানান ঘাত-প্রতিঘাতে মোহ ভাঙে তার। মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করে কলকাতায় পালিয়ে আসেন তিনি । পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন বারাসাতে । কিন্তু ততদিনে তার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে  (বাংলাদেশে)  সংখ্যালঘু হয়ে পড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের সর্বনাশ করে ফেলেছেন এই তথাকথিত সেকুলার মুসলিম লীগ নেতা ।

যোগেন মণ্ডল বরিশালের মৈস্তারকান্দি গ্রামে নমঃশূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ও বিএল ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বরিশাল সদর লোকাল বোর্ডেও সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাখরগঞ্জ উত্তর-পূর্ব আসন থেকে অশ্বিনী দত্তের ভাইপো সরল দত্তকে হারিয়ে এমএলএ নির্বাচিত হন। সরল দত্ত জমিদার এবং উচ্চবর্ণেও মানুষ ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। নির্দলীয় প্রার্থী হওয়ায় নমঃশূদ্র এবং মুসলমানদের ভোটও পেয়েছেন। কিন্তু নমঃশূদ্রের প্রার্থী ছিলেন না। তিনি যতখানি এই নির্বাচনে শূদ্রনেতার চেয়ে জননেতার ইমেজটাই মুখ্য হতে পারে। কিন্তু তাঁর এই অভূতপূর্ব সাফল্যকে ম্লান করা হয় ‘শূদ্রনেতা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায়।

১৯৪০ সালে তিনি সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎ বসুর সহযোগিতায় কলকাতা সিটি করপোরেশনের ৩নং বটতলা ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি তফশিলি ফেডারেশনের প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর-পটুয়াখালী কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সোহরাওয়ার্দির মন্ত্রিসভায় বিচার, পূর্ত ও গৃহনির্মাণ মন্ত্রী হন। ৪৭-এর দেশভাগে তাঁর সায় ছিল না। তিনি দেশভাগের বিপক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে দেশভাগের পাশাপাশি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দি, আবুল হাশিম, শরৎ বসু প্রমুখ নেতা, সে উদ্যোগের সঙ্গেও ছিলেন যোগেন মণ্ডল। অন্যরা জাতীয় নেতার স্বীকৃতি পেলেও যোগেন মণ্ডল হয়ে পড়লেন সমালোচিত ও বিতর্কিত। তিনি তখন করাচি চলে যান।

১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের অস্থায়ী স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৫ আগস্ট দেশভাগ হলে তিনি পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ঢাকা-বরিশাল-খুলনা অঞ্চলে ভয়াবহ দাঙ্গায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষে সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এর পরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এর পরে তিনি কলকাতা চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও কোনো নির্বাচনেই বিজয়ী হতে পারেননি। এমনকি ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে বামফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে আরপিআই-এর প্রার্থী হিসেবেও বারাসাত লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন। এভাবেই ১৯৩৭ সালের বিজয়ী নায়ক ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবন শেষে করুণ পরাজয়ের মধ্য থেকে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন। আস্তে আস্তে তিনি হারিয়ে যান বাংলার ইতিহাস থেকেও।
যোগেন মন্ডল কেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছিলেন ?

দেশ ভাগের সময় যোগেন মন্ডল ছিলেন নমঃশুদ্র নেতা। দেশ ভাগের সময় উনি বলেছিলেন – “আমার কোন নমঃশূদ্র ভাই হিন্দুস্তানে যাবে না।পাকিস্তান দিতে হবে….! দিতে হবে !  এই পাকিস্তানে আমরা পাকিস্তানীরা আর নমঃশূদ্ররা ভাই-ভাই হয়েই থাকব। হিন্দুদের সঙ্গে থাকব না। দেখবেন, আমাদের কোন অসুবিধা হবে না”। আসলে,তিনি নমঃশূদ্রদের হিন্দু বলেই মনে করতেন না । 

যোগেন মণ্ডলের ডাকে বাংলাদেশে আওয়াজ উঠল – ” নমঃশুদ্র-মুসলিম ভাইভাই বর্ণহিন্দুর রক্ত চাই”। পাকিস্তানের জন্ম হল, যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল পাকিস্তানের আইন মন্ত্রী হয়ে বসলেন — এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু তারপরেই শুরু হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা । 

পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার হওয়ার ঠিক পরে অর্থাৎ – ১৯৪৭ সালের ১৬ আগস্টের পর থেকেই হিন্দুদের উপরে নেমে এলো অমানুষিক অত্যাচার। বিশেষ করে, ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে – সব থেকে বেশী অত্যাচার নেমে এল গরীব নমঃশূদ্র জাতের উপরে।

কারণ ততদিনে উচ্চবর্নের হিন্দু হয় সীমান্ত পেড়িয়ে ভারতে পালিয়েছেন, নয়তো মরেছেন অথবা কিছু তরবারীর সামনে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন। নমঃশুদ্র জাতের মেয়ে বউদের উপরে ধর্ষনের সব সীমা ছাড়িয়ে গেল। দক্ষিণ বাংলাদেশের ভোলা দ্বীপে নমঃশুদ্র জেলে মেয়েদের আট থেকে সত্তর বছর বয়স্ক প্রায় দুই হাজার মেয়ে বউকে একইদিনে দুপুরে গনহারে ধর্ষণ করা হল, একই সাথে মাঠে শুইয়েও ধর্ষণ চলল।

