প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ এপ্রিল : রাজু ঝা কে খুনের ব্লু প্রিন্ট কি জাড়খণ্ডের হাজারিবাগের কারাগারে বন্দি থাকা কোন কুখ্যাত সুপারি কিলার তৈরি করে দিয়েছিল! রাজু ঝাকে খুনের তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবার পর এমন সন্দেহই গাঢ় হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কর্তাদের । সন্দেহ ঠিক না বেঠিক তা নিশ্চিৎ হতে তদন্তকারীদের হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান প্রবেশপথ ও তার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর সেটা হাতে পাবার জন্য বর্ধমান সিজেএম আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী অফিসার।সেই আবেদন মঞ্জুর করে সিজেএম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহে তদন্তকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন । এখন দেখার হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা খুনিদের নাগাল পায়,কি না।
রাজ্যের খনি অঞ্চলের বেতাজ বাদশা রাজু ঝা খুন হবার পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে চোদ্দটা দিন । কিন্তু পুলিশ এখনও আততায়ীদের নাগাল পায়নি । তবে আততায়ীদের ফেলে যাওয়া নীল চারচাকা গাড়ির সূত্র ধরে এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং পড়শী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড চষে বেরিয়ে পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, রাজু ঝা কে খুন করতে ঝাড়খণ্ডের কুখ্যাত দুস্কৃতিদের কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে। ওই ব্লু প্রিন্ট তৈরিতে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা এক কুখ্যাত সুপারি কিলার যুক্ত থাকতে পারে বলেও তদন্তকারীরা অনুমান।হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছে ওই কুখ্যাত সুপারি কিলারের সঙ্গে এক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে এই ধারণা আরও গাড় হয়েছে তদন্তকারীদের। ওস্তাদের কাছে রাজু ঝা কে খুনের ব্লু প্রিন্টের বিষয়ে জানতে আততায়ীরা হাজারিবাগ কারাগারে গিয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কি কারণে রাজু ঝাকে হত্যা করতে এত সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আঁটা হয় তা এখনও পরিস্কার নয় তদন্তকারীদের কাছে ।কয়লা পাচার মামলায় রাজুর সিবিআই দপ্তরের ডাক পাওয়াই কি কাল হয় ?রাজু সিবিআইয়ের কাছে মুখ খুললে কি বড় মাপের প্রভাবশালীদের কেউ ফেঁসে যেতেন?ঘটনার পরেই বেপাত্তা হয়ে যাওয়া লালার ঘনিষ্টি লতিফ এইসব প্রশ্নই যেন উস্কে দিয়েছেন ।
কয়লা পাচার মামলায় রাজু ঝার গত ৩ এপ্রিল ’ইডি’ দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার দিন ছিল। তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ গত ১ এপ্রিল রাত পৌনে ৮ টা নাগাদ শক্তিগড়ে কলকাতা মুখী ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে খুন হন রাজু ঝা। ওই দিন রাজু সাদা রঙের যে ফরচুনা গাড়িতে চড়ে শক্তিগড়ে এসেছিলেন সেই গাড়ির পিছন পিছন শক্তিগড়ে এসে পৌছায় নীল গাড়িতে সওয়ার থাকা শার্প শুটাররা।তারা গুলির পর গুলি চালিয়ে ঝাঁজরা করে দেয় রাজু ঝার শরীর । রাজু ঝার সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের হাতে গুলি লাগে। হাড়হিম করা ঘটনা চলার মহুর্তেই ঘটনাস্থল ছেড়ে পালায় রাজুদের সঙ্গে শক্তিগড়ে আসা। সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। গুলি কাণ্ডের মধ্যেও রাজু ঝার গাড়ির চালক নূর হোসেন অক্ষত থাকেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে নেমে শক্তিগড় থানার পুলিশ ঘটনার দিন গভীর রাতে শুটারদের ব্যবহার করা নীল গাড়ির হদিশ পায়।সেই গাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাতেই মেলে বেশকিছু কার্তুজ, আগ্নেয়াস্ত্র, মদের বোতল ও একাধিক নম্বার প্লেট । তার পরেই তদন্তকারী শীটের সদস্যদের তদন্তের যাবতীয় কেন্দ্র বিন্দুতে জায়গা করে নেয় ওই লীল চারচাকা গাড়িটি । শার্প শুটাররা কোথা থেকে ওই নীল গাড়িতে চাপে এবং কোন কোন পথ ধরে এসে তারা শক্তিগড়ে পৌছায়, তার তথ্য অনুসন্ধানে নামে তদন্তকারীরা।তথ্য পাবার জন্য শিটের তদন্তকারী দল এই রাজ্যের বাঁকুড়া,পুরুলিয়া সহ পড়শী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড চষে বেড়ায়।ওইসব জায়গার বিভিন্ন পয়েন্টের ও দীর্ঘ সড়ক পথের একাধিক ’টোল প্লাজার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ আততায়ীদের নীল গাড়িটির যাতায়াতের অকাট্য তথ্য প্রমাণ পায়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ মনেকরছে শার্প শুটারদের আসল মাথা হল জাড়খণ্ড বা বিহারের কোন কোন জেলে বন্দি থাকা এক কুখ্যাত সুপারি কিলার।যিনি কিনা জেলে বসেই সব কিছু অপারেট করেন।।