এইদিন ওয়েবডেস্ক,কুষ্টিয়া(বাংলাদেশ),২৯ জুন : লালন ফকির বা লালন সাঁই একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক । লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক । যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করে গেছেন। কিন্তু সেই মহামানব লালন ফকিরই চক্ষুশূল বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিমদের কাছে । ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে / লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে। সুন্নত দিলে হয় মুসলমান নারীলোকের কি হয় বিধান / বামন চিনি পৈতে প্রমাণ বামনী চিনি কি করে ?’ লালন ফকিরের এই সমস্ত গানের মধ্যে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বার্তা বাংলাদেশি মুসলিমদের কাছে অসহ্য ঠেকে । তাই নিজের জন্মস্থানেই লালন ফকিরের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্ত প্রায় । অল্প সংখ্যক আজও যারা এই মানবতাবাদী সাধকের আদর্শকে পাথেয় করে বাঁচতে চান তারা পর্যন্ত ইসলামি মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত । বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় লালনপ্রেমী এমনই এক ৯০ বছরের বৃদ্ধা চায়না বেগমের সাধন কুঠির ভেঙে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে মৌলবাদীরা । হামলার আগে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা করে লোকজন জড়ো করা হয় বলে অভিযোগ ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের নির্জন জায়গার করগেট দিয়ে ঘেরা নিজের সাধন কুঠির বানিয়েছিলেন বিধবা বৃদ্ধা চায়না বেগম । অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে সাধনার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন তিনি । কিন্তু নিজের সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীদের দল বুধবার (২৬ জুন ২০২৪) সকাল ৬ টা নাগাদ এসে সব কিছু ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে চলে যায় । এই ঘটনার পর প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এনামুল হক,গ্রামের মাতব্বর মোশারফ হোসেন,আনার মণ্ডল ও সাইদুল হাজিরসহ ৪৫-৫০ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন চায়না বেগম। যদিও আজ শনিবার পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারির খবর নেই ।
চায়না বেগম জানান, তার স্বামী লালন সাঁইজির অনুসারী ছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে কাটিয়ে দেবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি । কিন্তু সে আশা আর পূর্ণ হল না । তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, কোথাও জায়গা না পেলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবে । প্রতিবছর কিছু না পেলেও বাতাসার সিন্নি আমার নামে লালন সাঁইজির উদ্দেশ্যে কবরে নিবেদন করবে। তার কথা রাখতেই ঘরখানা তৈরি করি। সেখানে স্বামীর কবরের পাশে সাঁইজির গান করে আমি দিন কাটাতাম । কিন্তু এলাকার লোকজন সব ভেঙে দিয়ে গেছে ।’ তিনি জানান,অনেক কষ্ট করে লাখ খানেক টাকা সংগ্রহ করে স্বামীর কবস্থানে ঘরটা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু সব শেষ করে দিয়ে গেছে ওরা । তার অভিযোগ যে হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে গেছে সুযোগ পেলেই তাকে খুন করে দেবে ।
চায়না বেগমের বোন জামাই শাহাবুদ্দিন সাবুও লালন ফকিরের অনুগামী ৷ তিনি বলেন,’আমাদের অপরাধটা কি ? আমরা সাধু সমাজ কি নিজের জমিতেও আর থাকতে পারব না ? একজন সাধুর ঘর কেন ভাঙা হল ? সাধু সমাজকে কেন অপমান করা হল ? মসজিদে ঘোষণা করে লোক জড়ো করে ঘর ভাঙা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদীদের দাপট । তাই লালন প্রেমী বৃদ্ধা শাশুড়ি আদপেই ন্যায় বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান খোদ সাধক শাহাবুদ্দিন।।