সর্বত্র হিন্দু মেয়ে বউদের উপরে বিশেষ করে তপশিলী মেয়ে বউদের তাঁদের বাড়ির উঠোনেই ধর্ষণ করা হতে লাগল – আবার রাতের বেলা শিশু পুত্র কে মেরে ফেলা হবে এই ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হতে লাগল — রাত দশটায় নিয়ে যাওয়া হতে লাগলো আর ফেরত দেওয়া হল ভোরের বেলা – স্বামী পুত্রের প্রাণ রক্ষায় তপশীলি মেয়ে বউরা মুখ বুজে সেই পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে লাগল।

যোগেন মন্ডলের ছিল দুই মেয়ে আর বউ। অবস্থা বেগতিক দেখে যোগেন মন্ডল তার মেয়ে বউকে নিয়ে তাঁর কথিত “প্রাণপ্রিয়” নমঃশূদ্র গরীব ভাই বোনেদের ফেলে রেখে, নমঃশুদ্র মেয়ে বউদের হায়নার মুখে রেখে পালিয়ে কলকাতায় এলেন… সেই হিন্দুদের কাছে সেই হিন্দুস্থানের মাটিতে। বলা হয় যে খোদ যোগেন মন্ডলের 

নিজের মেয়েকেও পাশবিক ধর্ষণ করা হয় বাংলাদেশে।  তারপর কলকাতায় এসে তার চিকিৎসা হয়!

যা এককালে তাঁর কাছে চক্ষুশূল ছিল সেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বারাসাতে তাকে আশ্রয় নিতে হয় । বাংলাদেশে পড়ে রইল তাঁর প্রায় দেড় কোটি হতদরিদ্র নমঃশূদ্র জাতের ভাই বোনেরা৷ যারা তার কথা শুনে ১৯৪৭ এ দেশভাগের সময়েও ভারতে আসার সুযোগ থাকা স্বত্বেও ভারতে আসেননি। অবশেষে, তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝলেন – “ঐ দেশে ( পুর্ব পাকিস্থান/ অধুনা বাংলাদেশ) আর হিন্দু থাকতে পারবে না”…।

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ভাবুন একবার, একটি দেশের এক আইন মন্ত্রী শুধুমাত্র হিন্দু হবার কারনে প্রান ভয়ে রাতে বউ মেয়ে নিয়ে অন্ধকারে অন্য একটি দেশে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে তৎকালীন পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান’কে তাঁর পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন! এই হল সেকুলার বিপ্লব। আর – এই হল এদের বিচার আর চিন্তা ধারা।

জিন্নাহর অঙ্গীকারে যোগেনের প্রবল আস্থা ছিল। আর যোগেনের আস্থার কারণেই পূর্ববঙ্গের লাখ লাখ নমশূদ্র ও দলিত ভারতে পাড়ি জমায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে থেকে গিয়েছিল তারা। কিন্তু লিয়াকত আলী খান মন্ত্রিসভা ক্রমে জিন্নাহর অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে যেতে থাকলে এবং পূর্ব পাকিস্তানে দলিত তফসিলিদের ওপর নিপীড়ন নেমে এলে হতাশ ও বিক্ষুব্ধ যোগেন কেবল যে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন তা-ই নয়, পাকিস্তান ভূমিও ত্যাগ করেন। সময়টা তখন ১৯৫০-এর অক্টোবর।

হয়তো প্রায় একই কারণে আজও বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, পাকিস্তানে যোগেন মণ্ডল বিস্মৃত। পশ্চিমবঙ্গের বর্ণহিন্দুদের বিবেচনায়, যোগেনের কারণেই পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তান হয়েছিল। যে জন্য তারা যোগেনকে বলতেন ‘যোগেন আলী মোল্লা’।

যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের পদত্যাগপত্র

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া হিন্দু সমাজের অবস্থা উন্নয়নের জন্য আমার প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর চরম হতাশা এবং দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আপনার মন্ত্রীসভা থেকে পরদত্যাগ করছি। আমার মনে হয় আমার জানানো উচিত কেন ভারতীয় উপমহাদেশের এই ক্রান্তিকালে আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম।

১। আমার পদত্যাগের পিছনের কারণগুলো বলার আগে, আমার মনে হয় মুসলিম লীগের সাথে আমার সহযোগিতাকালে কি কি ঘটেছিল সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো বলা উচিত। ১৯৪৩ এর ফেব্রুয়ারিতে লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সাথে কথা হয়। আমি তাদের সাথে বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হই। ১৯৪৩ সালের মার্চে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার পতনের পর ২১ জন নমঃশূদ্র সদস্যের প্রত্যক্ষ সম্মতিতে তদানীন্তন মুসলিম লীগের নেতা কাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৩ এর এপ্রিলে আবার মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আমাদের সমর্থনের পিছনে কিছু শর্ত ছিল। এর ভিতর ছিল মন্ত্রীসভায় তিনজন নমঃশূদ্র মন্ত্রীকে নিয়োগ, নমঃশূদ্রদের লেখাপড়ার উন্নয়নে ৫ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান এবং সরকারী চাকুরিতে কোটা প্রচলন করা।

