এইদিন ওয়েবডেস্ক,বীরভূম,২১ মার্চ : হোলির দিন বীরভূম জেলার সাঁইথিয়ায় উৎসব উদযাপনকারীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল ভিন সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে । আহত হয় অন্তত ১০-১২ জন । এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় । বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। আজ শুক্রবার আহতদের খোঁজ নিতে সাঁইথিয়ায় যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে ‘জোট বাঁধার’ বার্তা দিয়ে বললেন,’যত কাটবে তত বাড়বে, আমরা হিন্দুর বাচ্চা’ । তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন,’গীতা পাঠ করুন, নাম হট্ট করুন, হনুমান চালিশা পড়ুন, হিন্দু জাগান । মমতার বিসর্জন হবেই ।’
শুভেন্দু অধিকারী আক্রান্ত পুরুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শক্ত আছেন তো ? ভয় পেলে হবে না । জোট বাঁধুন ।’ উপস্থিত একজন মধ্য বয়স্কা মহিলার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দিদি মার খেলেন ? হিন্দুরা মার খাবে হিন্দুস্থানে থেকে? শান্তিপূর্ণ এলাকা, সাঁইথিয়া শহরে এরকম কোনদিন হয়নি । শক্ত আছেন তো ? রাধা মাধবের নাম করে উঠতে হবে । আমরা পুরো পাশে আছি৷’ তিনি বলেন,’এখানে ১৬৩ ধারা জারি করেছে৷ ইন্টারনেট বন্ধ করেছে । আমরা বিধানসভায় তুলেছি৷ পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে । সনাতন সংগঠন আপনাদের পাশে আছে । এখানে ১৬৩ ধারা উঠে যাক, রামনবমীর পরে, আমরা বড় কর্মসূচি সাঁইথিয়াতে নেব । ভালো করে প্রতিবাদ মিছিল হবে৷ কাউকে ভয় পাবেন না । জেলে নিয়ে গেলে জামিন করাবো ।’
জনৈক গ্রামবাসী শুভেন্দু অধিকারীকে উত্তরীয় পরাতে এলে তিনি বাধা দেন এবং বলেন,’আমাকে না দিয়ে এদের(আহতদের) পরান’ । একজন আহতকে উত্তরীয়টা পরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,’এদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ মন্ত্রীর । আর পুলিশই ফোন করে এদের ধমকাচ্ছে৷ বলছে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করবে না তাহলে ফাঁসিয়ে দেব । আমাদের আটকাতে পারবে নাকি ।’
মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’শাঁখ রাখবেন । শঙ্খ ধ্বনি করবেন । জোট বাঁধুন । কাউকে না কাউকে এ কাজটা করতে হবে । পশ্চিমবঙ্গটা মমতা ব্যানার্জি আমাদের দিয়ে যায়নি । শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী যদি না থাকতেন তাহলে পশ্চিমবঙ্গেই আমরা থাকতে পারতাম না । শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী দিয়ে গেছেন । তা না হলে আমাদের বাংলাদেশে থাকতে হতো৷ জামাতের হাতে থাকতো ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’সব শক্ত আছেন তো ? রামনবমীর দিন সবাই ভালো করে বেরোবেন তো ? রামনবমীর মিটে যাক, ১০ তারিখের পরে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে এখানে প্রতিবাদ মিছিল করব৷ আমাদের প্রতিদিনই হাইকোর্টে অনুমতি নিতে হয়৷ পরশুদিন আমি আক্রান্ত হয়েছি,৪১ জন এমএলএ আক্রান্ত হয়েছে । নিখিল দে আক্রান্ত হয়েছে । আজকে দিলীপদা আক্রান্ত হয়েছেন । বিজেপি আক্রান্ত হবেই । গেরুয়া ধ্বজ ধরা যাবে না, জয় শ্রী রাম বলা যাবে না৷ এর শেষ আছে৷’
তিনি এক মহিলার উদ্দেশ্যে বলেন,’মা একদম চিন্তা করবেন না৷ উত্তরপ্রদেশেও এসব করতো৷ টিকা রাখলে মুলায়ম সিং যাদব জেলে দিত ৷ শিখা রাখলে তুলে নিয়ে চলে যেত করসেবকের নাম করে ৷ রাম মন্দির নিয়ে কতজনকে গুলি করে মেরেছে ৷ অতএব ভয়টয় পাবেন না ৷ দিন বদলাচ্ছে ৷ সরস্বতী পূজায় আমরা তাকত দেখিয়েছি৷ যেমন কথা বলবে তার উত্তর আমরা তেমন দেব৷ রামনবমীতে বাংলার হিন্দুরা আরো বড় তাকত দেখাবে । প্রস্তুতি নেন । ১০ই এপ্রিলের পরে দশ হাজার লোক নিয়ে সাঁইথিয়া শহরে প্রতিবাদ মিছিল হবে এবং প্রয়োজন হলে থানা ঘেরাও হবে ।’
গাড়িতে ওঠার সময় শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত জনতাকে বলেন,’গোটা এলাকা গেরুয়া ধ্বজে ছেয়ে দিন৷ যত ধ্বজ লাগবে আমরা দেব৷ ভয় পাওয়ার কিছু কারণ নেই৷’ তিনি বলেন,’যত কাটবে তত বাড়বে৷ আমরা হিন্দুর বাচ্চা৷ ওরা ঢুকলেই শাঁখ বাজান । যত মন্দির আছে চেয়ে নেবেন মাইক সেট পাঠাবো । গীতা পাঠ করুন, নাম হট্ট করুন, হনুমান চালিশা করুন, হিন্দু জাগান । জনতার জাগরন মমতার বিসর্জন৷ বিসর্জন হবেই, আমি আপনাদের বলে গেলাম । শুধু শক্ত থাকবেন মাথা নিচু করবেন না ।’
শুভেন্দু অধিকারী আজকের সাঁইথিয়া সফর প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’বীরভূমের সাঁইথিয়ায় পবিত্র দোল পূর্ণিমার দিন জেহাদিদের হাতে আক্রান্ত, আহত হিন্দু মাতৃশক্তি এবং ভাইদের সাথে আজ সাঁইথিয়ায় সাক্ষাৎ করলাম। প্রত্যেকের সাথে কথা বলে তাদের শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছি। প্রশাসন এখনো সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে, সেই সাথে সাঁইথিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৬৩ ধারাও বলবৎ করে রেখেছে। হিন্দু মাতৃশক্তি ও ভাই’রা সেখানে একজোট রয়েছেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে আহতদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়ে দলগতভাবে ওনাদের সবরকম সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দিয়েছি।’।