প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ মে : দীর্ঘদিন ধরে মিলছে না বকেয়া পাওনা ৪২ লক্ষ টাকা।প্রশাসন ও সিডিপিও-র দৃষ্টি আকর্ষণ করেও বকেয়া টাকার কোন বন্দোবস্ত হয়নি ।শেষ পর্যন্ত শনিবার ’বিদ্রোহ’ ঘোষনা করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ৫৩৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা।সেই বিদ্রোহের জেরে এদিন ব্লকের কোন অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্রে হলনা পুষ্টিদায়ক খাবার রান্না।তার কারণে পুষ্টিদায়ক খাবার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলেন প্রায় হাজার খানেক শিশু,গর্ভবতী ও প্রসূতি।’অরন্ধন’ পরিস্থিতি কাটিয়ে ফের কবেথেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশু,গর্ভবতী ও প্রসূতিরা পুষ্টিদায়ক রান্না খাবার পাবেন?স্পষ্ট করে এর উত্তর না দিতে পেরেছেন প্রকল্প আধিকারিক না দিতে পেরেছেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা ও কর্মীরা।কর্মদের এমন অরন্ধন পালনে সামিল হবার বিষয়টি জেলা প্রশাসনিক মহলেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
জামালপুরের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে এদিন দেখা যায়, সেখানকার দরজার সামনে নানা সমস্যার কথা লেখা কাগজ সাঁটানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে ,“তাঁরা গত দু’মাস নিজেরা অর্থ খরচ করে আনাজ, জ্বালানী,ডিম ও সবজি কিনে সেন্টার চালিয়েছেন। সেই অর্থ পাবার জন্যে ইতিপূর্বে ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও স্যারকে জানিয়ে ছিলেন ।কিন্তু বকেয়া পাওয়া টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা কেউ করেদিতে পারেন নি।তাই আর চালাতে না পেরে জামালপুর ব্লকের সমস্ত অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না খাবার তৈরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ।’
শুধু জামালপুর ব্লকই নয়। দু’মাস ধরে বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না পূর্ব বর্ধমানের অন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও। তার কারণে ওইসব কেন্দ্র গুলির কর্মীরাও শিশু, গর্ভবতী ও প্রসুতিদের পুষ্টিদায়ক খাবারের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ।জামালপুরের বিদ্রোহী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের কথায় জানা গিয়েছে,কোভিড অতিমারির কারণে লকডাউন চলার সময়ে সেন্টারে নাম নথিভুক্ত থাকা প্রতি জনকে এক মাসের শুকনো খাবার দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তাতে থাকছিল ২ কেজি চাল ,২ কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল ।কিন্তু গত অক্টোবর থেকে চাল , ডাল, আলু বা ছোলা না মেলায় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাচ্চাদের আর তা দেওয়া যায় নি ।এরপর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জামালপুর ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলিতে রান্না খাবার দেওয়া শুরু হয়।তখন চাল ও ডাল থাকলেও ডিম, সবজি সহ অনুষঙ্গীক যা কিছু কেনার দরকার পড়ে তার জন্য কর্মীরাই অর্থ খরচ করে ।এই ভাবে দু’মাস চালানো হয়ে যাবার পরেও পাওনা অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিতই রয়ে থাকেন কর্মীরা । বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও কেও লিখিত ভাবে জানান ।কর্মীদের দাবি ,এত কিছুর পরেও বকেয়া পাওনা টাকা পাবার ব্যবস্থা কেউ করেন না। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে অরন্ধন শুরুর পথেই কর্মীদের নামতে হয়েছে ।
জানা গিয়েছে, শিশু প্রতি ডিম ও আনাজের জন্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা হাতে পান ৫ টাকা ৩৬ পয়সা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্যে মেলে ৬ টাকা ৩৫ পয়সা।এছাড়া খিচুরির দিন শিশুদের জন্যে ৬ টাকা ২০ পয়সা আর মায়েদের জন্যে ৭ টাকা ৪১ পয়সা কর্মীরা পেয়ে থাকেন। এর বাইরে জ্বালানি ও মশলা কেনার জন্যে তাঁরা গড়ে পান ২১ টাকা । দফতরের নির্দেশ মেনে কেন্দ্র গুলিতে সোম, বুধ ও শুক্র ভাত, আলু-ডিমের ঝোল দেওয়া হয় ।মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনিবার দেওয়া হয় ডিমসেদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিন ও আনাজ। কর্মীদের ডিম, আনাজ, সয়াবিন বাজার থেকে কিনেনিতে হয়। আইসিডিএস দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ,এইসব খাদ্য সামগ্রী কেনা বাবদই গত দু’মাসে জামালপুর ব্লকের ৫৩৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪২ লক্ষ টাকা ।
জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী রঙ্গনা সরকার, রিনা দাসরা বলেন,’রান্না করা খাবার দিতে গিয়ে এক-একটি কেন্দ্রের কর্মীরা নিজেদের কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। তাঁদের মাইনের প্রায় সবটাই সামগ্রী কিনতে চলে গিয়েছে। দু’ মাস ধরে বকেয়া পাওনা টাকা না মেলায় তারা আর চালাতে পারেন নি। সে কারণেই রান্না খাবার তৈরি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি ।’ বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার এদিন বলেন,’অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার দেওয়া যে বন্ধ করে দেবে আমার জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে রবিবার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলাশাসক নিজে বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।“আইসিডিএসের জেলার প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সফটওয়্যার-জনিত সমস্যার কারণে টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। জেলাপ্রশাসন থেকে সবাই বিষয়টি মেটানোর জন্যে উদ্যোগী হয়েছে ।’।