শ্যামসুন্দর ঘোষ,বর্ধমান,২২ নভেম্বর : গত ৪ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর কাজ শুরু হয়েছে । বুথ লেভেল অফিসাররা(বিএলও) বাড়ি বাড়ি ঘুরে গণনা ফর্ম বিতরণের পর সংগ্রহের কাজ করছেন । আর এই এসআইআর রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িছে । কারণ অনুমান করা হচ্ছে যে লক্ষ লক্ষ মৃত ভোটার, ডবল বা ট্রিপিল এন্ট্রি ভোটার, অস্তিত্বহীন ভোটার এবং অনুপ্রবেশকারী ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে চলেছে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি যে সেই সংখ্যাটা এক কোটিরও বেশি । যে কারণে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এসআইআর-এর প্রবল বিরোধিতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি । শুধু তাইই নয়, জেলায় জেলায় তৃণমূলের নেতা ও বিধায়করা বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় রাখার জন্য জন্য প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ তার ।
গতকাল শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারিতে “পরিবর্তন সংকল্প সভা” করেন শুভেন্দু অধিকারী । মেমারির উদয় সংঘ খেলার মাঠে আয়োজিত এই সভাতে তিনি অভিযোগ করেছেন যে কাটোয়ার বিধায়ক ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, রাজ্যের মন্ত্রী ও মন্তেশ্বরের বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ও মধুসূদন ভট্টাচার্যরা বাংলাদেশী মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকায় রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে । তার আরও অভিযোগ, পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক আয়েষা রানী কিছু বিএলও-কে ডেকেছে ওটিপি দেওয়ার জন্য । তার কারণ হচ্ছে ওই ওটিপি নাম্বারটা আইপ্যাককে দেবে । আইপ্যাক এবার করবে কি, ধরুন আমার নাম সিরাজুল মন্ডল, আমার নাম মিলছে না, ২০০২ ভোটার লিস্টে নেই, এদের সঙ্গে ম্যাচ করে কুচবিহার,উত্তর দিনাজপুর,মালদায় কোনো একই বাবার নাম আছে কিনা দেখে ওই ওটিপি দিয়ে ঢুকিয়ে তার নামটা এখানে ব্যবস্থা করবে ।
জনসভাতে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’এভাবে মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে। আমাদের ভারতীয় মুসলমানদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই । কিন্তু আমরা বলেছি যে বাংলাদেশী মুসলিম এবং রোহিঙ্গারা ভারতীয় নয় । এরা আমাদের রেশন খাচ্ছে, জমি লুট করছে, ধর্ম জিহাদ করছে, লাভ জিহাদ করছে, এদের প্রথমে নাম কাটো এবং পরে বাংলাদেশে পাঠাও ।’
তিনি বলেন,’বলেছিলাম না লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা এখানে বসে আছে । কি দেখাচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলোতে ? এমনকি যে চ্যানেলগুলো মমতা ব্যানার্জির চটি চাটে, তারাও দেখাচ্ছে নিউ টাউনে কাজের মাসি নাই…পগার পার হয়ে গেছে । স্বরুপনগরে তল্পিতল্পা গুটিয়ে, বাচ্চা কাচ্ছা নিয়ে লাইন দিয়ে পালাচ্ছে। একজন লোক সঙ্গে তিনটে বউ আর ১৪ টা বাচ্চা নিয়ে পালাচ্ছে । সোজা পালাচ্ছে । জিজ্ঞেস করছে কোথা থেকে এসেছিলেন ? বললো খুলনা থেকে । কতবার ভোট দিলেন ? বলল তিনবার ভোট দিলাম ? কোথায় ভোট দিলেন ? ঘাসের উপর জোড়া ফুলে ভোট দিলাম । তারপরে বলছে লক্ষীর ভান্ডার পাই, ভাতা পাই, রেশন খাই,আধার কার্ড হয়েছে, তৃণমূলকে ৫০০০ টাকা দিয়েছি, ঘরও বানিয়ে দিয়েছে । একজন ভারতীয় হিসেবে আপনার এ কি চান এরা থাকুক ?’
বিরোধী দলনেতা বলেন,’মমতা ব্যানার্জি কেন এসআইআর আটকাতে চায় তার খন্ড চিত্র আপনারা দেখছেন । আধারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক । ৩৪ লক্ষ মৃত নামের ভোটারের নামের তালিকা । এই সমস্ত আধার তুলে নিল নির্বাচন কমিশনের হাতে ।গত সপ্তাহে বিরোধী দলনেতা সহ ইলেকশন কমিশনের অফিসে গেলেন বিজেপি নেতারা । হাতে ঘাড়ে করে বোঝা নিয়ে গেলেন । ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার নাম জমা দিয়ে এলাম । এরা কারা ? এরা হলো ডবল ট্রিপিল ভোটার । এরা প্রথম ফেজে কোচবিহারে দেয় । দ্বিতীয় ফেজে মালদায় দেয় । তৃতীয় পেজে বর্ধমানে দেয়। চতুর্থ ফেজে খালা মমতাকে দেয় । পঞ্চম ফেজে ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে চোর ভাইপোকে দেয়।’
সম্প্রতি বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক এসআইআর ইস্যুতে “বিজেপি’কে ধরে ধরে জ্বালিয়ে দেওয়া’রা হুমকি দিয়েছিলেন । এদিনের সভাতে তাকেও সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’বর্ধমানের বালিচোর বিধায়ক নিশীথ মালিক ।বিজেপিকে দেখলেই জ্বালিয়ে দেবো বলেছিল । নিশীথ মালিক কবে তোমার বাড়ির সামনে আসতে হবে বলো । সিকিউরিটি ছাড়া আসবো । তুমি যদি জ্বালাতে পারো তাহলে বুঝবো তোমার বাপের নাম ঠিক আছে ।’।

