জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৯ মে : করোনা অতিমারির আঘাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিশ্বের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠন পাঠন কার্যত এলেমেলো হয়ে পড়ে। পরে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদান শুরু হলেও স্মার্টফোন না থাকার জন্য গরীব ঘরের বাচ্চারা অনলাইনে শিক্ষার স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। নিজের সীমিত সামর্থ্যকে সম্বল করে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় উত্তর দমদমের শরৎ বসু রোডের শরৎ কলোনির ‘আদরবাসা’-র অর্পিতা ইন্দ্র।
গত বছর ২৪ শে জুলাই এলাকার একগুচ্ছ দুস্থদের নিয়ে শুরু হয় ‘আদরবাসা’-র আদরের পাঠশালা। শিক্ষিকার ভূমিকায় অর্পিতা স্বয়ং। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় আরও কয়েকজন। আনন্দের মধ্যে দিয়ে তাদের পড়াশোনার কাজ শুরু হয়। পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি আবৃত্তি পাঠ, নৃত্য, সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয়েও তাদের শিক্ষা দেওয়া শুরু হয়। এবার সেইসব শিশুদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ১৬১ তম জন্ম দিবস পালন করল ‘আদরবাসা’।
অনুষ্ঠানে আদরবাসার শিক্ষার্থী শিশু কৃষ, সৌমিপ্রিয়া, জুনেদ, রাজ, রাই, রাইসা, মান্তাসা প্রমুখরা কাঁপা কাঁপা গলায় রবীন্দ্রনাথের লেখা আবৃত্তি পাঠ করে। মনে একটু ভয় থাকলেও তাদের উৎসাহের অভাব ছিলনা। জীবনে প্রথম বারের জন্য বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের দ্বারা পরিবেশিত অনুষ্ঠানটি যথেষ্ট উপভোগ্য হয়ে ওঠে । শিশুগুলির সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভিভাবিকারাও খুব খুশি। অনুষ্ঠানের শেষে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় টিফিনের প্যাকেট ।
জনৈক অভিভাবিকা বললেন,’অর্পিতাদিদি না থাকলে আমাদের মত গরীব ঘরের ছেলেমেয়েরা কোনো দিনই এই ধরনের অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেতনা। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
বিভিন্ন সময়ে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অর্পিতা দেবী বললেন – লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার জন্য এলাকার গরীব ঘরের বাচ্চারা শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেখে তাদের শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি তাদের নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি পাঠ, অঙ্কন প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল শিক্ষা যেন কোনোদিন তাদের কাছে একঘেয়ে হয়ে না ওঠে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে যেভাবে তারা আজকের দিনটি পালন করল তাতে আমরা গর্বিত। আশাকরি আগামী দিনে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা আরও বড় মঞ্চে অংশগ্রহণ করবে ।।