জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),২২ নভেম্বর : গ্রামে বা আশেপাশের কোন জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো না হওয়ার জন্য বিষণ্ণতা গ্রাস করত পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির শ্যামনগরবাসীদের। কিছুটা সংকুচিত ভাবে তাদের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা অথবা আলোকসজ্জা দর্শন করতে ছুটে যেতে হয় সুদূর হুগলির চন্দননগর অথবা মানকুন্ডুতে। তাতে প্রকৃত আনন্দ থাকত না। ছেলেরা যেতে পারলেও পাড়ার মেয়েদের বা বাচ্চাদের সমস্যা থাকতই। তারা স্বাধীনভাবে যেতে পারত না। ফলে মনের মধ্যে আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল।
অবশেষে সেই আক্ষেপ দূর করতে এগিয়ে আসে গ্রামের সজল, উজ্জ্বল, তাপস, শ্যামল, সরজিতদের মত কিছু উঠতি যুবক। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চাঁদা তুলে অনাড়ম্বর পরিবেশে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। তাতেই গ্রামবাসীদের আনন্দের সীমা ছিল না। যতই হোক নিজেদের গ্রামের পুজো। এ এক আলাদা আনন্দ।
এসব বছর দশেক আগের ঘটনা। সেই শুরু। গ্রামবাসীদের সবার সহযোগিতায় মহাধুমধাম সহকারে আজও শ্যামনগরে চলে আসছে জগদ্ধাত্রী মায়ের আরাধনা।দীপাবলীর রেশ কাটতে না কাটতেই জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। গ্রামে নেমে আসে আলোকের ঝর্ণাধারা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে আট থেকে আশি সকলেই মেতে ওঠেন জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দে। যেন সর্বধর্মের সমন্বয় ঘটে যায়। অনাড়ম্বর পরিবেশে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এই পুজোর জৌলুস ও উদ্দীপনা বেড়েই চলেছে।
পুজোর কটা দিন আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের সমস্ত কচিকাচাদের সঙ্গে বহিরাগত শিল্পীরাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে গ্রামের সৌমেন, আদিত্য, তৃষাণজিৎ, সৌমজিৎ, সৌমাল্য, অর্নব, অদ্রিজা, অনুষ্কা, ইসিকা, সাথী, পাওমিদের আনন্দের সীমা থাকেনা। ফলে জগদ্ধাত্রী পুজোর তাৎপর্য অন্যমাত্রা লাভ করে।
অন্যান্যদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে গ্রামের মহিলাদের দেখতে পাওয়া যায়। কার্যত সন্ধ্যা থেকেই তারা অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে ভিড় জমায়। অন্য ধর্মের মানুষেরাও দূরে থাকেনা।
শুরু হয় থেকেই দশমীর দিন আয়োজন করা হয় নরনারায়ন সেবার। ওই দিন দুপুরে মায়ের অন্ন ভোগ বিতরণ করা হয়। গ্রামের সকল ধর্মের মানুষের সাথে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বহু মানুষ অন্ন ভোগ গ্রহণ করতে এদিন শ্যামনগর গ্রামে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অতনু ঘোষ বললেন,সবার সহযোগিতায় ধীরে ধীরে আমাদের গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। সেদিন আসতে বেশি দেরি নাই যখন দেখা যাবে চন্দননগর যাওয়ার পথে মানুষেরা আমাদের গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে আসবে।।