এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুম্বাই,০৩ জুলাই : সত্তরের দশকে বলিউডের অন্যতম খ্যাতনামা অভিনেত্রী হলেন রীনা রায় । মুসলিম বাবা সাদিক আলী এবং হিন্দু মা শারদা রায়ের সন্তান তিনি । বিচ্ছেদের পর চার সন্তান রীনা রায়,বরখা রায়, অঞ্জু রায় ও রাজা রায়কে অতিকষ্টে মানুষ করেন শারদা । অভাবের মাঝেও বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই করে রেখার সাথে ১৯৮১-৮৫ সাল পর্যন্ত সর্বাধিক পারিশ্রমিক নেওয়া হিন্দি অভিনেত্রী ছিলেন এবং পারভীন বাবির সাথে রীনা ১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত হিন্দি অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন রীনা রায় ।
ক্যারিয়ারের শীর্ষে, রীনা রায় অভিনয় ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটার মহসিন খানের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন। এই দম্পতি ১৯৮৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর রীনা পাকিস্তানে চলে যান এবং চলচ্চিত্র থেকে বিরতি নেন। এর আগে, রীনা রায় চলচ্চিত্র অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন, যিনি তার অনুমোদিত জীবনী ‘এনিথিং বাট খামোশ’-এ একই বিষয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন ।মহসিন খান ও রীনা রায়ের জান্নাত নামে একটি মেয়ে ছিল। তাদের ডিভোর্স হলে মহসিন জান্নাতকে নিজের কাছে রেখে দেন । কিন্তু তিনি আবার বিয়ে করলে, রীনা মেয়েকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনেন । তার নতুন নাম রাখেন ‘সনম’।
শত্রুঘ্ন সিনহা এবং পুনম সিনহার কন্যা সোনাক্ষীর সঙ্গে রীনা রায়ের সাদৃশ্য নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন উঠেছিল। সোনাক্ষী ও জহির ইকবালের গত ২৩ জুন বিয়ে পর ফের সেই প্রশ্ন মাথাচারা দেয় । মাসালার সাথে কথা বলার সময় এই বিষয়ে সোনাক্ষী মন্তব্য করেছিলেন, আমি মনে করি এটি ঘটেছিল(বাবার শত্রুঘ্ন সিনহা ও রীনা রায়ের প্রেম)যখন আমার জন্মও হয়নি। আমি যখন বড় হই তখন জানতে পেরেছিলাম । কিন্তু আমি আমার বাবাকে এমন কিছুর জন্য ক্রুশবিদ্ধ করতে যাচ্ছি না যা তিনি কয়েক বছর আগে করেছিলেন।’ সেই সাথে তিনি বলেছিলেন,’আমি দেখতে আমার মা পুনম সিনহার মতো ।’ একই প্রশ্ন রীনা রায়কে করেছিল ফার্স্টপোস্ট । উত্তরে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘ওয়াহিন না, ইয়ে জিন্দেগি কে ইত্তেফাক হোতে হ্যায় (এগুলি নিয়তির অদ্ভুত খেলা)। জিতুজির মা এবং আমার মা দেখতে যমজ বোনের মতো।’
প্রসঙ্গত,রীনা রায়-শত্রুঘ্ন সিনহা “কালীচরণ” (১৯৭৬) ছবির পরে হিট জুটিতে পরিনত হন । তাদের জুটি ১৬ টি ছবির মধ্যে ৯ টি ছিল হিট । তখন থেকেই দু’জনের প্রেম শুরু হয় । শত্রুঘ্নের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক পহলাজ নিহালানি বলেছিলেন যে শত্রুঘ্ন সিনহাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন রীনা । এজন্য সিনহাকে একটি আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন মন তৈরি করার জন্য । অন্যথায়, তিনি আট দিনের মধ্যে বিয়ে করবেন বলেছিলেন । এ সময় সিনহা তার পুনমকে বিয়ে করেছিলেন।পাহলাজ বলেন, ‘আমি আমার পরবর্তী ছবি আঁধি তুফানের জন্য শত্রুঘ্ন- রীনা, -সঞ্জীব কুমারের একই সেটআপের পুনরাবৃত্তি করতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু রীনা আমার প্রস্তাবে একটি দৃঢ় ‘না’ বলেছেন । তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার বন্ধুকে বলো তার মন স্থির করতে। যদি তিনি আমাকে উত্তর দেন, আমি তার সঙ্গে পরবর্তী ছবিতে কাজ করব। অন্যথায়, আমি আর তার সঙ্গে ছবি করব না । আমি মনে মনে ঠিক করেছি সে আমাকে বিয়ে না করলে আট দিনের মধ্যেই আমি অন্যতে বিয়ে করে ফেলব।’
পাহলাজ বলেছিলেন যে তিনি শত্রুঘ্নের কাছে তিনি কে এই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছিলেন । রীনার কথা শুনে তাকে ভেঙে পড়তে দেখেছিলেন। সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন শত্রুঘ । প্রথমবার তাকে কাঁদতে দেখলাম; কারন তিনি রীনার সাথে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন। সেই সময়ই আমি কথা বলেছিলাম তাকে বলেছিলাম, ‘যাও, ওকে বিয়ে করতে দাও’ ।
শত্রুঘ্ন এবং রীনা একসঙ্গে কালিচরণ, মিলপা, সংগ্রাম সহ আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তবে জিতেন্দ্রের সাথে রীনার রসায়ন আরও ভালো ছিল । জীতেন্দ্র-রীনা জুটি ১৭ টি রোমান্টিক ছবি যেমন বাদলতে রিশতে (১৯৭৮) এবং পিয়াসা সাওয়ান (১৯৮২) যা তার ক্যারিয়ারকে আরও উন্নত করে। জিতেন্দ্র-রীনা রায়ের ১৭ টি সিনেমার মধ্যে ১২ টি বক্স অফিস হিট ছিল ৷ এই জুটি একসাথে তাদের তিনটি সেরা ক্লাসিক তৈরি করেছিল – আপনপন (১৯৭৭), আশা (১৯৮০) এবং অর্পণ (১৯৮৩) । আশা ছবিতে “শিশা হো ইয়া দিল হ্যায়, টুট জাতি হ্যায়” গানে রীনার মর্মস্পর্শী নৃত্য তাকে ট্র্যাজেডির আইকন হিসাবে অমর করে রেখেছে ।।