এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৮ জানুয়ারী : নিজেদের রাজত্বকালে স্পেকট্রাম,কয়লাসহ একাধিক কেলেঙ্কারিতে জেরবার হতে হয়েছিল ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসকে । অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে কোনো কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত বিজেপি সরকারের । তাই দূর্নীতি ইস্যুতে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলতে পারছে না বিরোধী দলগুলি । তবে পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মাঝে মধ্যেই তাদের একযোগে শোড়গোল করতে দেখা যায় । কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তায় সে অর্থে কোনো ভাটা পড়েনি,তার প্রমাণ সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলির ফলাফল । অন্যদিকে হিমাচল প্রদেশকে বাদ দিলে জাতীয় ক্ষেত্রে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে কংগ্রেস ।
তাই নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে চাইছে তার । সেই লক্ষ্যে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র আড়ালে রাহুল গান্ধীকে ‘তপস্বী অবতার’ হিসাবে তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেসের নেতারা । আর তা কাজে লাগাতেই রাহুল গান্ধী নিজেকে তপস্বী প্রমাণ করতে দাঁড়ি গোঁফ বাড়িয়ে চলেছেন । মাঝে মধ্যে মন্দিরে গিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে ধ্যানমূদ্রায় বসে পড়ছেন । পাশাপাশি দেশ জুড়ে শীত প্রবাহের মধ্যে হাতকাটা গেঞ্জি পড়ে ঘুরছেন তিনি । কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা সালমান খুরশিদের মতো নেতারা এদিকে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী একজন তপস্বী হয়ে গেছেন । তাই তাঁকে ঠান্ডা লাগে না । রাহুল গান্ধী নিজেও দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন যে তিনি ঠান্ডা অনুভব করেন না । এমনকি নিজের নামটাও বাড়িতে নাকি রেখে দিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন রাহুল ।
এদিকে রাহুল গান্ধীর টি-শার্টের নীচে একটি গরম কাপড় ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে । বিজেপি নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা রাহুল গান্ধীর টি-শার্টের ফটোতে জুম করে টুইট করেছেন, ‘টি-শার্টের বোতাম দিয়ে আড়াল করা হাতাবিহীন থার্মাল পোশাক রাহুল গান্ধীর জাল তপস্বী হওয়ার মিথ্যা দাবিকে প্রকাশ করছে । শীতের মৌসুমে ঠান্ডা লাগা স্বাভাবিক । রাহুল গান্ধীর টি-শার্ট পরে মনগড়া প্রচারণা একটা ছলচাতুরী এবং ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয় ।’ অন্যদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন,’ভক্তরা একটি মরিয়া জাত। তারা এখন সম্মিলিতভাবে রাহুল গান্ধীর ‘ঘাড়’ এবং ‘বুক’, তার টি-শার্টের ‘কুঁচকি’-এর স্ক্রিনশট নিচ্ছেন। এটা হতাশাজনক !’
অন্যদিকে হরিয়ানায় ভারত জোড়ো যাত্রার সময় কংগ্রেস কর্মীদের জামাকাপড় খুলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় উদ্যাম নৃত্য করতে দেখা গেছে । পাশাপাশি ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল দাবি করেছেন, ‘এটি (ন্যূনতম পোশাকে ঠান্ডা সহ্য করা) দেশে প্রথমবার ঘটছে না। নাগা সাধু, দিগম্বর জৈন মুনি, অনেক মানুষ বস্ত্র ছাড়াই থাকে। যারা রাহুল গান্ধীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাদের এনিয়ে গবেষণা করা উচিত ।’
অর্থাৎ ভারতের হিন্দু সাধক সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর তুলনা টেনেছে ভূপেশ বাঘেল । অনেকের মতে এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত ছাড়া আর কিছু নয় । আজন্ম ভোগবাদে বেড়ে ওঠা রাহুল গান্ধীকে ভোটের সময় মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠেকাতে দেখা গেলেও নির্জনে সাধনা করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি । কিন্তু নিজের রাজনৈতিক দল বেকাদায় পড়তেই তিনি ‘তপস্বী অবতার’-এ আবর্ভূত হয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল । এদিকে চলতি বছরে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে । পরের বছর রয়েছে লোকসভা নির্বাচন । ওই দুই নির্বাচনেই প্রমাণ পাওয়া যাবে সাধারণ মানুষ কি চোখে দেখছেন কংগ্রেসের যুবরাজ রাহুলের ‘তপস্বী অবতার’কে ।।