এইদিন ওয়েবডেস্ক,হবিগঞ্জ(বাংলাদেশ),০৭ ডিসেম্বর : বন্ধুর দুই দাদা কর্মসূত্রে বিদেশে থাকে । সেই সূযোগ কাজে লাগায় বাংলাদেশের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রায়হান উদ্দিন নামে এক যুবক । হিনাকাঙ্খী সেজে বন্ধুর দুই দাদার স্ত্রীর খবর নিতে যাওয়ার নাম করে তাদের সঙ্গে চুটিয়ে সঙ্গম করে যাচ্ছিল সে । কিন্তু বন্ধুর কিশোর ভাই মোস্তাকিন তার দুই বউদির কুকর্ম দেখতে পেয়ে যায় । আর তার সেই অপরাধে কিশোরকে জবাই করে হত্যা করে রায়হান উদ্দিন। রায়হানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়হানের বন্ধু সজল মিয়ার বড় দাদা ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগমকে (২৮) এবং সজলের আর এক দাদা সজলু মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (২০)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় মোস্তাকিন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত রায়হান উদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব-৯ সিলেট ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ অভিযানে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে রায়হান উদ্দিনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন রায়হান। রায়হানের দেওয়া তথ্যমতে একটি জমি থেকে তালা-চাবি ও রায়হানের ঘর থেকে একটি প্যান্টের পকেটে রাখা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার পাঁচ ছেলে। তাদের মধ্যে মৃত মোস্তাকিনের বড় দাদা ফজলু মিয়া দুবাই প্রবাসী, আরেক দাদা সজলু মিয়া ওমান প্রবাসী। অন্য দাদাদের মধ্যে সজল মিয়া মৌলভীবাজারের সরকার বাজার এলাকায় একটি ব্রিক ফিল্ডে কাজ করে । সবার ছোট তামিম।
মোস্তাকিন তার মা ফুলবানু বিবি, ছোট ভাই তামিম, প্রবাসী ভাই ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগম, সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগমের সঙ্গে চার ঘরের একটা বাড়িতে থাকত। মোস্তাকিনের দাদা সজল মিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাদের বাড়িতে একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রায়হানের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। মোস্তাকিনের ঘরের ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ডসহ রাউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল রায়হানের হাতে। বাড়িতে রায়হানের সেখানে অবাধ যাতায়াত ছিল।
আদালতে রায়হানের দেওয়া জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী, অবাধ যাতায়াতের সুবাদে প্রথমে মোস্তাকিনের বড় দাদা ওমান প্রবাসী সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগম এবং পরে আরেক দাদা দুবাই প্রবাসী ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগমের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ায় রায়হান। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে দুই-তিন মাস আগে এ নিয়ে সালিশ বসে। সালিশে উভয় পক্ষকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। রায়হানকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করা হয় এবং তাকে দ্রুত বিয়ে করানোর জন্য পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সালিশের রায় মেনে সম্প্রতি রায়হানকে বিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও মোস্তাকিনদের বাড়িতে রায়হানের যাতায়াত চলছিল।
গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় মোস্তাকিনের ঠাকুমা অসুস্থ হওয়ার খবর আসে। তখন প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রী রোজিনা ও তাছলিমা এবং মোস্তাকিন ও তামিমকে রেখে তাদের মা ফুলবানু মাকে দেখতে তিমিরপুর গ্রামে যান। রাত প্রায় ৮টার দিকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে যান রায়হান। রায়হান প্রথমে মোস্তাকিনের মেজো বউদি তাছলিমার ঘরে যায় । পরে বড় বউদি রোজিনা বেগমের ঘরে যাওয়ার সময় মোস্তাকিন দেখে ফেলে। মোস্তাকিন সেই কথা মাকে বলে দেওয়ার কথা বললে তাসলিমা, রোজিনা ও মোস্তাকিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় ইমামবাড়ি বাজার থেকে একটি ছুরি ও দুটি তালা কিনে আনে রায়হান। পরে মোস্তাকিনের ঘরে প্রবেশ করে তাছলিমা তার দুই পা এবং রোজিনা দুই হাত চেপে ধরে রাখেন। রায়হান বাঁ হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ডান হাত দিয়ে মোস্তাকিনের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় ।
মোস্তাকিনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দুই বউদি চিৎকার ও কান্নাকাটি শুরু করে । চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে । খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুই বউদির পরকীয়ার বিবরণ সামনে এলেও মোস্তাকিনের মা ফুলবানু বিবি ছেলের স্ত্রীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মানতে পারছিলেন না। পরে (২৫ নভেম্বর) নবীগঞ্জ থানায় ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে বিরোধের জের ধরে মোস্তাকিনকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে রায়হান উদ্দীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন ফুলবানু।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ কামাল হোসেন বলেন, মোস্তাকিন হত্যাকাণ্ডে মামলার প্রধান আসামি রায়হান হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে । জবানবন্দিতে মোস্তাকিনের দুই বউদির সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে বলেও জানান ওসি।।