প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ আগষ্ট : পরিকল্পনা করে এক মেধাবী কলেজ পড়ুয়াকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠলো প্রতিবেশী পরিবারের বিরুদ্ধে । মৃত ছাত্রের নাম সুরজ মল্লিক (২০) । এই ঘটনাকে কেন্দ্রকরে রবিবার দুপুর থেকে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার বোকড়ার বিদ্যানিদি গ্রামে । খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে পৌছে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ছাত্রের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদে স্বোচ্চার হয় গোটা গ্রামের মানুষজন।তাঁরা অভিযুক্ত পরিবারের সকল সদস্য ও গ্রামের ভিলেজ পুলিশ তন্ময় সামন্তর শাস্তির দাবিতে সরব হন।বিক্ষুব্ধ গ্রাম বাসীরা এদিন বিকালে শ্যামসুন্দর জামালপুর সড়ক পথ অবরোধ করেও বিক্ষোভ দেখায় । পরে অবরোধ তুলে নিলেও গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন এদিন রাতের মধ্যে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করলে সোমবার তাঁরা আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন । উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েত রাখা হয়েছে।
মৃত ছাত্রের বাবা নজরুল মল্লিক জানিয়েছেন,
তাঁর ছেলে সুরজ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল । সে রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত ছিল। সুরজ উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছিল বলে ঈর্ষান্বিত ছিল গ্রামের কিশোরী সোহানা মির্জা, তাঁর বাবা মোস্তাক মির্জা ও তাঁর স্ত্রী । তাই তারা সুরজ কে প্রাণে মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ।নজরুল মল্লিক বলেন ,“পরিকল্পনা মাফিক ইলেকট্রিক লাইন ঠিক করার অজুহাতে তারা গত ১৬ আগষ্ট রাতে ফোন করে সুরজ কে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয় ।তার পর সুরজ কে ঘরে আটকে রেখে হাত পা বেঁধে নির্মম ভাবে মারধোর করে।জখম অবস্থায় সুরজ জল চাইলে অভিযুক্তরা সুরজের মুখে ফিনাইল (হারপিক) ঢেলে দেয় ।
সুরজ অচৈতন্য হয়ে পড়লো অভিযুক্তরা সুরজ কে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায় । সুরজের মা প্রভাআসরফ বেগম বলেন,পরদিন সকালে তিনি গ্রামের কলতলায় তাঁর ছেলেকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । ছেলেকে প্রথম রায়না হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু ছেলেকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি। প্রভাআসরফ বেগম জানান ,রবিবার সকালে তাঁর ছেলে সুরজের মৃত্যু হয় ।সুরজের এই মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার সহ এলাকার বাসিন্দারা মোস্তাক মির্জা ও তার পরিবারের সকল সদস্য ও গ্রামের ভিলেজ পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ।
মৃত ছাত্রের বোন সুমনা খাতুন ও তাঁদের প্রতিবেশী সেখ আব্বাস উদ্দিন বলেন,সুরজ কে এমন নির্মভাবে মারধোর করে জখম করা কথা জানার পরেই তাঁরা গ্রামের রায়না থানায় জানতে গিয়েছিলেন । থানার টেবিলে থাকা পুলিশ অফিসার ওইদিন উল্টে তাঁদের বলেন,’সুরজকে কে মেরেছে তার কোন প্রমাণ আছে, কোন সাক্ষী আছে , কেউ দেখেছে কি? কোন কেস না নিয়ে টিবিলে বসে থাকা পুলিশ অফিসার ওইদিন তাঁদের ফিরিয়ে দেন।অথচ সুরজ মারাগেছে জানতে পারার পরেই অভিযুক্ত মোস্তাক মির্জা তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়ে দেয় । সুমনা বলেন,দোষী বলেই মোস্তাক মির্জা গা ঢাকা দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি অভিযোগে এও বলেন ,সুরজকে মারার পরিকল্পনায় তাঁদের এলাকার ভিলেজ পুলিশ তন্ময় সামন্ত অন্যতম নাটের গুরু । মৃতর পরিবার ও গ্রামবাসীরা সকল অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে এদিন সরব হন।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন,’ দুঃখজনক ঘটনা । সোমবার ছাত্রের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে ।ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই ছাত্রের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে ।তার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।কেউ দোষী হলে তাঁকে সাজা পেতেই হবে ।’ উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে এসডিপিও জানিয়েছেন ।।