২। এসব শর্তের বাইরেও মুসলিম লীগকে সহায়তার পেছনে আমার কিছু প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, বাঙ্গালী মুসলিমদের সাথে নমঃশূদ্রদের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে। মুসলিমরা ছিল মূলত কৃষক-শ্রমিক, অস্পৃশ্যরাও তাই। মুসলিমদের একটি অংশের মত নমঃশূদ্রদের একটি অংশও ছিল জেলে। দ্বিতীয়ত, তারা উভয়েই ছিল লেখাপড়ার দিক দিয়ে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী। আমাকে বোঝানো হয়েছিল যে লীগ এবং এর মন্ত্রিসভার সাথে আমার সহযোগিতা বিশাল পরিসরে আইনগত এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে। এই পদক্ষেপসমূহ ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধাকে আমলে না নিয়ে বাংলার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর পারস্পারিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে এবং সাম্প্রদায়িক শান্তি-সৌহার্দ্য আরো মজবুত হবে, এমনটিই বলা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা যায় যে খাজা নাজিমুদ্দিন তার মন্ত্রীসভায় অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের ৩ জন সদস্যকে নিয়েছিলেন। তিনি আমার এই সম্প্রদায় থেকে ৩ জনকে সংসদ সচিব হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছিলেন।

সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভা:

৩। মার্চ, ১৯৪৬ এর সাধারণ নির্বাচনের পর জনাব এইচ. এস. সোহরাওয়ার্দী সেই মাসেই লীগের সংসদ নেতার পদ পান এবং এপ্রিল, ১৯৪৬ এ লীগের মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ফেডারেশনের টিকেটে কেবলমাত্র আমিই আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচনে জয়লাভ করতে সক্ষম হই। আমি জনাব সোহরাওয়ার্দীর মন্ত্রীসভার অন্তর্ভূক্ত ছিলাম। সেই বছরের ১৬ আগস্ট কলকাতায় মুসলিম লীগ কর্তৃক ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন দিবস’ পালিত হয়। আপনার জানা আছে যে শেষ পর্যন্ত এটা এক হত্যাযজ্ঞে রূপ নেয়। হিন্দুরা লীগের মন্ত্রীসভা থেকে আমার পদত্যাগপত্র দাবী করে। আমি প্রতিদিন চিঠির মাধ্যমে হুমকি পেতে থাকি। আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি আমার পথে অবিচল থাকি। তদুপরি, আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পত্রিকা ‘জাগরণ’ এর মাধ্যমে নমঃশূদ্রদের কাছে আবেদন জানাই তারা যেন নিজেদের কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের এই রক্তাক্ত লড়াই থেকে দূরে রাখে। আমার অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিবেশীগণ যেভাবে আমাকে ক্রুদ্ধ হিন্দুদের হাত থেকে নিরাপত্তা দেন তা আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। কলকাতা হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৪৬ এর অক্টোবরে শুরু হয় নোয়াখালীর দাঙ্গা। সেখানে শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে(নমঃশূদ্র সহ) হত্যা করা হয় এবং জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়। হিন্দু মহিলারা অপহরণ এবং ধর্ষণের শিকার হন। আমার সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরও জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ত্রিপুরা ও ফেনী যাই এবং কিছু দাঙ্গাপীড়িত এলাকা পরিদর্শন করি। হিন্দুদের দুর্দশা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করে, কিন্তু আমি মুসলিম লীগের সাথে সহযোগিতা চালিয়ে যাই। কলকাতার বিশাল হত্যাযজ্ঞের পরপর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটি আয়োজিত হয়। শুধুমাত্র আমার চেষ্টা দ্বারাই কংগ্রেসের পক্ষের চারজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্য এবং চারজন অস্পৃশ্য সদস্যের সমর্থন যোগাড় করা সম্ভব হয় যা ব্যতীত মন্ত্রীসভার পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী।

৪। ১৯৪৬ এর অক্টোবরে সম্পূর্ণ অননুমিতভাবেই জনাব সোহরাওয়ার্দীর মাধ্যমে আমার কাছে প্রস্তাব আসে ভারতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একটি পজিশন গ্রহণ করার জন্য। এক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়। বেশকিছু সময় দোদুল্যমান থাকার পর আমি এই শর্তে রাজি হই যে আমার নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকার যদি আমাকে ঐ জায়গায় না চান তবে আমাকে পদত্যাগের অনুমতি প্রদান করা হবে। ভাগ্যক্রমে, তিনি লন্ডন থেকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁর অনুমতি প্রদান করেন। আইনসভার সদস্য হিসেবে যোগদানের লক্ষ্যে দিল্লীতে রওনা দেয়ার আগে আমি তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীকে রাজি করাতে সক্ষম হই যে তিনি আমার স্থানে ২ জন মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভায় জায়গা দিবেন। তিনি নমঃশূদ্রদের ফেডারেশন গ্রুপ থেকে ২ জনকে সংসদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতেও সম্মত হন।

৫। আমি ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর মধ্যবর্তী সরকারে যোগ দেই। এক মাস পর কলকাতাতে আমি যাই। তখন জনাব সোহরাওয়ার্দী আমাকে জানালেন পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জায়গাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কথাঃ বিশেষ করে গোপালগঞ্জের কিছু জায়গাতে যেখানে নমঃশূদ্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন সেই অঞ্চলগুলো পরিদর্শনে যেতে এবং মুসলিম ও নমঃশূদ্রদের মাঝে সমঝোতা করতে। সেইসব এলাকার নমঃশূদ্ররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি কয়েক ডজন সভা করে তাদেরকে সেই পথ থেকে দূরে ছড়িয়ে আনি। একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে সে এলাকা মুক্তি পায়।

