এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট ও ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জুলাই : মিষ কালো গায়ের রঙ ৷ ২-৩ ফুট দৈর্ঘের একটি সাপের শরীরের মাঝ বরাবর একটি লাঠি দিয়ে ধরে আছে জনৈক এক পুজারী । সাপটি পূর্ন বয়স্ক পুরুষ মানুষের হাতের তালু সমান ফনা তুলে তাঁকে সমানে ছোবল মারার চেষ্টা করছে । তার সঙ্গে হাড় হিম করা গোঁঙানি । ওই অবস্থায় পুরোহিত সাপের ফনায় সিঁদুর লাগিয়ে দিচ্ছেন । ঠিক তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে তখন প্রধান পুরোহিত । তিনি সুযোগ বুঝে সাপের মাথায় চাপিয়ে দিলেন ফুল বেলপাতা । করালেন দুগ্ধস্নান । রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা গ্রামে তখন হাজার খানেক মানুষের ভিড় দেখা গেল নাগদেবীর এই পুজো দেখার জন্য । অনেক শ্রদ্ধালু নিরাপদ দূরত্ব থেকে নিজেদের স্মার্টফোনে পুজোর ভিডিও রেকর্ডও করে রাখলেন । কেউটে প্রজাতির এই সাপকে স্থানীয়রা ‘ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবী’ বলেই ডাকেন । প্রতি বছর এই সময়ে ‘ঝাঁকলাই দেবীর’ পূজো উপলক্ষে মেতে ওঠেন মঙ্গলকোটের ও ভাতার ব্লকের একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা ।
দেখুন ঝাঁকলাই পূজো :
আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে পুজো হয় গ্রাম্য দেবী ঝাঁকলাইয়ের । মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা,মুশারু ও নিগনসহ ৬-৭ টি গ্রাম ছাড়াও ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর গ্রামে ধুমধাম করে পূজো হয় ঝাঁকলাই দেবীর । এক সময়ে মঙ্গলকোটের ওই ৭ গ্রামেই দেখা যেত কেউটে প্রজাতির এই সাপটিকে । কিন্তু বর্তমানে বড়পোশলা, ছোটপোশলা, মুশারু ও পলসোনা এই চার গ্রামেই সাপটিকে দেখতে পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা ।
গ্রামবাসীদের অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা আছে বিশেষ প্রজাতির এই সাপটির উপর । তাঁদের ধাারণ , ঝাঁকলাই কাউকে কামড়ায় না । আর কামড়ালেও ক্ষতস্থানে দেবীর মন্দিরের মাটি লেপে দিলেই বিষমুক্ত হয়ে যায় । এই বিশ্বাস নিয়েই ঝাঁকলাই নিয়ে ঘর করেন ওই চার গ্রামের বাসিন্দারা । পথে-ঘাটে,গৃহস্থ বাড়ির রান্নাঘর, এমনকি শোবার ঘরে পর্যন্ত সাপটির অবাধ বিচরণ ।
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেহুলা-লখিন্দরের পৌরানিক কাহিনী । পলসোনা গ্রামের প্রবীণ পুরোহিত তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বাপ-ঠাকুরদার কাছে শুনে এসেছি লখিন্দরকে দংশন করার পর লোহার বাসরঘরের ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে যখন কালনাগিনী পালানোর চেষ্টা করছিল সেই সময় বেহুলা সাপটিকে লক্ষ্য করে কাজললতা ছুড়ে মারে । আর তাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায় । আমাদের ঝাঁকলাই দেবীরও লেজ কাটা । বেহুলার অভিশাপেই মর্তে ঝাঁকলাই রুপে কালনাগিনীর আবির্ভাব ঘটেছে বলে বংশ পরম্পরায় আমরা শুনে আসছি ।’
যদিও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘সাপ বিনা কারনে কাউকে কামড়ায় না । সাপ খুব ঠান্ডা স্বভাবের হয় । এছাড়া ধর্মীয় কারনের জন্য ওই গ্রামগুলির মানুষেরা সাপকে বিরক্ত করেন না । তাই এভাবেই সকলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন । তবে কাউকে কামড়ালে তৎক্ষনাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত । কারন ওই সাপেরও বিষ আছে ।’।