দক্ষিণেশ্বরের গাঙ্গুলি বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে রবীন্দ্র স্মরণ

নীহারিকা মুখার্জ্জী,দক্ষিণেশ্বর,১১ মে : নাই কোনো ঝাঁ চকচকে মঞ্চ অথবা আধুনিক সাউণ্ড সিস্টেম। পরিবর্তে মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে শোওয়ার ঘরের তক্তা। আর ছিল পুরনো একটা মাইক ও সাধারণ হারমোনিয়াম। ছিল না পর্যাপ্ত আলো। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ছিল আন্তরিকতা ও আবেগ। এই আবেগকে সম্বল করে গত ৯ মে দক্ষিণেশ্বরের গাঙ্গুলি বাড়িতে পালিত হলো রবীন্দ্র জয়ন্তী। অংশগ্রহণে একদল রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষ। উদ্যোগ গাঙ্গুলি বাড়ির পারিবারিক পত্রিকা ‘আয়াস’।
উপস্থিত ছিলেন প্যারীমোহন কলেজের অধ্যাপক ডঃ অমরনাথ ভট্টাচার্য্য। তিনি রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক দিক বিশেষ করে ইউনিভার্সাল রবীন্দ্রনাথের উপর বক্তব্য রাখেন। এই বক্তব্য উপস্থিত শ্রোতাদের সমৃদ্ধ করে এবং অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
উপস্থিত ছিলেন আড়িয়াদহ কালাচাঁদ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ড: দেবীপ্রসাদ মজুমদার। তিনি রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজীর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তুলে ধরেন অনেক অজানা তথ্য।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালাচাঁদ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক নিতাই মোহন চ্যাটার্জ্জী, পরীক্ষিত মান্না, মতিলাল পটুয়া, চিন্ময় চৌধুরী সহ ‘আয়াস’ পত্রিকা গোষ্ঠীর অনেক সদস্য ও রবীন্দ্রপ্রেমী পাড়া-প্রতিবেশীরা ও তাদের বাড়ির কচিকাচারা এবং দর্পণা দেবীর ছাত্র-ছাত্রীরা । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ড: তাপস দেব যিনি বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা দিয়ে ‘আয়াস’কে সব সময় সমৃদ্ধ করে থাকেন । রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা পাঠ, দুই ক্ষুদে শিল্পীর সঙ্গে সূচনার সঙ্গীত পরিবেশন – সব মিলিয়ে ওই ছোট্ট পরিবেশটা হয়ে ওঠে অনেক বড়।
এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন যোগেন ভৌমিক যার তত্ত্বাবধানে পরিবেশিত হয় দুটি কোরাস গান “আকাশ ভরা সূর্য তারা” ও “নতুন যুগের ভোরে”। ছিলেন সৌভ্রাত্র চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় অংশ ছিল ড: প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বরচিত ভাষ্য পাঠ যা বরাবরের মত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়,যিনি রবীন্দ্রনাথের উপর লেখা একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
প্রসঙ্গত, একসময় গাঙ্গুলি বাড়ির প্রধান ড: প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। তার আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়েছেন বহু শ্রোতা। তার বহু ছাত্রছাত্রী নাট্যজগতে প্রতিষ্ঠিত। দর্পণা দেবী কাব্য জগতের পরিচিত মুখ। তাদের কন্যা সূচনা নিজের যোগ্যতায় কাব্যজগতে একটা আলাদা স্থান করে নিয়েছে। তার কবিতা কখনো হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের হাতিয়ার, কখনো কাব্য রসিকদের মনে জুটিয়েছে ভাবনার খোরাক।সূচনাদেবী বললেন,আমাদের সামর্থ্য কম। ফলে আড়ম্বরের পরিবর্তে আন্তরিকতা হয়ে ওঠে আমাদের মূল অস্ত্র। বাংলা ভাষাচর্চা যখন প্রায় উঠে যেতে বসেছে ঠিক তখনই এরকম একটা ঘরোয়া পরিবেশে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন এবং অনেক গুণী মানুষের সমাবেশ সত্যিই আলাদা মাত্রা এনে দেয়। পূরণ হয় আমাদের উদ্দেশ্য ।।