জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,১৭ অক্টোবর : গত প্রায় এক দশক ধরে পাশাপাশি বাস করছেন রাজারহাট নিউটাউনের কে জি এন এনক্লেভের ‘আনন্দধারা’-র আবাসিকরা । ঘরোয়া পরিবেশে আবাসিকরা আনন্দ উপভোগ করলেও সামগ্রিক আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে হয়তো তাদের কিছু ঘাটতি থেকে গিয়েছিল। নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবের মাটিতে নেমে আসতনা আনন্দের ধারা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতেও একরাশ বিষণ্নতা তাদের গ্রাস করত।
মহালয়ার সপ্তাহ দু’য়েক আগে বদলে গেল সবকিছুই। সৌজন্যে আবাসনের নতুন বাসিন্দা গোপা ভট্টাচার্য। পাশে পেয়ে যান শুক্লা দাস, অনুসূয়া চক্রবর্তী সহ অন্যান্য মহিলা সদস্যদের। হয়তো সবার মানসিক প্রস্তুতি ছিল। দরকার ছিল একজন ‘লিডার’। সেটা পেয়ে যেতেই দ্রুত সবাই ঘরোয়াভাবে আলোচনায় বসে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত হয় মহালয়ার পরদিন আবাসনের বাসিন্দাদের নিয়ে আয়োজিত হবে ‘আগমনী’ উপলক্ষ্যে এক ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছোট-বড় সবাই নিজেদের মত করে সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে। থাকবে নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি পাঠ ইত্যাদি।
হাতে সময় কম। অতএব জোরকদমে শুরু হয় অনুশীলন। বড়দের তত্ত্বাবধানে ছোটরা মেতে ওঠে অনুশীলনে। চর্চা না করার ফলে মরচে পড়ে যাওয়া বিষয়গুলি পুনরায় রপ্ত করার জন্য ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও অনুশীলনে দেখা যায়। অবশেষে সবার প্রবল উৎসাহে গত ১৫ ই অক্টোবর দেবীপক্ষের পূণ্যলগ্নে অনুষ্ঠিত হয় আবাসনের আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের যোগদানে এই আনন্দ যজ্ঞ পরিণত হয় সত্যিকারের মিলন অনুষ্ঠানে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অনুসূয়া চক্রবর্তী।
পাহি মন্ডল, বেদাংসী ব্যানার্জি, অরিত্র দাস, প্রণয় রানা, মোহাম্মদ আহির ইসলাম, অরিন্দম দাস, প্রিয়াংসু রানা, দেবস্মিতা চক্রবর্তী, দীপশিখা চ্যাটার্জি, আমন আলী, আসিফ আলীর মত ছোটদের আনন্দের সঙ্গে শুক্লা দাস, রুনু রানা, জুহি ব্যানার্জি, অনুসূয়া চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি, মালা মুখার্জি, সোলাঙ্কি দত্তগুপ্ত ও গোপা ভট্টাচার্যদের আনন্দের কোনো পার্থক্য ছিলনা। মুহূর্তের জন্য বড়রাও ফিরে গিয়েছিল অতীতে। বাঁধনছাড়া আনন্দে তারাও মেতে ওঠে।
উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘আনন্দধারা শারদ সম্মাননা’। তখন ছোট থেকে বড় সবার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত। সঙ্গে ছিল অঙ্গীকার – এটা শুরু, আবার হবে। দর্শক বলতে সেখানে উপস্থিত ছিল আবাসনের বাসিন্দারা। প্রত্যেকের সঙ্গীত, নৃত্য বা আবৃত্তি পরিবেশন দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল। বারবার হাততালি দিয়ে তারা প্রত্যেককে উৎসাহিত করে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা গোপা ভট্টাচার্য বললেন – আমাদের আবাসনের পাশে অন্যরা যখন পুজোর আনন্দে মেতে উঠবে আমাদের আবাসনে তখন বিরাজ করবে একরাশ বিষণ্নতা। এটা কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। তাই এই আয়োজন। তিনি আরও বললেন – অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলে জানতেই পারতাম না এখানে এত প্রতিভা লুকিয়ে আছে। পরিশেষে তিনি সবাইকে আন্তরিক শারদ শুভেচ্ছা জানান ।।