৬। কয়েকমাস পর ব্রিটিশ সরকার তাদের ৩ জুন ঘোষণা (১৯৪৭) প্রদান করে যাতে ভারত ভাগ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনার অবতারণা করা হয়। পুরো দেশ, বিশেষ করে সমগ্র অমুসলিম ভারত এতে হতবাক হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবিকে আমি সবসময় শুধুমাত্র দামাদামির অংশ হিসেবেই দেখে এসেছি। যদিও আমি বিশ্বাস করি যে ভারতের সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে উঁচুবর্ণের হিন্দুদের অন্যায় প্রভাবের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ক্ষোভ ন্যায়সঙ্গত, এ বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার যে পাকিস্তানের জন্ম সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান কখনোই করবে না। বরঞ্চ, এটা কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও শত্রুতা বৃদ্ধিই করবে। পাশাপাশি আমি এই ধারণা পোষণ করতাম যে পাকিস্তানের সৃষ্টি মুসলিমদের অবস্থা উন্নয়ন করবে না। দেশভাগের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে আসবে দরিদ্রতা, অশিক্ষা এবং উভয় দেশের জনগণের দুর্দশা যা অনির্দিষ্টকাল না হলেও বহুদিন ধরে চলতে থাকবে। আমার আশঙ্কা ছিল পাকিস্তান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ এবং অনুন্নত দেশগুলোর একটিতে পরিণত হবে।

লাহোর ঘোষণা:

৭। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম যে পাকিস্তানকে ইসলামী শরিয়ত এবং নিয়ম-নীতির উপর ভিত্তি করে একটি শতভাগ ‘ইসলামী’ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস করা হবে, যা এখন করা হচ্ছে। আমার অনুমান ছিল মার্চ ২৩, ১৯৪০ এ মুসলিম লীগের গৃহীত ঘোষণা অনুসারে সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটানো হবে। অন্যান্য জিনিসের মাঝে এই ঘোষণায় ছিলঃ ১- ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থিত স্থানসমূহ প্রয়োজনীয় ভূমির অদল-বদলের মাধ্যমে এমনভাবে ভাগ করা হবে যেন ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের মত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে স্বাধীন-সার্বভৌম একাধিক রাষ্ট্র গঠন করা যায় এবং ২- এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অন্যান্য স্বার্থ-অধিকার রক্ষার নিমিত্তে তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধানে যথেষ্ঠ, কার্যক্ষম ও আবশ্যিক নিরাপত্তা প্রদানের ধারা যুক্ত করা হবে। এই ঘোষণার মধ্যে অন্তর্নিহিত ছিল ক) উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বের মুসলিম অঞ্চলগুলোতে ২টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হবে, খ) এই রাষ্ট্রগুলোর অংশসমূহ হবে স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত, গ) সংখ্যালঘুদের প্রদত্ত নিশ্চয়তা তাদের স্বার্থ ও অধিকার সংশ্লিষ্ট হবে এবং জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে তা ভূমিকা রাখবে এবং ঘ) সংবিধানে সংখ্যালঘুদের এই সাংবিধানিক সুবিধাদি সংখ্যালঘুদের নিজেদের দ্বারাই নির্বাচিত হবে। গণপরিষদের সভাপতি হিসেবে কায়েদ-ঈ-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর ১১ আগস্ট ১৯৪৭ এ দেয়া ভাষণ এই ঘোষণা ও লীগের নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে আমার বিশ্বাস আরো পোক্ত করে। এই ভাষণে তিনি হিন্দু ও মুসলিম উভয় পক্ষকেই সমানভাবে বিবেচনার দৃঢ় আশ্বাস প্রদান করেন এবং তাদের আহ্বান করেন এটা মনে রাখতে যে তারা সবাই পাকিস্তানী। ইসলামিক রাষ্ট্র ও তার মুসলিম নাগরিকদের সার্বক্ষণিক হেফাজতে সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ণাংঙ্গ মুসলিম এবং ‘জিমি’দের মধ্যে কোনোরূপ ভেদাভেদের প্রশ্নই ছিলনা। এটা প্রতীয়মান হয় যে আপনার জ্ঞাতসারে এবং সম্মতিক্রমে কায়েদ-ঈ-আজমের ইচ্ছা ও মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হিসেবে এই সকল ওয়াদার বরখেলাপ করা হচ্ছে যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ক্ষতি ও অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলা ভাগ হল:

৮। এই প্রসঙ্গে এটা বলে রাখা ভালো যে বাংলা ভাগের সময় আমাকে প্রবল বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। এই ধরণের ক্যাম্পেইনের ফল আমি শুধু বিরোধিতার সম্মুখীন হই নাই, হয়েছি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং অবজ্ঞার শিকার। হতাশার সাথে আমি সেই সব দিনের কথা চিন্তা করতে চাই যখন ভারতবর্ষের ৩২ কোটি হিন্দু আমাকে হিন্দু এবং হিন্দু ধর্মের শত্রু বানিয়ে ছিল।আমি ছিলাম পাকিস্তানের প্রতি একান্ত অনুগত এবং অবিচল আস্থা। আমি চিন্তা করতাম পাকিস্তানের ৭০ লক্ষ হিন্দু দলিতের কথা যারা ছিল আমার সাথে। তারাই আমাকে সর্বদা সাহস যুগিয়েছে এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

