প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ জুন : এ যেন একেবারে উলট পুরাণ কাণ্ড। তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলের নেতারাই পারলোনা গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দাঁড় করাতে । আর তার জেরেই কেল্লাফতে করে ফেলেছে বামেরা । পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। প্রার্থী মনোনয়ন দাখিলে শুধু তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়াই নয় শনিবার রায়নায় তৃণমূলকে ধোলাই দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে বামেদের বিরুদ্ধে ।
বাম আমলে রায়না বামেদের দুর্গো হিসাবেই পরিচিত ছিল । তৃণমূল কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই রায়না থাকতো খবরের শিরোনামে।এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল পর্ব মিটতে না মিটতে ফের যেন পূর্বের মতই তপ্ত হয়ে উঠেছে রায়নার রাজণৈতিক ময়দান। যাতে আবার ঘৃতাহূতি পড়েছে রায়না বিধানসভার দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বাম প্রার্থীর বিপক্ষে তৃণমূলের কোন প্রার্থী না থাকাটা ।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দাখিল পর্ব শেষে শনিবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র পরীক্ষার দিন ।অনগ্রসর জাতিদের জন্যে সংরক্ষিত রায়না ১ ব্লকের শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৮ নম্বর বুথে যাঁরা যাঁয়া মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন তাঁদের মনোনয়ন পত্র এদিন পরীক্ষায় বসেন
আধিকারিকরা । ওই সময়েই ধরা পড়ে তৃণমূল প্রার্থী চাঁদ মহম্মদ মল্লিক মনোনয়ন জমা দেবার সময় তাঁর জাতিগত শংসাপত্র জমা দেন নি। সেই কারণে তাঁর মনোনয়ন এদিন বাতিল হয়ে যায় । এর ফলে ওই আসনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেলেন সিপিএমের ইসমাইল মোল্লা। অর্থাৎ ভোটের ফল ঘোষনার আগেই ওই আসনে সুনিশ্চিৎ হয়েগেল বাম প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিৎ হয়ে গেল। এই প্রসঙ্গে ব্লক তৃণমূলের সভাপতির ব্যাখ্যা,’তাঁদের ওই প্রার্থীর জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে সমস্যা হওয়ায় এমনটা হয়ে গেছে ।’
একই রকম কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে রায়না-২ ব্লকের পাইটা-২ পঞ্চায়েতের ১৯১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থীর। এই আসনটি এবার অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত । তৃণমূল সূত্রে খবর,রাজ্য নেতৃত্ব তাঁদের প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছিল , সেই তালিকায় ওই আসনে তাঁদের প্রার্থী হিসাবে অনগ্রসর শ্রেণির পুরুষের নাম ছিল। তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় । দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীও ওই আসনে ‘গোঁজ প্রার্থী’ হিসেবে অনগ্রশ্রেণির এক পুরুষকে নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করায়। আর সিপিএম দাঁড় করায় সবিতা মনসুর নামে এক মহিলাকে এহেন কারণে কোনও ভাবেই আর ওই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন গ্রাহ্য হয় না। তাতেই কেল্লাফতে হয়ে যায় সিপিএমের ।
এবিষয়ে রায়না-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অসীম পাল বলেন,’আমরা মনোনয়নের দিন সকালে আমাদের দলীয় প্রার্থী তালিকা পেয়েছি।সেই তালিকা খতিয়ে দেখার সময় পর্যন্ত পায়নি।অন্তত এক দিন আগে প্রার্থী তালিকা হাতে পেলে ওই আসনে অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র সহ সঠিক প্রার্থী মনোনয়নে কোনও অসুবিধা হতো না ।’
আর এই বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএম নেতৃত্ব । সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন,’২০১১ সালের পর থেকে রায়নার ওই দু’টি গ্রাম সহ বহু গ্রামে আমরা পা রাখতে পারিনি। অথচ এই সনয়ে ওই দু’টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী-ই দিতে পারল না। কিন্তু আমাদের প্রার্থী আছে। এতে আমাদের দলের কর্মীদের মনোবল অনেকটা বেড়ে গেল ।’
মনোবল যে সিপিএম কর্মীদের সত্যি সত্যি বেড়ে গেছে তার প্রমাণ এদিন পাওয়া যায় রায়নার শ্যামসুন্দরে। এদিন এখানে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের লোকজনের মারে তাঁদের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী জাহানুর হক-সহ দু’জন জখম হয়েছে । এই ঘটনার জন্য রায়নার সিপিএম নেতা কওসর আলির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনকি থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও সিপিএমের নেতারা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ।।