এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০১ সেপ্টেম্বর : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ভারত এবং হিন্দু বিদ্বেষ বেড়ে গেছে । সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে নিদারুণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সে দেশের হিন্দুরা । ক্ষুধার্ত হিন্দুদের গলায় ও হাতে থাকা মাদুলি বা তাবিজের মত হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক কেটে ফেলে দিয়ে তবেই ত্রান সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে । এমনকি শিশুদের পর্যন্ত রেহাই দেওয়া হচ্ছে না । এরকমই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । সুনন্দা রায় নামে এক এক্স ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘হিন্দুদের বাংলাদেশে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার আগে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র সুতো এবং হিন্দু ধর্মের অন্যান্য প্রতীক কেটে ফেলছে। আমাকে এর চেয়ে জঘন্য জিনিস দেখান।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আর একটি ছবিও নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । ওই ছবিতে একজনকে কাঁধে করে পানীয় জলের বোতলের বোঝা নিয়ে যেতে দেখা গেছে । কিন্তু তার সাদা রঙের গেঞ্জিতে নীল কালিতে লেখা আছে, ‘আপনার সন্তানকে ভারত বিদ্বেষী বানান ।’ পাশাপাশি বাংলাদেশের জনৈক ইসলামী মৌলবাদীর একটা বক্তব্যও ভাইরাল হয়েছে । সে দেশের যমুনা টিভি নামে একটি চ্যানেলের সেই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে ফেসবুকে । যেখানে ওই মৌলবাদীকে বলতে শোনা গেছে,’আমরা পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু ধর্ম, নাস্তিক্যবাদ ইসলামবিরোধী কোনরকম বিষয়বস্তু রাখতে দেব না ।’ অর্থাৎ ওই মৌলবাদী সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ইসলামীকরণ করা হবে। যদিও ওই সমস্ত ভিডিও বা ছবি সত্যতা যাচাই করিনি এইদিন ।
এদিকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মাঝেও হিন্দুদের মন্দিরে হামলা অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশে । বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের শ্মশান কালীমন্দিরে প্রায় দেড়শ জন মুসলমান হামলা চালিয়ে মন্দিরটিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ । এলাকাবাসী জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। দুজন হামলাকে রেখে তারা ধরে ফেলে । জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে তাদেরকে “লেবু মিয়া” নামে এক ঠিকাদার ভাড়া করেছে মন্দির ভেঙে ফেলার জন্য । পরে ওই দুজনকে বাংলাদেশের সেনার হাতে তুলে দেয়া হয় । কিন্তু মূল অভিযুক্ত লেবু মিয়া এখনও গ্রেপ্তার হয়নি । শনিবার(৩১ আগস্ট) বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী এলাকার তালুক হরিদাসে সার্বজনীন ভোলারদিঘী সন্নাসীরধাম মন্দির রাত প্রায় ১:৩০ মিনিট নাগাদ ভাঙতে এসে স্থানীয় হিন্দুদের হাতে ধরা পড়েছে একজন জিহাদি । পরে তাকে সেনাবাহিনী হাতে তুলে দেওয়া হয় । এছাড়া প্রখ্যাত ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটায় জীর্ণ মন্দির ভেঙে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ওয়াহেদ নামে এক মুসলিম ব্যক্তি ।
শুধু প্রাণ বিলিতে বৈষম্যই নয়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা । বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ১৬১ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করা হয়েছে । কিন্তু ঐ তালিকায় একজন হিন্দুরও নাম নাই, সবাই মুসলিম । এদিকে শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের হিন্দু কর্মচারীদের জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে । গত ৫ই আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । অথচ ঐ সমস্ত স্কুল শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না ।
এদিকে আতঙ্কে ভারতে পালিয়ে আসার হিড়িক বেড়েছে বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যে । বৈধভাবে ভারতে আসার জন্য বিভিন্ন ভিসা দান কেন্দ্রে মূলত হিন্দুদের ভিড় দেখা যাচ্ছে । অবৈধভাবেও ভারতে পালিয়া আসার চেষ্টা করছেন বহু বাংলাদেশী হিন্দু । যে কারণে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ভারতীয় বন দপ্তরের কর্মীরা সুন্দরবন থেকে পাঁচজন শিশু, পাঁচজন নারীসহ ১১ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে । জানা গেছে, ওই সমস্ত হিন্দুরা বাংলাদেশের মৌলবাদীদের তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে দালালের সঙ্গে ৪৫ হাজার টাকার চুক্তি করেছিলেন । কিন্তু ভারতে নিয়ে এসে দালাল তাদের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। টহলদারির সময় বন দপ্তরের কর্মীদের নজরে পড়ে গেলে তাদের উদ্ধার করা হয় । তাদের সবাইকে সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে ।।