জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৮ আগস্ট : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন বাঙালির কাছে এক আবেগ। আজ এবং আগামী দিনেও এই মানুষটিকে নিয়ে বাঙালি চরম গর্ববোধ করবে। এই গর্বের মানুষটির মৃত্যু দিবসে এক অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল বর্ধমানের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দারা। সৌজন্যে রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতন। ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পোশাকে নয়, বরং রবীন্দ্রনাথ বলতে সাধারণ মানুষ যে মার্জিত পোশাক বোঝে সেই পোশাকে সজ্জিত হয়ে বের হলো এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট পোশাকে সজ্জিত ছাত্রছাত্রীরা, সাদা পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা অথবা ধুতি পরিহিত শিক্ষককুল এবং লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে সজ্জিত শিক্ষিকারা যখন রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি নিয়ে সমবেত কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে গাইতে শোভাযাত্রা করছিল তখন সেই দৃশ্য ছিল অসাধারণ।
এর আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। প্রসঙ্গত মূর্তি দুটি তৈরির ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য করেন বিদ্যালয়ের বর্তমান এবং প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকদ্বয়। যাইহোক এরপর বিধায়ক , বিদ্যালয়ের সভাপতি বিপ্লব দে , শিক্ষানুরাগী সুবীর কোলে , বিশিষ্ট সমাজসেবী স্বপন ঘোষ , বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন।
শোভাযাত্রার শেষে বিদ্যালয়ের কবি-স্মরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা বিধায়ক তার ভাষণে বিদ্যালয়ের অতীত ও বর্তমান পরিবেশ সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করেন এবং বর্তমান উন্নতির জন্য প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পড়াশোনা, খেলাধুলা সহ সমস্ত দিক দিয়ে তার সাধের বিদ্যালয়টিকে রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার কাছে আবেদন করেন। বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য প্রয়োজনে সমস্ত বিষয়ে পাশে থাকার ব্যাপারে আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সুন্দর নাচ, গান এবং কবিতা পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রবীন্দ্রসংগীতের তালে তালে গীতি আলেখ্য পাঠ। বাড়তি পাওনা ছিল প্রধান শিক্ষকের আবৃত্তি পাঠ।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পটভূমিকায় কবিগুরু প্রবর্তিত রাখি বন্ধন উৎসবের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় । বিদ্যালয়ে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে তিনি বিধায়কের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে রাখি বন্ধনের শুভ সূচনা করেন। এরপর একে একে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীরা রাখি বন্ধনে মেতে ওঠে।
বিধায়ককে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন – শত ব্যস্ততার মাঝে যেভাবে তিনি আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। সবসময়ই আমরা তার সহযোগিতা পেয়ে থাকি। বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন – তারা যেভাবে প্রতিটি বিষয়ে আমার পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেটা আমার কাছে গর্বের। যেকোনো বিদ্যালয়ের প্রাণ তার ছাত্রছাত্রীরা। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য যেভাবে এগিয়ে আসছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আশাকরি সবার মিলিত প্রচেষ্টায় বিধায়কের স্বপ্ন পূরণ হবে।।