৯। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর আপনি পাকিস্তান মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আমি এর একজন সদস্য ছিলাম। খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব বাংলার জন্য একটি প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা গঠন করেন। আগস্টের ১০ তারিখে আমি করাচীতে খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে কথা বলে পূর্ব বাংলার মন্ত্রীসভায় নমঃশূদ্রদের মধ্যে থেকে ২ জনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি কিছুদিন পরেই তা করবার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আপনার, খাজা নাজিমুদ্দীন এবং পূর্ব বাংলার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সাথে আমার অপ্রীতিকর এবং হতাশাজনক আপসরাফা চলে। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে খাজা নাজুমুদ্দীন এই-সেই অজুহাতে ব্যাপারটিকে এড়িয়ে চলছেন তখন আমি একইসাথে ক্রুদ্ধ এবং অধৈর্য হয়ে পড়লাম। আমি এই ব্যাপারে পাকিস্তান মুসলিম লীগে এবং এর পূর্ব বাংলা শাখার সভাপতিদ্বয়ের সাথেও আলোচনা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ঘটনাটি আপনার গোচরে আনি। আপনি সাগ্রহে আমার উপস্থিতিতে আপনার বাসায় খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করেন। খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকায় ফিরে অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত একজনকে মন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত হন। তার আশ্বাসের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে ওঠায় আমি কাজটি সম্পাদনের নির্দিষ্ট সময়-সূচী জানতে চাই। আমি জোর দাবী জানাই এই ব্যাপারে এক মাসের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, অন্যথায় পদত্যাগের ব্যাপারে আমার সিধান্তে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা দুজনেই এই প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু হায়, সম্ভবত আপনার মুখের কথা আপনার মনের প্রতিচ্ছবি ছিল না। খাজা নাজিমুদ্দীন তার ওয়াদা পালন করেন নি। জনাব নুরুল আমিন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হবার পর আমি তার কাছেও এই বিষয়টি নিয়ে যাই। তিনিও সেই পুরাতন এড়িয়ে চলার নীতি চালিয়ে যান।

১৯৪৯ এ আপনার ঢাকা আগমনের প্রাক্কালে যখন আমি ব্যাপারটি আবারো আপনার গোচরে আনি আপনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে পূর্ব বাংলায় সংখ্যালঘু মন্ত্রী অবশ্যই নিয়োগপ্রাপ্ত হবে। আপনি আমার কাছে বিবেচনার জন্য ২/৩ জনের নামও চান। আপনার চাওয়ার প্রতি সশ্রদ্ধ বাধ্যবাধকতা প্রদর্শন করে আমি আপনার কাছে পূর্ব বাংলা পরিষদের ফেডারেশন গ্রুপ এবং ৩ জনের নাম সুপারিশ পূর্বক চিঠি পাঠাই। আপনি ঢাকা থেকে ফেরার পর আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে আপনি কঠিন মনোভাব প্রকাশ করেন এবং “নুরুল আমিনকে দিল্লী থেকে ফিরতে দাও” কেবলমাত্র এই মন্তব্যটুকু করেন। কিছুদিন পর আমি আবার বিষয়টি তুলে ধরি, কিন্তু আপনি তা এড়িয়ে যান। তখন আমি এই উপসংহারে আসতে বাধ্য হই যে আপনি বা নুরুল আমিন কেউই চান না যে পূর্ব বাংলা মন্ত্রীসভায় কোনো নমঃশূদ্র ব্যক্তি নিয়োগ পাক। এছাড়াও আমি দেখতে পারছিলাম যে জনাব নুরুল আমিন এবং পূর্ব বাংলা লীগের কিছু নেতৃবৃন্দ নমঃশূদ্রদের ফেডারেশন সদস্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছিলেন। আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে আমার নেতৃত্ব এবং বিশাল জনপ্রিয়তাকে খারাপ চোখে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে নমঃশূদ্রদের স্বার্থ সংরক্ষণে আমার স্পষ্টবাদিতা, তদারকি এবং আন্তরিক কার্যকলাপ পূর্ব বাংলা সরকার এবং লীগের কিছু নেতার মনে বিরক্তির সৃষ্টি করে। কিন্তু এসব কিছুর পরোয়া না করে আমি পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণ করি।

হিন্দু বিদ্বেষী নীতি:

১০। বাংলা ভাগের প্রসঙ্গ উঠতেই নমঃশূদ্ররা এর বিপদজনক ফলাফলের কথা অনুমান করে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীর কাছে তারা কিছু প্রতিনিধি পাঠালে তিনি সানন্দে একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করেন যাতে বলা ছিল নমঃশূদ্ররা ভোগ করছে এমন কোনো সুবিধা ও অধিকারই কর্তন করা হবেনা, বরং আরো বৃদ্ধি পাবে। জনাব সোহরাওয়ার্দী এই আশ্বাস কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ভাবেই দেননি, লীগ মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দিয়েছেন।অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে ভারত ভাগের পরে, বিশেষ করে কায়েদ-ঈ-আজমের মৃত্যুর পর থেকে নমঃশূদ্ররা কোনো বিষয়েই তাদের প্রাপ্য বুঝে পায়নি। আপনার স্মরণে থাকবে যে আমি সময়ে সময়ে এই অস্পৃশ্য জাতিগোষ্ঠীর দুর্দশার চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরেছি। বেশকিছু ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার অকার্যকর প্রশাসনের চিত্র আপনার কাছে ব্যাখ্যা করেছি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দাখিল করেছি। অসার ভিত্তির উপর নির্ভর করে পুলিশের বর্বর নৃশংসতার ঘটনাসমূহও আমি আপনার নজরে এনেছি। পূর্ব বাংলার সরকার বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন ও মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের একাংশের হিন্দু বিদ্বেষী নীতির কথা আপনাকে জানাতেও আমি কুণ্ঠাবোধ করিনি।

