জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৪ সেপ্টেম্বর :
প্রতিভা এমন একটা জিনিস যেটা কখনোই চেপে রাখা যায় না। দরকার একটা সুযোগের, সেটা কেউ পায় আবার কেউ পায় না। যখনই সুযোগ পায় তখনই তাদের সুপ্ত প্রতিভার ঝলক দেখে চমকে ওঠে উপস্থিত দর্শকরা। এই দৃষ্টান্ত বারবার দেখা গেছে। এতদিন ফাইভ স্টার হোটেলের ঝাঁ চকচকে ব্যাঙ্কোয়েটে পেশাদার মডেলদের র্যাম্প ওয়াক করতে দেখা যেত। সম্ভবত এই প্রথম গত ৩ রা সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কলকাতার জ্ঞান মঞ্চে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়েদের র্যাম্প ওয়াক করতে দেখে চমকে গেলো উপস্থিত দর্শকরা। সৌজন্যে কলকাতার লেকটাউনের ডি’উইশ মাল্টিডিসিপ্লিনারি থেরাপি সেন্টার।
কি হতে চলেছে সেটা হয়তো উপস্থিত দর্শকরা জানতনা। তারা শুনেছিল জ্ঞান মঞ্চে ব্লু সোলস্ ফেস্টিভ্যাল নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নাম শুনে তারা ভেবেছিল নীল আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত সাংস্কৃতিক জগতের এক ঝাঁক নক্ষত্র হয়তো তাদের কোনো শিল্পকলা প্রদর্শন করবে। তাদের ভাবনার মাঝে জ্বলে ওঠে রঙিন আলো, বেজে ওঠে মৃদু বাজনা। তারপর দর্শকদের চমকে দিয়ে মঞ্চে র্যাম্প ওয়াকে মেতে ওঠে একদল ছেলেমেয়ে। জানা যায় ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়ে। একের পর জনা পঁচিশ ছেলেমেয়ে মঞ্চে আসছে, পেশাদার মডেলদের ভঙ্গিতে নিজেদের মেলে ধরছে, ফিরে যাচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। অবাক বিস্ময়ে ওদের পারফরম্যান্স দেখতে দেখতে হাততালি দিতে ভুলে যায় দর্শকরা। চমক ভাঙার শেষে হাততালিতে ভরে যায় গোটা হলঘর। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপস্থিত কর্মকর্তাদের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে সাফল্যের জল। খুশি হয় ওদের অভিভাবকরাও। শুধু র্যাম্প শো নয় ওরা নৃত্য-গীতও পরিবেশন করে। ছেলেমেয়েদের অপূর্ব পরিবেশনার জন্য অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। কে বলবে ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন । ডি’উইশ মাল্টিডিসিপ্লিনারি থেরাপি সেন্টারের কর্মকর্তা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিস্যাবিলিটি ফিল্ডের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি সহ বেশ কিছু সাধারণ মানুষ। ছিলেন অংশগ্রহণকারী ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অভিভাবিকা বললেন, ‘আমার সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধী। মা হিসাবে খুবই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু আজকে ছেলের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে ও স্বাভাবিক ভাবেই জীবন যাপন করতে পারবে। ‘ওরা পারবে তো’ – মনের মধ্যে এই ভয়টা ছিল।কিন্তু ওদের পারফরম্যান্স দেখে সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে ।’
ডি’উইশ মাল্টিডিসিপ্লিনারি থেরাপি সেন্টারের কর্ণধার সুমিত্রা পাল বক্সী বললেন,’সুযোগ পেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়েরাও অনেক কিছু পারে সেটা আজ আমরা প্রমাণ করে দিলাম। দরকার সবার সহযোগিতা। প্রসঙ্গত কোনোরকম সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই এই সংস্হাটি গত চার বছর ধরে সেবার জগতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্হাপন করে চলেছে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা তানেয়া মুখার্জ্জী বললেন,’এই ধরনের ছেলেমেয়েদের জন্য দরকার একটু স্নেহ, ভালবাসা ও সহানুভূতি। পরিবার ও সমাজ যদি ওদের দূরে ঠেলে না দিয়ে বুকে টেনে নেয় ওরাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। তিনি ডি’উইশ মাল্টিডিসিপ্লিনারি থেরাপি সেন্টারের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন ।’।