এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ মার্চ : গত সোমবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে খুনের ঘটনার পর ৮ গ্রামবাসীকে (মতান্তরে ১০) নৃসংসভাবে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট । আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ ।
বগটুই গ্রামের ঘটনায় হাইকোর্টে মোট ৭ পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল । বুধবার দুপুর দুটো থেকে তার সবকটির শুনানি হয় । আদালত নির্দেশ দিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর দুটোর মধ্যে তদন্তের গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটকে । পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ঘটনাস্থলের ছবি তুলে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিও । গ্রামবাসী ও সাক্ষীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য ডিজি ও আইজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত রকম নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক দলকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত । এছাড়া বগটুই গ্রামের ঘটনাস্থলে সিসিটিভি বসানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট । তার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জেলা জজকে ।
জানা গেছে,সোমবার রাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল মহিলা ও শিশু । মৃতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানতে পারা গেছে । গ্রামবাসীদের কথায় মৃতরা হলেন মিনা বিবি (৪৫), নূরনিহার বিবি ( ৫৮), রুপালি বিবি (৪০), বানি শেখ (৪০), মিহির শেখ (৩৫), নেকলাল শেখ (৪০) ছাড়াও দুই শিশুও রয়েছে । এর বাইরেও বীরভূমেরই নানুরের বাসিন্দা কাজি সাজিদুল রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বগটুই গ্রামে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বিবি । তাঁর বাবা ঘটনার দিন মর্জিনাকে আনতে গিয়েছিলে । কিন্তু বাবা নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন কাজি । এছাড়া আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে নবদম্পতি লিলি খাতুন সাজিদুর রহমানের। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বগটুই গ্রামের মিজারুল শেখের মেয়ে লিলি খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় নানুরের কাজি সাজিদুর রহমানের সঙ্গে । ফলে প্রকৃতপক্ষে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে এলাকার ।
জানা গেছে, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে চিকিত্সাধীন রয়েছেন অগ্নিদগ্ধ নাজেমা বিবি, আতেহারা বিবি ও ১৪ বছরের ওই কিশোর কিয়াম শেখ । তাদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে ওই কিশোর হাসপাতাল থেকে আচমকা উধাও হয়ে যাওয়ায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । এদিকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে কয়েকটি মৃতদেহ সমাধিস্থ করা নিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন ও পুলিশ । পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও একরাশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । গ্রামবাসীদের দাবি, সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তৎপর হলে এই মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনা আটকানো যেত ।।