এইদিন ওয়েবডেস্ক,চেন্নাই,১২ সেপ্টেম্বর : ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকার ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু কোনো প্রমান দিতে না পারায় সেই দাবি সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট । আদালত কেবল এই বিষয়ে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) খারিজ করেনি, বরং আবেদনকারীকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের ‘ভোট চুরি’র মিথ্যা প্রচারণার মুখোশ উন্মোচিত করে দিয়েছে ৷
খবর অনুযায়ী, মামলাটি অ্যাডভোকেট ভি. ভেঙ্কট শিবকুমার দায়ের করেছিলেন, যাতে ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে রাহুল গান্ধীর উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাহুল গান্ধী এই প্রেজেন্টেশনে দাবি করেছিলেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকায় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে ৷ দাবি করা হয়েছিল যে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করুক এবং এই বিষয়ে তদন্তের অবস্থা জানাক।
কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মণীন্দ্র মোহন শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি জি. অরুল মুরুগানের বেঞ্চ এই আবেদনটিকে সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে। আদালত বলেছে যে এই আবেদনটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা স্বাধীন তদন্তের কোনও ভিত্তি নেই। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে যে আবেদনটিতে কেবল অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ রয়েছে, যা কিছু প্ল্যাটফর্মে বলা হয়েছিল, তবে এর পিছনে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
হাইকোর্ট তার সিদ্ধান্তে বলেছে যে এই আবেদনে কোনও সুনির্দিষ্ট উপাদান বা বিস্তারিত তথ্য নেই। এটি একটি অস্পষ্ট এবং সাধারণ অভিযোগ, আদালতের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি, যা যথাযথ নয় । আদালত আরও বলেছে যে নির্বাচন কমিশনকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য কোনও আদেশ দেওয়া যাবে না, কারণ তদন্ত করা এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া কমিশনের দায়িত্ব। এর পরে, আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয় এবং আবেদনকারীকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে, যা তামিলনাড়ু রাজ্য আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। আদালত আরও স্পষ্ট করে বলেছে যে এই সিদ্ধান্তের যোগ্যতা সম্পর্কে কোনও মতামত দেওয়া হয়নি এবং নির্বাচন কমিশন নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা বজায় রাখবে।
এদিকে এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের ‘ভোট চুরি’র দাবির উপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলেছে। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য টুইট করে এই সিদ্ধান্তকে কংগ্রেসের মিথ্যা প্রচারণার উন্মোচন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে রাহুল গান্ধীর পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা বিদেশে প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অমিত মালব্য বলেছেন যে আদালত আবেদনটিকে বিভ্রান্তিকর, অস্পষ্ট এবং প্রমাণহীন বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও, ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে আদালত এই বার্তা দিয়েছে যে রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে মানহানির চেষ্টা সহ্য করা হবে না।
অমিত মালব্য আরও বলেন যে এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা এবং বিজেপির ঐতিহাসিক জয়ের বৈধতাকে আরও শক্তিশালী করে । কংগ্রেসের সমালোচনা করে তিনি বলেন যে, দলটি অকেজো আইনি লড়াই এবং প্রচারণায় সময় নষ্ট করছে, যেখানে বিজেপি শাসন, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকে বিব্রত করেছে। রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস দলের প্রচারণা আদালতে টিকতে পারেনি। যদিও নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীকে ৭ দিন সময় দিয়েছে, রাহুল গান্ধী কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি বা তিনি কোনও হলফনামাও দাখিল করেননি। তিনি কেবল বলছেন যে কোনো প্রমান দেবেন না,পরন্তু লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাবেন ।
কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের ‘ভোট চুরি’র দাবির উপর এক বিরাট আঘাত। ১ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং আবেদন খারিজ করা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে প্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজ করবে না। এই সিদ্ধান্ত কেবল কংগ্রেসের প্রচারণাকেই ধ্বংস করে না, বরং ভারতের গণতন্ত্রের শক্তিও দেখায়। এখন প্রশ্ন হল কংগ্রেস কি তার মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করবে, নাকি আরও ভিত্তিহীন দাবি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে? কেবল সময়ই এর উত্তর দেবে।।