কিছু ঘটনা:

১১। প্রথম যে ঘটনা আমাকে মর্মাহত করে তা ঘটেছিল গোপালগঞ্জের দিঘারকুল গ্রামে। সেখানে স্থানীয় নমঃশূদ্রদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা মিথ্যা অভিযোগে গুজব রটিয়ে বর্বরতা চালায়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে একজন মুসলিম জেলে মাছ ধরতে জাল ছুঁড়ে মারে। একজন নমঃশূদ্র একই উদ্দেশ্যে জাল ছুঁড়ে মারে। এই নিয়ে দুইজনের ভিতর কথা কাটাকাটি হয়। মুসলিম যুবক গ্রামে গিয়ে মিথ্যা গুজব রটায় যে তাকে এবং এক মহিলাকে নমঃশূদ্ররা আক্রমণ করেছে। গোপালগঞ্জের উপ জেলা প্রশাসক সে সময় নৌকায় করে সে জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি কোন তদন্ত ছাড়াই সশস্ত্র পুলিশ পাঠান নমঃশূদ্রদের দমন করতে। তাদের সাথে স্থানীয় মুসলিমরা যোগ দেয়। তারা নমঃশূদ্র হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালায়। তাদের হামলায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়, প্রচুর নারী পুরুষ আহত হয়। শেষ সহায় সম্বলটুকু লুট করে নিয়ে যায় মুসলিমরা। এক হিন্দু মহিলা যিনি কিনা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা তাকে পিটিয়ে গর্ভপাত করে দেয় তারা। বিশাল এলাকা জুড়ে আতংক সৃষ্টি হয়।

১২। হিন্দুদের উপর পুলিশ দিয়ে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের পরের ঘটনা ঘটে ১৯৪৯ সালের শুরুতে। বরিশাল জেলার গৌরনদীর পুলিশ সুপারের অধীনে। পুলিশের একদল সোর্স তাদের প্রতিপক্ষকে কমিউনিস্ট বলে চালিয়ে দেয় পুলিশের কাছে। তারা এও বলে ঐ পক্ষ পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করবে। গৌরনদী থানার ওসি এই শুনে কোনরকম সত্যতা যাচাই না করে হেডকোয়ার্টার থেকে পুলিশের রিসার্ভ ব্যাটালিয়ন নিয়ে আসেন। পুলিশ বাহিনী বিশাল এলাকা অবরুদ্ধ করে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ চালায়। প্রচুর লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। শিক্ষক এবং ছাত্রদের কমিউনিস্ট সন্দেহে আটক করা হয়। তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। আমি ঘটনাটা জানতে পারি কারণ ঘটনাস্থল আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই। আমি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে জানাই এবং নির্দেশ দেই ঘটনা তদন্তের জন্য। কিন্তু আমার চিঠিতে কোন কাজ হয় নাই। আমি তখন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ মহল মানে আপনার কাছে ঘটনাটা জানাই। কিন্তু আপনি কোন ব্যবস্থা নেন নাই।

সামরিক বাহিনী দিয়ে মহিলাদের উপর নির্যাতন:

১৩। সিলেট জেলার হাবিবগড়ের নিরীহ হিন্দুদের উপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর অত্যাচারের বিষদ বিবরণ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। নিরীহ হিন্দু এবং মহিলাদের উপর  নির্মম নির্যাতন চলে। বিশেষ করে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা এর শিকার হয়। মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় এবং তাদের বাড়িঘরে লুটপাট চলে। পুলিশের সাথে স্থানীয় মুসলিমরা যোগ দেয়। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হিন্দু মহিলাদের নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। আমি আপনার কাছে এই ঘটনার কথাও রিপোর্ট করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনি তদন্তের আশ্বাস দিয়েও এর কোন সুরাহা করেন নাই।

১৪। রাজশাহীর নাচোলে একটি ঘটনার কথা বলি। কমিউনিস্টদের দমনের নামে পাকিস্তানের পুলিশ স্থানীয় মুসলিমদের নিয়ে হিন্দুদের উপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের সম্পদ লুটপাট করে। স্থানীয় সাঁওতালরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। তারা সেখানে তাদের উপর চালানো বর্বরতার কথা বলে।

