প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ মার্চ : ভোটের মুখে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেন তৃণমূলেরই নেতা জনপ্রতিনিধিরা ।রবিবার এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের তৃণমূল শিবিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ।তবে শুধু বিদ্রোহ ঘোষনাই নয় ,ব্লক তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে অসীম পালকে সরানোর দাবিতে ‘এককাট্টা’ হয়েছেন রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লকের পঞ্চায়েত গুলির শীর্ষকর্তারা । এদিন দুপুরে আলমপুরের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদ্রোহীরা ।সাংবাদিক বৈঠক থেকেই তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দলের উচ্চ নেতৃত্ব তাঁদের দাবিকে মান্যতা না দিলে মঙ্গলবার তাঁরা
সরকারী পদ থেকে গণ ইস্তফা দেবেন । ভোটের মুখে দলের জনপ্রতিনিধি ও কার্যকর্তারা এমন বিদ্রোহী হয়েওঠায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘটনার পিছনে কোনও চক্রান্ত রয়েছে বলেই তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন ।
তৃনমূল নেতৃত্বের কথায় জানা গিয়েছে , দীর্ঘদিন ধরে রায়না-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন আনসার আলি । মাস তিনেক আগে তাঁকে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কাইতির শ্রীরামপুর নিবাসী অসীম পালকে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি করে দল । আনসার আলি বর্তমানে রায়না -২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। জানা গিয়েছে , অসীম পালকে সভাপতি করার পর থেকে বেঁকে বসেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ কলিমুদ্দিন ওরফে বাপ্পা সহ ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও ব্লক কমিটির সিংহভাগ সদস্যরা।
আলমপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে এদিন অসীম পালের বিরোধীরা সাংবাদিক বৈঠক করেন । সেই বৈঠকে পাইটা-১ অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি তথা উপপ্রধান রামচন্দ্র পালের বলেন , “তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে রাজনীতি করছেন । তা সত্ত্বেও ব্লক সভাপতির কাছে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন । সেইজন্য তিনি অপমানিত ও ব্যাথিত হয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে অন্য যারা উপস্থিত রয়েছেন তাঁরাও ব্লক সভাপতির হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছেন । সে জন্যে তারা সবাই মিলে ঠিক করেছেন তৃণমূল প্রার্থী শম্পা ধারাকে জেতাোর জন্য কাজ করবেন । তবে ব্লক তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে অসীম পালকে সরাতে হবে । নয়তো সরকারী জনপ্রতিনিধির পদ থেকে তাঁরা সকলে গণ ইস্তফা দেবেন। অসীম পালকে কাইতি অঞ্চলের ‘হেরো’ নেতা বলেও এদিন কটাক্ষ করেছেন বিদ্রোহীরা ।
সৈয়দ কলিমুদ্দিন বলেন ,“ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রধান-উপপ্রধানকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন, অপমান করছেন। আর মানুষ ব্যাতিরেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দল চালাচ্ছেন । এমন সভাপতিকে মেনে নেওয়াটা কারুর পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না।’
যদিও অসীম পাল স্পষ্ট জানিয়েদেন ,“প্রার্থী শম্পা ধারার প্রতি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে সবাই বুঝতে পারছেন রায়নায় তৃণমূল প্রার্থী জিতছেই । যাঁরা এই সময়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন তাঁদের চলার পথ সম্পর্কে রায়নার মানুষ অবহিত রয়েছেন।বিদ্রোহীরা চক্রান্ত যা করার করুক তার জন্যে ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না।“
তবে ব্লক তৃণমূলের সভাপতির বিরোধীদের সাংবাদিক বৈঠককে হালকা ভাবে নেন নি প্রার্থী শম্পা ধারা । তিনি এদিনই জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথকে সবিস্তার রিপোর্ট করেন । প্রার্থী, প্রাক্তন বিধায়ক-সহ রায়না দুই ব্লকের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা মেটানো হবে বলে স্বপন দেবনাথ প্রার্থীকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে । এই প্রসঙ্গে রায়না বিধানসভা বিজেপি আহ্বায় কৃষানু রায় বলেন, ‘খেলা হবে শ্লোগান যারা দিচ্ছিল তাঁরাই খেলা শুরু করে দিয়েছে। আগামী দিনে ওদের খেলা আরো জমে উঠবে ।’।