১৫। খুলনা জেলার মোল্লারহাটের অন্তর্গত কালশিরা গ্রামে ২০ ডিসেম্বর,১৯৪৯ এ ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নির্মম ও ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো এসব ঘটনার একটি উদাহরণ। সেদিন গভীর রাত্রে কালশিরা গ্রামের জনৈক জয়দেব ব্রাহ্মা এর বাড়িতে সন্দেহজনক কমিউনিস্টদের খোঁজে ৪ জন কনস্টেবল হানা দেয়। পুলিশের আসার সংবাদে জনা ছয়েক তরুণ, কমিউনিস্ট বা সাধারণ, বাড়িটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ বাড়িতে ঢুকে জয়দেব ব্রাহ্মার স্ত্রী এর উপর আক্রমণ চালালে তার চিৎকার তার স্বামী এবং বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া তার কিছু সঙ্গীর কানে আসে। মরিয়া হয়ে তারা গৃহে পুনঃপ্রবেশ করে এবং ৪ জন কনস্টেবলকে কেবলমাত্র একটি বন্দুক সহ পায়। সম্ভবত এই দৃশ্য তাদের প্রণোদিত করে এবং তাদের আঘাতে অস্ত্রধারী কনস্টেবলটি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তারা তারপর দ্বিতীয় কনস্টেবলের উপরও হামলা চালালে বাকি ২ জন সেখান থেকে পালিয়ে যেয়ে আশেপাশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং সফল হন। কিন্তু গ্রামবাসী এগিয়ে আসবার আগেই রাতের অন্ধকারে অপরাধীগণ মৃতদেহসহ গা ঢাকা দেয়। পরদিন বিকেলে খুলনার এস.পি. একদল মিলিটারি এবং আর্মড পুলিশসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ইতোমধ্যে অপরাধীগণ এবং বুদ্ধিমান প্রতিবেশীগণ অত্র এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রামবাসীই তাদের নিজ ঘরেই রয়ে যায় কারণ তারা ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং পরবর্তীতে কি ঘটতে পারে সে সম্বন্ধে তাদের কোনো ধারণাই ছিলনা।
এর পর এসপি, মিলিটারি ও আর্মড পুলিশ পুরো গ্রামজুড়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে মারধর শুরু করে এবং আশেপাশের মুসলিমদের লুটপাটে প্ররোচিত করে। বেশকিছু মানুষ নিহত হয়, বহু হিন্দু নর-নারীকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়। বাসাবাড়ির দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙচুর করা হয়, পূজোর স্থান অপবিত্র ও ধ্বংস করে দেয়া হয়। পুলিশ, মিলিটারি এবং স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য কর্তৃক হিন্দু মহিলারা ধর্ষিত হন। এভাবে শুধুমাত্র এক থেকে দেড় মাইল দৈর্ঘ্যের গ্রাম, এক বিরাট জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল কালশিরাই নয়, এর আশেপাশের বেশকিছু নমঃশূদ্র গ্রামেও বাস্তবিক অর্থেই নরক নেমে আসে। কালশিরা গ্রামটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কখনোই কমিউনিস্ট কার্যকলাপের জন্য সন্দেহের তালিকাভুক্ত ছিল না। কালশিরা থেকে ৩ মাইল দূরবর্তী ঝালরডাঙ্গা গ্রামটি কমিউনিস্ট কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ঘটনার দিন এই গ্রামটিতে সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের ধরতে পুলিশের এক বিরাট বাহিনী হানা দিলে তাদের কিছু সংখ্যক পালিয়ে কালশিরা গ্রামের পূর্বোল্লিখিত বাড়িতে আশ্রয় নেয় যা তাদের কাছে নিরাপদ আত্মগোপনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।

১৬। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি কালশিরা গ্রাম এবং তার সংলগ্ন গ্রামগুলো পরিদর্শন করতে যাই। খুলার পুলিশ সুপার এবং মুসলিম লীগের নেতারা আমার সাথে ছিলেন। আমি যখন কালশিরাতে পৌঁছাই এক ধ্বংসপ্রাপ্ত বিরানভূমি দেখি। পুলিশ সুপ্র জানা এখানে ৩৫০ বাড়ি ছিল। এর ভিতর মাত্র ৩ টি বাড়ি টিকে আছে। সব লুটপাট করা হয়েছে। আমি পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, প্রধান সচিব, পুলিশ প্রধান এবং আপনার কাছে ঘটনাটি জানিয়ে ছিলাম।

১৭। কালশিরার ঘটনা পশ্চিমবাংলার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে হিন্দুদের মাঝে উত্তেজন দেখা দেয়। এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হিন্দুরা সেখানে গিয়ে এই ভয়াবহতার কথা বললে সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়।

ফেব্রুয়ারির হিংসার কারণগুলো:

১৮। এটা স্বীকার করতেই হবে কালশিরার মত পূর্ব বাংলার হানাহানির ফলে পশ্চিম বাংলাতেও সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখা দেয়। পূর্ব বাংলার মিডিয়ার খবর সেখানে আলোড়ন ফেলে। ১৯৫০ এর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক পরিষদে বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা স্পীকারের কাছে অনুমতি চান কালশিরা এবং নাচোলের পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূরক আলোচনা করার জন্য। কিন্তু অনুমতি নিলে নাই। সদস্যরা প্রতিবাএ ওয়াক আউট করেন। কপ্রাদেশিক পরিষদের হিন্দু সদস্যদের এই প্রতিবাদ মুসলিম  মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং অফিসারদের রুষ্ট করে। সম্ভবত ১৯৫০ এর ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার হিংসার কারণ এটাই।

১৯। ১৯৫০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টা। ঢাকায় পূর্ব বাংলার সচিবালয়ে একজন মহিলাকে হাজির করা হয়। তার স্তন কাটা ছিল। বলা হয় সে কলকাতা দাঙ্গার শিকার। সাথে সাথে সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তারা মিছিল বের করে এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক শ্লোগান দেয়। মিছিল ক্রমে বড় হয় এবং একসময় এক মাইল লম্বা হয়। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে মিছিল শেষ হয় দুপুর বারোটার দিকে। সেখানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়া হয়। এর ভিতর ছিল কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।

সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে যখন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই মিছিল বের করেছিলেন তখন পূর্ব বাংলার প্রধান সচিব পশ্চিমবাংলার প্রধান সচিবের সাথে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন খোদ সচিবালয়ে কিভাবে দুই বাংলার সাম্প্রদায়িক হিংসা কমানো যায় সেই বিষয়ে!!!

সরকারী কর্মকর্তাদের মদদে লুটেরাদের হামলা:

২০।  দাঙ্গা শুরু হল সেদিন দুপুর একটার দিকে। সারা শহরে একই সাথে। সারা শহরে হিন্দুদের হত্যা, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে। মুসলিমরা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই এইসব অপরাধ চালায়। হিন্দুদের স্বর্ণের দোকানে পুলিশের উপস্থিতিতেই লুটপাট চলে। এমনকি তারা লুটেরাদের দিকনির্দেশনাও দেয় কিভাবে লুটপাট করতে হবে সে বিষয়ে। আমি সেদিন অর্থাৎ ১৯৫০ এর ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসে পৌঁছাই বিকাল পাঁচটার দিকে। আমি কাছ থেকেই ঘটনাগুলো দেখি। যা দেখেছি এবং যা শুনেছি সত্যি তা ছিল মর্মস্পর্শী এবং হৃদয়বিদারক।

২১। ঢাকার দাঙ্গার পেছনে প্রধান কারণ ছিল ৫টি:

(i) কালশিরা এবং নাচোলের ঘটনাসমূহের উপর আনিত ২টি মুলতবি প্রস্তাব গণপরিষদে প্রত্যাখ্যাত হলে হিন্দু প্রতিনিধিদের স্পর্ধিত ওয়াক আউটের জন্য হিন্দুদের শিক্ষাপ্রদানের উদ্দেশ্যে

(ii)  সংসদীয় দলে সোহরাওয়ার্দী গ্রুপ এবং নাজিমুদ্দীন গ্রুপের মাঝে দিনকে দিন বেড়ে চলা মতবিরোধ ও পার্থক্য

(iii) পূর্ব বাংলার মন্ত্রণালয় এবং মুসলিম লীগ হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষের নেতাদের দ্বারা পূর্ব-পশ্চিম দুই বাংলার মিলনের স্বপক্ষে একটি আন্দোলন শুরু হতে পারে এমন ভয়ে ভীত ছিল। তারা এই মিলন রোধ করতে চাইছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে পূর্ব বাংলায় যেকোনো বড় আকারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রভাব পশ্চিম বঙ্গেও পড়বে এবং সেখানে মুসলিমদের হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। উভয় বঙ্গে এরূপ দাঙ্গা দুই বাংলার মিলনকে অসম্ভব করে তুলবে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল।

(iv) পূর্ব বাংলার বাঙালী এবং অবাঙালী মুসলিমদের মধ্যে বৈরিতা ক্রমশ বাড়ছিল। এটা রোধের একমাত্র উপায় ছিল পূর্ব বঙ্গের মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়ানো। ভাষার ব্যাপারটিও এর সাথে জড়িত ছিল এবং

(v) অবমূল্যায়নে অসম্মতি এবং ইন্দো-পাকিস্তান ব্যবসার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার ফলাফল পূর্ব বাংলায় অনুভূত হচ্ছিল, প্রথমে শহরাঞ্চলে পরবর্তীতে গ্রামাঞ্চলেও। মুসলিম লীগের সদস্য এবং কর্মকর্তাগণ এই আসন্ন অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিহাদের সূচনা করতে চেয়েছিলেন।

Previous Post

স্বামীর অনুপস্থিতিতে গভীর রাতে বিবাহিত যুবকের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত বধূ, শাশুড়ির নজরে পড়তেই বেধে গেলো হুলুস্থুল কান্ড 

Next Post

কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া সুরক্ষায় কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রদর্শিত হল “দ্য বেঙ্গল ফাইলস” “সত্যকে চেপে রাখা যায় না” : বললেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী 

Next Post
কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া সুরক্ষায় কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রদর্শিত হল “দ্য বেঙ্গল ফাইলস” “সত্যকে চেপে রাখা যায় না” : বললেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী 

কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া সুরক্ষায় কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রদর্শিত হল "দ্য বেঙ্গল ফাইলস" "সত্যকে চেপে রাখা যায় না" : বললেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী 

No Result
View All Result

Recent Posts

  • ফ্রান্সের নিওর্টে ২০ বছরের আফগান শরণার্থীর ধর্ষণে মৃত্যু ৮০ বছরের বৃদ্ধার  
  • স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি হারিয়ে এখন ঝালমুড়ি বিক্রেতা, রাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির জেরে করুন পরিনতির মুখে মালদার দম্পতি ; দুষছেন মমতা ব্যানার্জিকে 
  • “বিন্দি” না লাগানোর জন্য প্রশ্ন করায় বলেছিলেন “মাই চয়েস”, এখন আবুধাবির মসজিদে ‘আবায়া’ পরে পর্যটনের প্রচার করে ট্রোল হচ্ছেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন ; সঙ্গে স্বামী রনবীর সিং ইসলামি কায়দায়
  • হিন্দু হওয়ার অপরাধে স্ত্রীকে চাকরিচ্যুত করেছে ইসলামী ব্যাঙ্ক, উদ্বেগে হৃদরোগে মৃত্যু স্বামীর
  • উত্তরবঙ্গ থেকে ভেসে যাওয়া কাঠের গুঁড়ি ‘চন্দন কাঠ’ বলে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিকোচ্ছে বাংলাদেশে
  • প্রচ্ছদ
  • রাজ্যের খবর
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলার খবর
  • বিনোদন
  • রকমারি খবর
  • ব্লগ

© 2023 Eidin all rights reserved.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • রাজ্যের খবর
    • কলকাতা
    • জেলার খবর
  • দেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলার খবর
  • বিনোদন
  • রকমারি খবর
  • ব্লগ

© 2023 Eidin all rights reserved.